মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আড়ালে জুয়ার একাউন্ট!

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আড়ালে জুয়ার একাউন্ট!

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আড়ালে অনলাইন জুয়ার অ্যাকাউন্ট খুলে দিচ্ছে বেশ কিছু চক্র। টাকা আপলোডের পর সেই টাকা সরিয়ে নিতে সহায়তা করছেন তারা। সোমবার এমন একটি চক্রের চার সদস্য র‌্যাবের হাতে ধরা পড়লে তাদের থেকে এমন তথ্য জানতে পারে এলিট ফোর্সটি। চক্রটি চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে অনলাইন জুয়ার সাইট পরিচালনা করে প্রতিবেশী দেশে অর্ধ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। চক্রটির মূল হোতা নিশাত মুন্নাসহ চারজন র‌্যাবের হাতে ধরা পড়লে তারা এলিট ফোর্সটিকে এসব তথ্য দেয়।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর মালিবাগ এবং গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য দেন। তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে দুপুরে র‌্যাবের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে কথা বলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।


বিজ্ঞাপন


র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সোমবার গাজীপুর ও রাজধানী থেকে যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা অনলাইন জুয়ার জন্য অ্যাকাউন্ট খুলে দিত। এর বিনিময়ে প্রতিটি অ্যাকাউন্ট থেকে তারা ৩০০ টাকা করে পেতেন। এই চক্রটির মূল হোতা নিশাত মুন্না। মুন্না একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করছেন। পাশাপাশি তিনি একজন ইউটিউবার। তিনি অনলাইন জুয়ায় তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন ভিডিও বানাতেন। তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় এক হাজার ভিডিও পাওয়া গেছে। প্রতিটি ভিডিও বাবদ তিনি ১০ হাজার টাকা করে পেতেন। তবে গত দেড় বছরে তারা কতজনের একাউন্ট খুলে দিয়েছে সে তথ্য দিতে পারেনি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে ১৮টি সিম উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রটির সদস্যরা নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যক্তির সিম দিয়ে মানুষকে জুয়া খেলার অ্যাকাউন্ট খুলে দিতেন। ব্যবসা প্রথম শুরু করেছিল তাদের একজনের পাশের দোকানের এক মার্চেন্ডাইজারের সিম কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে। সেই ব্যক্তির সিম দিয়ে প্রথম তারা অনলাইন জুয়ার কার্যক্রম শুরু করে।

কমান্ডার আল মঈন জানান, চক্রটি গত তিন মাসে অর্ধ কোটিরও বেশি টাকা পাশের দেশ থেকে সাইড পরিচালনাকারি দুই ব্যক্তির কাছে পাচার করেছে। এই দুই ব্যক্তি নিশাত মুন্নার কাছে নিজেই ফোন দিয়ে তাদের সাইটের প্রচার-প্রচারণা চালানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। সেই প্রলোভনে পড়ে নিশাত মুন্না বিভিন্ন ভিডিও বানাতেন। তবে তিনি ছাড়াও তার চক্রে সাত থেকে আটজন রয়েছে। যারা ঢাকা, গাজীপুর ও নোয়াখালী থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে অ্যাকাউন্ট খুলে দিতেন। তাদের কাছ থেকে পার্শ্ববর্তী দেশের কয়েকটি মোবাইল নাম্বার পাওয়া গেছে। তারা অনলাইন জুয়া থেকে যে টাকা আসতো তার লভ্যাংশ নিজেদের কাছে রেখে পাশের দেশের দুই ব্যক্তির কাছে হুন্ডির মাধ্যমে সেই টাকা পাঠাত।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের অনলাইন জুয়ায় প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে বিভিন্ন জেলা উপজেলা পর্যায়ে যারা মোবাইল ব্যাংকিং করছে তাদের অনেকে এর আড়ালে অনলাইন জুয়ার অ্যাকাউন্ট খুলে দিচ্ছে। অনলাইন জুয়ার টাকা লোড করা ও টাকা তোলার কাজগুলো পরিচালনা করছে তারা। আর এই সংখ্যা কত তা শনাক্ত করা খুব কঠিন। সংখ্যাটা প্রতিটি এলাকায় আছে। কেউ না কেউ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আড়ালে অনলাইন জুয়ার অ্যাকাউন্ট খুলে দিচ্ছে, টাকা আপলোড করছে ও টাকা সরিয়ে নিতে সহায়তা করছেন।

আরও পড়ুন

অনলাইন জুয়ার টার্গেট তরুণরা, তিন মাসে পাচার অর্ধ কোটি

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আসলে চক্রটি এখন পর্যন্ত অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে কত টাকা বিশ্বে পাচার করেছে তা বলা খুব কঠিন। এই অনলাইন জুয়া বন্ধের জন্য শুধু বড় বড় ব্যক্তির পেছনে দৌড়ালে হবে না আমরা মনে করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতিটি এলাকাভিত্তিক যারা এই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নামে অনলাইন জুয়াকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, অ্যাকাউন্ট করে দিচ্ছে, উঠতি বয়সের তরুণদের নষ্ট করছে, এজন্য এলাকাভিত্তিক অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে র‌্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নকে অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এলাকাভিত্তিক অভিযান পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলাম, যারা অনলাইন জুয়ার জন্য অ্যাকাউন্ট খুলে দিচ্ছে টাকা লোড করে দিচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য। এমন অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

অনেক ইউটিউবার ও ফেসবুকে পেজ পরিচালনাকারী ব্যক্তি এসব অনলাইন জুয়ায় উদ্বুদ্ধ করছে জানিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, যারা ইউটিউবার এবং ফেসবুক পেজ পরিচালনা করছে এবং যাদের অনেক পরিচিতি আছে তারাও কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে এসব জুয়ার প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। এসব সাইট পরিচালনা করে ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মামলা করলে তাদের আইনের আওতায় আনা সহজ হবে।

এমআইকে/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর