গতবারের নির্বাচন আগের রাতে হয়েছে বলে গুঞ্জন থাকলেও এবারের নির্বাচনে এমন কিছু হবে না বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ৯৯ ভাগ নয়, আগের রাতে নির্বাচন হবে না এ ব্যাপারে তিনি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়েছেন। বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার যাবে জানিয়ে সিইসি বলেছেন, আগের রাতে নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে এলজিইডি মিলনায়তনে জেলার ১৬টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
আগের রাতে ভোট হবে না নিশ্চয়তা দিয়ে সিইসি বলেন, ‘আগের রাতে ভোটের যেসব কথাবার্তা হয়েছে, আমরা ৯৯ নয়, শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি, সেটি কোনো অবস্থাতেই হবে না। এজন্য অনেক কেন্দ্রে ব্যালট পেপার সকালে যাবে। এখন ব্যালট পেপার সকালে না গিয়ে ১০ দিন আগে অথবা ১০ মাস আগেও যদি যায় তাহলেও প্রার্থীরা তাদের পোলিং এজেন্ট দিয়ে সকালে ভোট কেন্দ্রে স্বচ্ছ বাক্সগুলো খালি কি না সেটি দেখে তারপর বন্ধ করবেন। সেক্ষেত্রে অবৈধভাবে কোনো ব্যালট বাক্স ঢোকার সুযোগ নেই। তারপরও আমরা বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জনের জন্য বলেছি, ব্যালট পেপার সকালে পাঠাব। ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টরা অবশ্যই দাঁড়িয়ে থেকে দেখে নেবেন ব্যালট বাক্সগুলো খালি আছে কি না। তারা ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ গণনা ও ফলাফল পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন।’
এখন পর্যন্ত ভোটের পরিস্থিতিতে নিজের সন্তোষের কথা জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনের সংস্কৃতিতে অনেকে কালো টাকার বিনিময়ে পেশাদার কিছু সন্ত্রাসী ব্যবহার করে। তারা যাতে ভোটকে প্রভাবিত না করতে পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তাদের বক্তব্য শুনেছি। আমরাও যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছি। তারা বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের কথা বলেছেন। পোস্টার ছেঁড়া, ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার কথা বলেছেন। সার্বিকভাবে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা জানিয়েছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের আচরণে তারা সন্তুষ্ট।’
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমি ছয়টি স্টেশনে ঘুরে শুনেছি, একটি কথা কয়েকজনে বলেছেন ‘ভোট দিয়ে কী লাভ, ভোট তো এক জায়গায় চলে যাবে’, আবার কেউ কেউ নাকি মুখে মুখেও বলেছেন, ‘আপনারা যে যেখানে ভোট দেন, ভোট জায়গামতো চলে আসবে’। আমরা বিষয়টি শুনেছি। এর মধ্যে আমরা জেনে গেছি, এটি হয়তো ইচ্ছাকৃত অপপ্রচার অথবা ভ্রান্ত ধারণা। ভোট যেখানেই দেন সেখান থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার আশঙ্কা নেই, সেটি আমরা শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি।’
বিজ্ঞাপন
ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পোলিং এজেন্টরা ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ গণনা ও ফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। সবকিছু সঠিকভাবে হয়েছে কি-না তা জানবেন। যদি গণনা যথাযথভাবে শেষ হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়ে গেল।’
ভোটের স্বচ্ছতার কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘আমরা একটি অ্যাপস তৈরি করেছি। যেখানে দুই ঘণ্টা পরপর প্রতিটি সংসদীয় আসনে কত শতাংশ ভোট পড়ল তা সেখানে ইনপুট দেওয়া হবে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে দশটার সময় দেখা গেল ১০ শতাংশ ভোট পড়ল। কিন্তু ১২টার দিকে হঠাৎ ৮০ শতাংশ হয়ে গেল। এটি বিশ্বাসযোগ্য হবে না। এ জন্য এ অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে।’
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, রেঞ্জ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নুরে আলম মিনা ও জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রমুখ।
জেবি