বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

ঈদযাত্রায় প্রস্তুত হচ্ছে শখের বাহন, ওয়ার্কশপে ভিড়

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২২, ০৮:২৯ এএম

শেয়ার করুন:

ঈদযাত্রায় প্রস্তুত হচ্ছে শখের বাহন, ওয়ার্কশপে ভিড়
ছবি: ঢাকা মেইল

রশিদ অটো পার্টস একটি মোটরসাইকেলের সার্ভিসিং সেন্টার। এখানে বাইকের বিভিন্ন যন্ত্রাংশও বিক্রি হয়। রাজধানীর মগবাজার রেলগেইটে অবস্থিত এই সেন্টারে রাতদিন মোটরসাইকেলের লম্বা সারি লেগে থাকছে। সার্ভিস করতে আসা বাইকারদের ভিড়ে অপেক্ষাও বাড়ছে। ব্যস্ত সার্ভিসিং দোকানের ১১ কর্মচারী। কেউ চাকা খুলছেন, কেউ গাড়ি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করছেন, কেউ ব্রেক ইঞ্জিন ঠিক করছেন। ব্যস্ততার ভিড়ে দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের।

রাস্তার দুই পাশে আরও ১০টির মতো সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। সবগুলোতেই বেড়েছে মোটরবাইক নিয়ে ভিড় করছে বাইকাররা। মোটরবাইকের মতো বিভিন্ন গাড়ি সারানো ওয়ার্কশপগুলোতেও ভিড় রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


ঈদের সময় গণপরিবহনে চাপ বাড়ে। ফলে যাদের ব্যক্তিগত পরিবহন আছে তা নিয়ে যেতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। প্রাইভেটকারের পাশাপাশি সম্প্রতি বছরগুলোতে অনেক দূরের পথও মোটরবাইকে পাড়ি দিচ্ছেন বাইকাররা। সড়কের ভোগান্তি, টিকিটের ঝামেলা এড়াতে ঝুঁকি সত্ত্বেও দুই চাকার বাহনটি অনেকের পছন্দ। এছাড়া বাড়িতে গেলে ছুটিতে এদিক-সেদিক যাতায়াতে মোটরবাইক খু্বই উপযোগী, সে কারণেও অনেকে সঙ্গী হিসেবে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে নিয়ে যান।

ঈদকে সামনে রেখে ভিড় বেড়েছে মোটর সাইকেল সার্ভিস সেন্টারগুলোতে। ঈদযাত্রার আগে মেকানিক দেখিয়ে ত্রুটি-বিচ্যুতি সারাচ্ছেন। কেউ কেউ ফোন করে অগ্রিম সিরিয়াল নিয়ে সার্ভিসিং করাতে আসছেন। কেউ হঠাৎ এসে দীর্ঘ সিরিয়ালে অপেক্ষা করছেন।

bike

রশিদ অটো পার্টসের মালিক রশিদ ভূইয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, সারা বছর কাজের ধরন এক রকম, ঈদে আরেক রকম। বছরের অন্যান্য সময় জরুরি না হলে কেউ সার্ভিস করায় না। তবে ঈদে অনেকেই বাইক নিয়ে বাড়ি যায়। দূরের যাত্রা, তাই চেক করার জন্য হলেও সবাই আসে, এতে ভিড়ও বাড়ে। আমার এখানে ইঞ্জিন খোলা, ঠিক করার কাজ বেশি হয়।


বিজ্ঞাপন


প্রতিদিনের আয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেকানিক ও সহকারী মিলে ১১ জন কাজ করে। তাদের বেতন, দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ অনেক। আল্লাহ রহমতে সব খরচ বাদে চার-পাঁচ হাজার টাকা থাকে প্রতিদিন ঈদের মৌসুমে।

সার্ভিস সেন্টারের মেকানিক শরিফ বলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০টা মোটরসাইকেলের নানাধরনের কাজ করা হয়। সব কাজ সমান না, কারও ব্রেক দেখে দিলেই হয়। কেউ আসেন মবিল পরিবর্তন করতে। কারও ইঞ্জিনের সমস্যা অথবা পুরো গাড়ি সার্ভিসিং করে কেউ।

শোয়েব নামের মেকানিক বলেন, এবার রোজার শুরু থেকেই কম বেশি ভিড় ছিল, যা ১৫ রোজার পর কয়েকগুণ বেড়েছে। কোনো গাড়ি ১০ মিনিট, কোনোটি তিন ঘণ্টাও লাগে। কাজের ওপর নির্ভর করে সময়। 

পাশে ট্রু হুইলারস সার্ভিস পয়েন্টের মেকানিক বলেন, ঈদেই কেনাকাটার মতো যাদের গাড়ি আছে, তারা চেক করেন, নতুন গাড়ি হলেও দেখে নেন সব ঠিক আছে কি না। 

নাসির ইঞ্জিনিয়ার্স ওয়াকশপ, আহমেদ এন্টারপ্রাইজসহ আশপাশে সার্ভিস পয়েন্টগুলোতে বাইক চালকদের দীর্ঘ অপেক্ষা দেখা যায়।

আগারগাঁও থেকে মগবাজারের রেলগেইটের আজিজ অটো পার্টস অ্যান্ড সার্ভিস সেন্টারে বাইক মেরামত করতে আসেন জুয়েল শিকদার। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি মাদারীপুর। ফেরিতে গাড়ি পার করবো। বাসে গেলে আমার কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা লাগবে, আর বাইক নিলে আরও অনেক আগেই চইলা যামু।’

bike

এত দূরে আসার কারণ হিসেবে বলেন, ‘আমার বাসা আগে এদিকেই ছিল। বাসা পরিবর্তন করলেও পরিচিত মেকানিকের কাছে দেখানোর জন্যি প্রতিবার এখানে আসি।’

বাজাজ সেন্টারের নিজের বাইক সারানো দেখছিলেন আবু তালিব। বেসরকারি এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তালিব বলেন, ‘আমার গাড়ি প্রায় নতুন। তবে লম্বা যাত্রায় যাবো ব্রেক, ক্লাস ঠিক আছে কি না টুকিটাকি কাজ করাতে এসেছি।’ 

দু’একের মধ্যেই শেরপুর গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করবেন তিনি। এত দূরে দুই চাকার গাড়ির ঝুঁকি নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, অনেকেই আড়াইশ তিনশ কিলোমিটার দূরেও যাচ্ছে। বগুড়া, রংপুর, বরিশাল কত জায়গায় যাচ্ছে। ঝুঁকি আছে, তবে দেখেশুনে গেলে তাড়াহুড়ো না করলে ঝুঁকি কম। 

বাইকের সু্বিধার কথা উল্লেখ করে বলেন, বাইকে গেলে বাসের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। যাওয়ার পর এক সপ্তাহ থাকবো যেখানেই যাবো, লোকাল গাড়ি খোঁজা লাগবে না।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলের উল্টো পাশে কমপক্ষে ১০টি বাইক সার্ভিস সেন্টার। সবাই ব্যস্ত কাজে। কোনো দোকানেই ফাঁকা দেখা যায়নি। অন্য সময় কেউ বাইক নিয়ে গেলে ৪-৫ দোকানের কয়েকজন কর্মচারী এগিয়ে আসে কী কাজ করাবে জানার জন্য। কিন্তু এখন কর্মচারীদের সে তাড়া নেই। বরং উল্টো সেবা নিতে আসা বাইকারদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে কখন হাতের কাজ শেষ হবে।

সালাউদ্দিন সার্ভিস সেন্টারের মেকানিক রাজু জানান, বছরে দুই ঈদের আগের ১০টা খুবই ব্যস্ত সময় যায়। তবে এবার প্রথম রমজান থেকেই কমবেশি ভিড় ছিল।

মোহাম্মদপুরে বাইকে সার্ভিস করান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গাড়িতে নতুন লাইট লাগালাম, সব ঠিক আছে কি না দেখে নিলাম। সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে তিন বাইকে ছয় বন্ধু যাবে বাড়ি। এরমধ্যে কারও পরিবারও থাকে ঢাকায়। 

bike

তরিকুল বলেন, ‘আমার বন্ধুর বাবা মা বোন গাড়িতে যাবে। আমরা বাইকে যাই। গাড়িতে দীর্ঘ অপেক্ষা ভালো লাগে না, বাইক এদিক সেদিক হয়ে অল্প রাস্তা পেলেই বের হয়ে যেতে পারে। যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নেওয়া যায়।’

বাংলামোটর-মগবাজার সড়কে মোড়ে অসংখ্য সার্ভিসের দোকান। ব্যবসায়ীদের মতে, দুই পাশে দুশোর কাছাকাছি দোকান রয়েছে। একপাশে প্রাইভেট গাড়ি একপাশে বাইক সার্ভিস করা হয়।

বাংলামটরের জনতা সার্ভিসিংয়ের রিয়াজুল বলেন, আমরা সার্ভিস করি, হেলমেট বিক্রি করি। ঈদের আগ পর্যন্ত চাপ এরপরে ৮/১০ দিনতো ছুটিই থাকে।

কারওয়ানবাজার রেলগেইটে গাড়ির ওয়ার্কশপের ম্যানেজার জুলহাস বলেন, রোজার শুরু হলে গাড়ি মেরামত শুরু হয়। ১০ রোজার পর প্রচুর চাপ থাকে। কোনো গাড়ি রঙ করে, পলিস করে, আবার নতুন গাড়ি বাম্পার লাগায়।

পাশে আরেক সার্ভিস সেন্টারের মালিক মিজান বলেন, দুই কারণে চাপ বাড়ে। একটি হলো সবাই নিজের গাড়ি থাকলে নিয়ে যায় আর যাওয়ার আগে কোনো কাজ থাকলে করে নেন। আরেকটি রেন্ট এ কারের মালিকরা গাড়ির ত্রুটি থাকলে বা না থাকলেও চেক করে প্রস্তুত করেন। দুই বছর পর সিজনটা ভালো উল্লেখ করেন তিনি।

রাজধানীর আরও কয়েক স্থানে বিভিন্ন সার্ভিস পয়েন্টগুলোতে দেখা গেছে এই ব্যস্ততা। ঘরের পথে ছুটতে প্রস্তত করা হচ্ছে নিজের শখের বাহন। আর শখের বাহন সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে পেরে বাড়তি আয়ে খুশি বাহন সাজানোর বিউটিশিয়ান মেকানিকরা।

ডব্লিউএইচ/জেবি/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর