আসন্ন ইংরেজি নতুন বছরের প্রাক্কালে আতশবাজি ফুটানো ও ফানুস উড়ানো বন্ধের দাবি জানিয়েছে সচেতন নাগরিকবৃন্দ। সেইসঙ্গে তারা আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা ও জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পিপলস ফর এনিমেল ফাউন্ডেশনের (পিএডাব্লিউ) আয়োজনে আতশবাজি বন্ধ করুন-আতশবাজি হাজারও মৃত্যুর কারণ শিরোনামে এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানান তারা।
বিজ্ঞাপন
পিপলস ফর এনিমেল ফাউন্ডেশনের (পিএডাব্লিউ) সদস্য রাকিবুল হক এমিল বলেন, প্রতি বছর আনন্দের নামে যে আতশবাজি ফুটিয়ে উচ্চ শব্দ তৈরি করা হয় এ থেকে আমরা মুক্তি চাই। যারা আতশবাজি ফুটান তারাও কিন্তু নগরীর নাগরিক। তাদেরও পরিবারের কেউ না কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারাও চায়, তাদেরও দাবি। কিন্তু তারা কেয়ারলেস থাকে। যখন আমরা আনন্দ বিনোদন করি তখন যেনো অন্যের কথা মাথায় রাখি, সংবেদনশীল হই। এটাই আমাদের বড় চাওয়া। কারণ বিকট শব্দে আনন্দ প্রকাশ করা বর্বরতা। এই বর্বরতার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আপনি যদি আপনার সন্তানকে আতশবাজি ও ফানুস কিনে না দেন তাহলে তো সে এসব ফুটাতে ও ওড়াতে পারবে না। এতে আপনার টাকা বেঁচে যাবে। এসময় বক্তারা সরকারের কাছে আবেদন জানান, বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে যে কোটি কোটি টাকার আতশবাজি আমদানী করা হয়, সেটা যেনো অবিলম্বে বন্ধ করা হয়। আতশবাজি আমদানীর টাকাটা দিয়ে আমরা অন্য ভালো কাজে ব্যয় করতে পারি।
আরও পড়ুন
তারা আরও বলেন, নতুন বছরে অবশ্যই আনন্দ করব। কিন্তু আমাকে মনে রাখতে হবে আমারা আনন্দের জন্য যেনো অন্যের ক্ষতি না হয়, আমার আনন্দ যেনো অন্যের মৃত্যুর কারণ না হয়। ফানুস ও আতশবাজির কারণে রাজধানী ঢাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সরকারের কিছুই করার থাকবে না। আতশবাজিতে শুধু বড় মানুষ নয়, শিশু ও বৃদ্ধরা ছাড়াও প্রাণী এবং পশুপাখিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আতশবাজিতে শব্দ দূষণ হচ্ছে। এতে অনেকে হার্ট এ্যাটাক হচ্ছে, যারা অসুস্থ তারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। প্রতি বছর আতশবাজির সময় প্রকট শব্দে আতঙ্কে পাখি ছোটাছুটি করতে গিয়ে বিভিন্ন ভবন ও গাছের মধ্যে লেগে আঘাত পেয়ে মারা যায়। অনেক পাখি আহত হয়ে পড়ে থাকে, পরে মারা যায়। অনেক কুকুর ও বেড়াল ভয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারা যাচ্ছে। এসব দেখলে বোঝাই যায়, এখানে কিন্তু কারও লাভ হচ্ছে না, উল্টো ক্ষতি হচ্ছে। খনিকের এই আনন্দে অনেকের ক্ষতি হচ্ছে। এজন্য আমরা চাই আতশবাজির নামে যে শব্দদূষণ হচ্ছে, অন্যের ক্ষতি হচ্ছে তা বন্ধ হোক। সকলে আনন্দ করবে তবে অন্যের ক্ষতি করে নয়।
বিজ্ঞাপন
আতশবাজি ফুটানো ও ফানুস ওড়ানো বন্ধে সামাজিকভাবে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগটা আরও শক্তভাবে করা উচিত। যারা এসব নিয়ম মানছে না তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। শুধু আইন করলেই হবে না, সেটা সঠিক ও যথাযথ প্রয়োগও করতে হবে। আইনের প্রয়োগটা যতো দ্রুত হবে এবং বাড়বে ততোই এই বিষয়টি কমে আসবে।
আরও পড়ুন
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা জানান, নতুন বছর উপলক্ষ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ফানুস ও আতশবাজির কারণে আমরা দেখেছি গত বছর ২০০টির বেশি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এ বছরও যদি এমন করা হয় তবে আগুনের ঝুঁকি বাড়বে। এতে শুধু আগুন লাগবে না, সম্পদের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি মানুষও মারা যেতে পারে। আতশবাজির প্রকট শব্দের কারণে হার্ট এ্যাটাকের ঘটনা ঘটে ও হৃদরোগীর ঝুঁকি বাড়ে। গত বছর আমরা দেখেছি উমায়ের নামের এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ঢাকায় অনেক হাসপাতাল রয়েছে। আতশবাজির উচ্চ শব্দ রোগী, বৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষতি করে। আতশবাজির কারণে কিন্তু শব্দ দূষণের পাশাপাশি পরিবেশেরও দূষণ বেড়ে যায়।
মানববন্ধনে অংশ নেয় পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (পি' ফাউন্ডেশন), সেইভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশ, ওয়াইলড ওয়াচ, স্টেলা ফাউন্ডেশন, সেইভ ফিউচার বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ ও সচেতন নাগরিকরা।
এসময় বক্তব্য রাখেন পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (পি' ফাউন্ডেশন) চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল, সেইভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ, ওয়াইলড ওয়াচের সদস্য সুমন মজুমদার, স্টেলা ফাউন্ডেশনের নোনা আহমেদ, সেইভ ফিউচার বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক নয়ন সরকারসহ আরও অনেকে।
এমআইকে/এমএইচএম