দীর্ঘ নয় বছর পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ছাত্রলীগের ‘ছাত্র সমাবেশ’। সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসেন লাখো শিক্ষার্থী। বাসে করে ঢাকার সমাবেশে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা ইউনিটগুলো থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের আনা বাসগুলো পার্কিং করা হয় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। এর মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক বাস রাখা হয় ঢাকা কলেজ মাঠে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে মাঠে রাখা অনেক বাসের চাকা দেবে যায়। দীর্ঘসময় রেকার দিয়ে অনেক বাস উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এখনো ১৫-২০টির মতো বাস মাঠে আছে। এমন অবস্থায় ঢাকা কলেজের মাঠটি অনেকটা পরিত্যক্ত টার্মিনালে রূপ নিয়েছে।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা কলেজ মাঠ ঘুরে দেখা যায়- সেখানে অনেকগুলো বাস আছে। যেগুলো কাদায় দেবে গেছে। পুরো মাঠজুড়ে কাদা আর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক গর্তে পানি জমে আছে।
বিজ্ঞাপন

নিজেদের খেলার মাঠের এমন পরিণতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অনেক শিক্ষার্থী। তারা বলেন- মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুটবল কিংবা ক্রিকেটে ব্যস্ত সময় পার করতাম আমরা। মাঠটি সমবসময় কলেজের আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকত। কলেজ প্রশাসন বিষয়টি দেখলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘মাঠের এমন চিত্র দেখলে যে কেউ বলবে এটি পরিত্যক্ত টার্মিনাল। যেন আমাদের শিক্ষার্থীদের দাবি জানানো দরকার 'ভোগান্তি কমাতে টার্মিনালটি আধুনিকায়ন করা হোক'।

বিজ্ঞাপন
আরিফুর রহমান বলেন, ‘বাসের চাকায় মাঠটি এমনভাবে নষ্ট হয়েছে সংস্কার না করলে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না। এটি সংস্কার করতে ছয় মাস সময় তো লাগবেই।’
বেশ কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকেই একটি-দুটি করে বাস কলেজের এক নম্বর (বা মূল গেট) গেট দিয়ে পুকুরপাড় হয়ে মাঠে আসতে শুরু করে। আবাসিক হোস্টেলের মাঠেও পার্কিং করা হয় অনেক বাস। দুপুর নাগাদ দুই শতাধিক ছোট-বড় বাসে মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এছাড়াও ক্যাম্পাস আঙ্গিনায় রাখা হয় অনেক যানবাহন।

বৃষ্টির আগে অনেক বাস রাখায় সেগুলোর সরানোর সময় চাকা দেবে যেতে থাকে। সমাবেশ শেষে অধিকাংশ বাস ছেড়ে গেলেও ৭০-৮০টির মতো বাসের চাকা দেবে যাওয়ায় সেগুলো আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাতভর রেকার দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে অনেক বাস সরাতে পারলেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০টির মতো বাস মাঠে থাকতে দেখা গেছে।
শুধু তাই নয়, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্মীদের দীর্ঘসময় অবস্থানের কারণে অনেক খাবারের উচ্ছিষ্ট ও প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখা গেছে। মাঠ লাগোয়া পুকুরে ভাসছে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক। এতে নষ্ট হয়েছে পুকুরটির পরিবেশও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক হল সুপার জানিয়েছেন- সমাবেশের বাস রাখার ক্ষেত্রে কোনোপ্রকার অনুমতি নেওয়া হয়নি। মাঠের সৌন্দর্যবর্ধন ও খেলাকে সাচ্ছন্দ্য করতে সম্প্রতি সংস্কারও করা হয়। বাস রাখায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। মাঠ ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়েছে।

ঢাকা কলেজের নর্থ হল সুপার ও শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক মো. ওবায়দুল করিম বলেন, বাস রাখার ক্ষেত্রে কলেজ প্রশাসন থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে সবগুলো বাস সরে গেলে মাঠ সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি।
ক্যাম্পাসে বাস রাখতে কলেজ প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না প্রশ্ন করা হলে রেগে যান কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউসুফ। অধ্যক্ষ বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলতে কলেজে আসেন। সরাসরি ছাড়া কোনো কথা হবে না।’ একথা বলেই ফোন রেখে দেন অধ্যক্ষ।
ডিএইচডি/এমআর

