শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

অতিরিক্ত মদপানে মারা যাওয়া তরুণী সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

খলিলুর রহমান
প্রকাশিত: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

basa
বসুন্ধরার যে বাসায় ভাড়া থাকতেন জান্নাত আরা মীম ও ইমু আক্তার। ছবি: ঢাকা মেইল

অভিজাত এলাকা রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিকের দামি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন তরুণী জান্নাত আক্তার মীম। সঙ্গে থাকতেন তার খালাতো বোন ইমু আক্তার। বিলাসবহুল জীবন-যাপন করা ওই দুই তরুণীর কাছে আত্মীয় পরিচয়ে লোকজনের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। সেই ফ্ল্যাটেই অতিরিক্ত মদপানে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা দুজন। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মীম মারা যান। আর ইমু চিকিৎসাধীন।

মীম (২৪) ও ইমু (২৫) বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি ব্লকের ৯ নম্বর রোডের ৫৭১ নম্বর বাসায় একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে বিভিন্ন আলামত জব্দ করেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


বিজ্ঞাপন


বিকেলে সরেজমিনে বসুন্ধরা আবাসিকের ওই বাসায় গিয়ে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে বিপ্রপার্টির মাধ্যমে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন জান্নাত ও ইমু। তবে তারা কোনো পরিচয়পত্র জমা দেননি। তাদের বাসায় নিয়মিত আত্মীয় পরিচয়ে লোকজন আসা-যাওয়া করত। তবে সেই বাসায় কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। বাসার কেয়ারটেকারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসেন। সাইফুল ইসলাম ওই বাসার ভাড়াটিয়া দাবি করেন। উত্তরা ব্যাংক মগবাজার শাখার ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন বলে জানান। 

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম আসাদুজ্জামান বলেন, ওই তরুণী তার খালাতো বোনের সঙ্গে ভাটারা এলাকায় থাকতেন। খালাতো বোনের একটি রূপচর্চাকেন্দ্র (বিউটি পারলার) আছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই তরুণীর এক বন্ধু সেখানে মদ নিয়ে আসেন। মদপানের পর দুই বোন অসুস্থ হয়ে পড়েন। 

জান্নাত নামের ওই তরুণী সম্পর্কে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, বাসার মালিক এখানে থাকেন না। উনারা মগবাজারে থাকেন। আমি বাসার মালিকের পরিচিত। আমি আমার পরিবার নিয়ে এখানে থাকি। আমি আগে টিকাটুলিতে থাকতাম। গত মাসে আমার পরিবার নিয়ে এখানে এসেছি। বাসার কেয়ারটেকার তেমন কিছু বলতে পারবেন না বলে মালিক আমাকে আপনার সাথে কথা বলতে বলেছেন। তাই আমি এসেছি।

তিনি আরও বলেন, সকালে পুলিশ এসেছিল। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, সব তথ্য পেয়ে যাবেন।


বিজ্ঞাপন


এ সময় ওই বাসার কেয়ারটেকার আয়নাল আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, বিপ্রপার্টির মাধ্যমে মীম বাসা ভাড়া নেন। তবে তার কোনো ডকুমেন্ট আমাদের কাছে নেই।

কেয়ারটেকার বলেন, বাসায় উঠার সময় তিনি (মীম) বলেছেন ইতালি থেকে এসেছেন। যমুনা ফিউচার পার্কে ব্যবসা করেন। এই সুবাদে বাসায় লোকজন আসবেন। এজন্য নিয়মিত বাসায় তরুণ-তরুণী আসা যাওয়া করত।

ভাড়াটিয়া ফরম আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনার কোনো কিছু নেই। তবে একটি ডায়েরিতে উনার নাম-ঠিকানা এবং কবে বাসায় উঠেছেন তা লেখা আছে।

পরে ওই ডায়রি তিনি নিয়ে আসেন। ডায়রিতে দেখা যায়, রিমা আক্তার নামে একজনের নাম লেখা আছে। এছাড়া ভবনের তৃতীয় ফ্লোরে একটি ফ্ল্যাট ২৬ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়ার কথা উল্লেখ করা আছে। একটি মোবাইল নম্বর, এনআইডি নম্বর দেওয়া আছে। ঠিকানা হিসেবে শুধু টাঙ্গাইল লেখা আছে। কোনো গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা কিছুই লেখা নেই ওই ডায়রিতে। জুন মাস থেকে ভাড়া ভাড়া নেওয়ার কথা থাকলেও কোনো সাল উল্লেখ নেই।

মীমের পরিচয় জানতে বিপ্রপার্টি কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিপ্রপার্টির কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও পুলিশ বলছে, মীমের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নাটিয়াপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মো. হান্নান মিয়া।

ভাটারা থানার এসআই মো. শামীম হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা সকালে ওই বাসা পরিদর্শন করেছি। সেখান থেকে মদের বোতলসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করেছি। তবে কোনো আইডি কার্ড আমরা পাইনি। একটি পাসপোর্ট পেয়েছি। সেই পাসপোর্ট মদপান করে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা ওই তরুণীর। সেই সূত্র ধরে নিহত মীমের স্বজনদের খবর পাওয়া গেছে।

শামীম হোসেন বলেন, ছোটকালে মীমের মা মারা গেছেন। পরবর্তী সময়ে তার বাবা একটি বিয়ে করেন। মীম তার নানাবাড়িতে থেকে বড় হয়েছেন। তিনি একটি পারলারে কাজ করতেন। বর্তমানে বেকার ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে তদন্ত শেষে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সকাল থেকে কোনো স্বজন আসেননি। তবে বিকেল তার (মীম) মামা এসেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে তার কাছে আমরা মরদেহ হস্তান্তর করেছি।

এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি না জানতে চাইলে শামীম বলেন, এখনো কোনো মামলা হয়নি। স্বজনরা কোনো মামলা না দিলে একটি অপমৃত্যু মামলা হবে।

এদিকে নিহত মীমের মামাতো বোন তানহা ইসলাম (কাজল) জানান, মীম ও ইমু এরা দুজনে একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতেন। তারা দুজন সম্পর্কে খালাতো বোন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা তারা দুজনে একসাথেই থাকতেন। গতকাল রাতে তারা দুজনেই মদপান করেন। সকালে দিকে তারা দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে চিকিৎসক মীমকে মৃত ঘোষণা করেন। অসুস্থ ইমুকে মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

কেয়ারটেকার বলেন, বাসায় উঠার সময় তিনি (মীম) বলেছেন ইতালি থেকে এসেছেন। যমুনা ফিউচার পার্কে ব্যবসা করেন। এই সুবাদে বাসায় লোকজন আসবেন। এজন্য নিয়মিত বাসায় তরুণ-তরুণী আসা যাওয়া করত। 

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম আসাদুজ্জামান বলেন, ওই তরুণী তার খালাতো বোনের সঙ্গে ভাটারা এলাকায় থাকতেন। খালাতো বোনের একটি রূপচর্চাকেন্দ্র (বিউটি পারলার) আছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই তরুণীর এক বন্ধু সেখানে মদ নিয়ে আসেন। মদপানের পর দুই বোন অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মদপানের পর অসুস্থ ওই তরুণী বাসায় ছিলেন। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আজ সকালে তিনি মারা যান। তার খালাতো বোনের শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক ভালো।

তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় মদ নিয়ে আসা ওই বন্ধু জড়িত থাকতে পারে বলে পুলিশ সন্দেহ করছে। ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বন্ধুর আনা মদপান করায় তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। ওই বন্ধুকে আটক করতে অভিযান চলছে।

কেআর/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর