বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

কেন কমছে হাতিরঝিলের হাঁস

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪১ এএম

শেয়ার করুন:

কেন কমছে হাতিরঝিলের হাঁস

হাতিরঝিলে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা আয়সা আফরিন মুগ্ধ হয়ে দেখছিলেন লেকে ভাসা হাঁসের পাল। তার সাথে থাকা তিন বছরের ছেলে পিয়াসের চোখমুখে বাঁধভাঙা উল্লাস। কারণ ক্রমশ হাঁসের পাল লেক পাড়ের দিকে এগিয়ে আসছিল। হাঁসের জলকেলি এ দৃশ্য তখন আরও অনেকেই দেখছিলেন। কেউবা করছিলেন ক্যামেরাবন্দী। আফরিন এই প্রতিবেদককে বলেন, পাঁচ-ছয় মাস আগেও লেকপাড়ে প্রচুর হাঁস দেখা যেত। নানা রঙের রাজহাঁস, পাতিহাঁস। এখন সে তুলনায় অর্ধেকেও নাই। বাচ্চাকে হাঁস দেখাতে দীর্ঘ সময় খোঁজার পর এখানে পেয়েছি। 

সব বয়সীদের কাছে ভ্রমণের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হাতিরঝিল। রাজধানীর অন্যতম এই বিনোদন কেন্দ্রকে  আকর্ষণীয় করে তুলতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও ভেস্তে যাচ্ছে বারংবার। এরমধ্যে লেকের জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে হাতিরঝিলে ছাড়া হয় হাঁস। ঘুরতে আসা নগরবাসীদের যে হাঁস নজরকাড়ে তা ক্রমশই কমেছে।


বিজ্ঞাপন


সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি হাতিরঝিলের ঝিলপাড় এলাকায় ৩০০টি হাঁস অবমুক্ত করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সেই সঙ্গে এসব হাঁসের যত্নে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাড়তি কর্মীও। রাজউক জানায়, হাতিরঝিলে মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁস পালনের এ উদ্যোগ। সবমিলিয়ে আরও ৫ হাজার হাঁস অবমুক্তের একটি পরিকল্পনা নিয়েছে রাজউক। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ৩০০ হাঁস অবমুক্ত করা হয়।

has

আয়সা আফরিনই শুধু নয় ঝিলের পানিতে হাঁসের ছুটোছুটি দেখতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, ঝিলের পাড়ে হাঁসের পালের ডুব-সাঁতার কমেছে। সাত মাসের মাথায় হাঁস কমে যাওয়া তাই প্রমাণ করে। ঢাকা মেইলের অনুসন্ধানও মিলিছে একই তথ্য। বর্তমানে ঝিলে ছুটে চলা হাঁস কমে হয়েছে অর্ধেক।

কেন কমছে এই হাঁস


বিজ্ঞাপন


হাঁস কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করে লালনপালনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানান, অবমুক্ত করার পর কিছু হাঁস মারা যায়। টিকে থাকা হাঁসের সংখ্যা খুব একটা কমেনি। যদিও এরইমধ্যে হাঁস হাওয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনায় নতুন করে পাঁচ হাজার হাঁস অবমুক্ত করা নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে সংশয়। 

সরেজমিনে হাতিরঝিলের হাঁসের খামারে গিয়ে প্রথমেই হোঁচট খেতে হয় প্রতিবেদককে। লোহার গেটটি বন্ধ থাকলেও ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই বলে জানায় দায়িত্বপ্রাপ্তরা। আলাপচারিতার একর্পায়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মনিরুল জানান, বর্তমানে ৫৯টি রাজহাঁস ও ৭০টির মতো পাতিহাঁস আছে। কিছু বেশিও থাকতে পারে। হাঁসগুলো প্রতিদিন সকাল ৮টার বের হয়ে যায়। বিকেল ঘরে ঢোকে। তিন বেলা হাঁসের খাবার দেওয়া হয়।

has2

দায়িত্বপ্রাপ্ত হাদিস মিয়া জানান, হাঁসের জন্য তিনটি ঘর রয়েছে। শুরুর দিকে তিনটি ঘরেই হাঁস রাখা হতো। বর্তমানে দুটি ঘরে হাঁস রাখা হয়। বাকি ঘরটিতে রাখা হয় হাঁসের খাবার। কারণ হিসেবে জানান, বেশ কিছু হাঁস এরইমধ্যে মারা গেছে। আশপাশের মানুষ উৎপেতে থাকে চুরি করার জন্য। দুই ঘরে রাখলে দেখে রাখতে সুবিধা হয়।

হাঁসের সংখ্যা নির্ধারণ কিভাবে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন হাঁস গুনে ঘরে ঢোকানো হয় না। তা সম্ভবও না। যে কারণে প্রতিদিন গনাও হয়না। দেখা যায় সন্ধ্যায় কিছু হাঁস আসে, কিছু আরও পরে আসে। কোন কোনটি আবার সারারাত পানিতে ভাসে। আমরা সকালে ছেড়ে দেওয়ার সময় গুনি।

has1

হাঁসের দায়িত্বে থাকা রাজউক প্রতিনিধি শাহীন বলেন, হাঁসের সংখ্যা নিয়ে কথা বলায় নিষেধ আছে। আপনার যদি কিছু জানার থাকে তাহলে রাজউক প্রধানকে একটা চিঠি দেন। স্যারেরা আমাকে অনুমতি দিলে তখন আমি এই বিষয়ে কথা বলতে পারব।

যদিও বর্তমানে খামারে ৫৯টি রাজহাঁস ও ৭০টির মতো পাতিহাঁস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো কথাই বলতে পারব না। এই হাঁস প্রতিদিন গোনা সম্ভব না। তাই এখন কতটি হাঁস আছে সেটা আমি জানি না।

ডিএইচডি/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর