মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

থাইল্যান্ডে যা দেখলাম-৫

যানজটেও সারি ভাঙে না কেউ

মোস্তফা ইমরুল কায়েস, থাইল্যান্ড থেকে ফিরে
প্রকাশিত: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৩০ এএম

শেয়ার করুন:

যানজটেও সারি ভাঙে না কেউ

সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে নেমেই আমরা ওঠে পড়লাম ট্যুরিস্ট বাসে। সেই বাস আগে থেকে প্রস্তুত ছিল। ফলে তেমন কোনো ভোগান্তি হলো না। তবে আমাদের দেশের মতো লক্কর-ঝক্বর নয়, ট্যুরিস্ট বাস বলতে যা বোঝায় তার সবটাই আছে এই বাসে। বাস দেরি করল না। রওনা করল সমুদ্রবেষ্টিত শহর পাতায়ার পথে। যাকে অনেকে এশিয়ার ‘হানিমুন শহর’ বলে থাকেন।

গাইড টুমি জানালেন, সুবর্ণভূমি থেকে পাতায়ার পথ ১৫৮ কিলোমিটার। সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। কমও লাগতে পারে। এটি নির্ভর করবে সড়কের গাড়ির ওপর। আমরাও ভাবছিলাম যাক, সময়টা অল্প লাগবে। হয়ত চালক দ্রুত টেনে যাবে। হলোও তাই। পথে তেমন কোনো ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়নি।


বিজ্ঞাপন


এয়ারপোর্ট থেকে আমাদের বহনকারী দুটি বাস ফ্লাইওভার হয়ে বেরিয়ে পড়ল। আঁকাবাঁকা সাপের মতো সেইসব ফ্লাইওভার। নিচে তাকালে মনে হচ্ছিল আবারও প্লেনে উঠলাম। নতুন পথ। নতুন অভিজ্ঞতা। বসে বসে ভাবছিলাম, আবার যানজটে পড়তে হয় কি না। তবে সেটার মুখোমুখি হতে হয়নি।

শুরুতে বাস ছুটে চলল হাইওয়ে ধরে। তবে খুব বেশি প্রশস্ত সড়ক নয়। দুটি বাস অনায়াসে যেতে আসতে পারে। আর একটু পরপর সড়কে লিখে দেওয়া হয়েছে- কোন লেনের গতি কত তোলা যাবে সেই নির্দেশক চিহ্ন। বাসের জানালায় বসে দুই পাশে যখন তাকাচ্ছিলাম শুধু সবুজ মাঠ। তবে বাংলাদেশের মতো ধানের জমি নয়। সব ফার্ম। মূলত উৎপাদিত পণ্য সেখান থেকে মার্কেটে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। পাশাপাশি হোল সেলের ব্যবস্থাও রয়েছে এসব ফার্মে। থাইল্যান্ডের বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব  ফার্মে কেউ মাছ চাষ, কেউ নারিকেল, কেউ পাম আবার কেউ কেউ নানা ফলমূলও আবাদ করছে।

Imrul3

চলার পথে একটি বিষয় খেয়াল করলাম- চালক কখনো গতি ৮০ আবার কখনো ১০০ তুলছে। তবে বেশির ভাগ সময়ই ১০০তে থাকছে। এর মাঝে লেন কখনো ভাঙছে না।


বিজ্ঞাপন


অর্ধেক পথে আসতে বেশ কিছু জায়গায় গাড়ি হালকা সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। কারণ সেই পথে আরও কিছু সড়ক এসে যুক্ত হওয়ায় অন্য যানবাহনকে যেতে সময় দিতে হয়েছে। তবে কোনো চালককে গাড়ির লেন ভাঙা বা একটি গাড়িকে ওভারট্র্যাকিং করে প্রতিযোগিতা চোখে পড়েনি।

এসব ভাবতে ভাবতে আমরা পাতায়া শহরের বিচের কাছের সড়কে পৌঁছে গেলাম। কিছুক্ষণ পরই হোটেলে উঠব। কিন্তু সেখানে গিয়ে কিছুটা গাড়ির জটে পড়তে হলো। বাস থেকে লক্ষ্য করলাম, আমাদের বহনকারী বাসের দুই বাসে ছোট ছোট যানবাহন। আছে মোটরসাইকেল ও টুকটুকের (লেগুনার মতো) সারি। তবে কেউ কাউকে মাড়িয়ে সামনে যাচ্ছে না। একইভাবে মোটরসাইকেল চালকগুলোও।

আমাদের সঙ্গে থাকা এক সহকর্মী বললেন, থাইল্যান্ডের সড়কে কেউ লেন ভাঙে না। তারা লেন ভেঙে যাওয়াকে অপরাধ মনে করে। তবে কেউ একান্তই লেন ভাঙতে চাইলে তাকে আগে থেকে পেছনের ডানে বামের পাতির সিগন্যাল দিয়ে কাজটি করতে হয়। আর কেউ এসবের তোয়াক্কা না করে লেন ভাঙতে চাইলে বড় দুর্ঘটনাও ঘটে। এসবের কারণে এ দেশে কেউ লেন ভাঙে না।

এটা শুরুর দিনের অভিজ্ঞতা। আরও অভিজ্ঞতা হলো পাতায়ার ক্রোকোডাইল (কুমির) থেকে ব্যাংককে ফেরার পথে। প্রায় ১৪৫ কিলোমিটারের পথে চালক নির্দিষ্ট গতিতেই বাস চালাচ্ছিলেন। পাশে বসে দেখছিলাম, তিনি কী কী করছেন।

মাঝপথে আমাদের বহনকারী বাসটির পেছনে একটি লরির ট্রাক আসছিল। তা লুকিং গ্লাসে দেখতে পেলেন চালক। ওই সময় পেছনে থাকা গাড়িটিকে কোনো হর্ন বাজাতে শোনা গেল না। তবে আয়নায় গাড়িটি দেখামাত্র দ্রুত আমাদের বাসটি সিগন্যাল দিয়ে ফাঁকা লেনে সরিয়ে নিলেন। পেছনে থাকা লরি ট্রাকটি দ্রুত চলে গেল। কিন্তু এ নিয়ে চালকের কোনো আক্ষেপ দেখলাম না।

Imrul2

সেই বাস যখন ব্যাংকক শহরে ঢুকছিল মূল শহরে প্রবেশ করতেই আমরা যানজটে পড়ে গেলাম। সামনে পেছনে প্রাইভেটকার, সিএনজি, বাস, গাড়ি আর গাড়ি। মিনিট তিনিকের মতো আমরা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। সবুজ বাতি জ্বলার সাথে সাথে বাস শুরু করল যাত্রা। এবার সারি সারি ছুটে চলার দৃশ্য চোখে পড়ল।

মোটরসাইকেলগুলো এক সারি, প্রাইভেটকার একটিতে আরেকটিতে বাস ও বড় বাহনগুলো। অথচ কেউ লেন ভাঙল না। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম হোটেল রয়েল বেনজার আশপাশে। হোটেল ঢোকার মুখে কয়েকটি ছোট গাড়ির জট দেখে চালক থমকে গেলেন। গাড়িগুলো একে একে সাইট নিয়ে চলে গেল। তারপর তিনি গাড়ি সামনে নিলেন। কিন্তু একটি বারও হর্ন দিলেন না। লেন ভেঙে সামনে নিলেন না বাসটিকে।

এমআইকে/জেবি 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর