রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

গৃহকর্মীকে পিটিয়ে হত্যার পর পালিয়ে থাকার চেষ্টা করেন ডলি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

doli

রাজধানীর কলাবাগানে শিশু গৃহকর্মী হেনাকে (১০) হত্যার আগে বিভিন্ন সময় শারীরিক নির্যাতন করেছেন গৃহকর্ত্রী সাথী আকতার পারভীন ডলি। হেনাকে এমন মারধর করা হতো যে, মারধরের চোটে সে বিছানায় পায়খানা করে দিত। পিটিয়ে গৃহকর্মী হেনাকে হত্যার পর পালিয়ে থাকার অনেক চেষ্টা করেছেন ডলি। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

গৃহকর্ত্রী সাথী আকতার পারভীন ডলিকে গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে যশোর থেকে গ্রেফতারের পর শনিবার রাতে ডলিকে ঢাকায় আনা হয়।


বিজ্ঞাপন


রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন রমনা জোনের ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন।

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দা, বটি দিয়ে শিশুটিকে নির্যাতন করতেন ডলি। কখনো লাঠি দিয়ে নির্যাতন করেন। অপরাধ হলো তার বাচ্চার জন্য রাখা খাবার খেয়ে ফেলত। তার বাচ্চার খেলার সাথী হিসেবে একজন আরেকজনকে মারত- এমন ছোটখাটো বিষয়ে তাকে নির্যাতন করতেন ডলি। মারধরেই বাচ্চাটি মারা যায়। এমনকি মারধরে বাচ্চাটি বিছানায় মল ত্যাগ পর্যন্ত করে দিত।

আশরাফ হোসেন বলেন, বাসার সিসি ফুটেজ থেকে আমরা দেখতে পাই, এই শিশুটির গলায় পা দিয়ে গৃহকর্ত্রী হেনা তাকে নির্যাতন করছেন। সাথী ঘটনার পরপর তার বাচ্চা নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। তিনটি মোবাইল ফোন যা সাথী ব্যবহার করতেন সেগুলো রেখে যান। ফলে তার অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন ছিল। কলাবাগান থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থানের ৪০০ সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে। ফলে গতানুগতিক ধারায় আমাদের তদন্ত করতে হয়েছে। সিসি ফুটেজে তাকে বিভিন্ন স্থানে পথচারী হিসেবে ঘুরতে দেখা যায়। কখনো দোকানে আবার বিভিন্ন মানুষের ফোন থেকে তার আত্মীয়-স্বজনকে ফোন করতে দেখা গেছে। তিনি পালিয়ে থাকার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে আমরা সংবাদ পাই তিনি যশোরে আছেন। পরে কলাবাগান থানা পুলিশ সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে।


বিজ্ঞাপন


ডিসি আশরাফ হোসেন বলেন, বাচ্চার ওপর নির্যাতনের কারণ একটাই- তার নিজের বাচ্চার খাবারটা গৃহকর্মী খেয়ে ফেলত। এটাই তার অপরাধ। এর কারণে মেরে ফেলাটা যে যৌক্তিক হয়নি আসামি নিজেই এখন স্বীকার করছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গত ২৬ আগস্ট সকালে রাজধানীর কলাবাগানের একটি বাসার দরজা ভেঙে বিছানায় একটি কাজের মেয়ে লাশ পাওয়া যায়। পরে লাশটি শনাক্ত করে জানা যায়- এটি একটি এতিম শিশু ও গৃহকর্মী মোছা. হেনা। সে সাথী পারভীন ডলির বাসায় কাজ করত। ২০১৯ সাল থেকে ডলি ওই বাসায় থাকেন। ২০২০ সালে হেনাকে কাজের মেয়ে হিসেবে আনেন। তার শরীরে অনেক নতুন ও পুরোনো আঘাতের চিহ্ন, মুখে ফেনা, শরীর ফোলা দেখতে পাওয়া যায়। ঘটনার দিন হেনা তার বাচ্চার খাবার খেয়ে ফেলায় মারধর করেন এবং এতেই হেনা মারা যায়।

আশরাফ জানান, ডলি এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের একজন সার্ভেয়ার হিসেবে কাজ করতেন। ২০০৩ সালে প্রথমে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগ দেন তিনি। পরে ডিপ্লোমা করে ২০১১ সালে সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি পান। ২০১৬ সালে বিএসসি করে নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচিত দেন। তার দ্বিতীয় স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডাক্তার ছিলেন। ২০২০ সালে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়। আর তার প্রথম স্বামী ছিলেন একজন ড্রাইভার। এলজিইডিতে চাকরি করা অবস্থায় তার সঙ্গে বিয়ে হয়। পরে সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি হলে তাকে ডিভোর্স দেন। ১২ বছর তার স্বামী ছিল না। ২০১৯ সালে এসে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বিয়ে হয়। এসময় তাদের দুটি জমজ বাচ্চার জন্ম হয়। একটি বাচ্চা মারা যায়, আরেকটি বাচ্চা জীবিত রয়েছে। সেই বাচ্চাকে লালন-পালন করার জন্যই হেনাকে আনা হয়।

এমআইকে/জেবি



ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর