পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে সূর্য। তাপদাহের দাপট তেমন না থাকলেও চারদিকে ভ্যাপসা গরম। সড়কেও লম্বা লাইন, গাড়ির চাকা ঘুরছে ধীর গতিতে। তাতে বিরক্ত হয়ে কেউ কেউ আবার ফুটপাত ধরেই ছুটছেন নিজ গন্তব্যে। তবে এমন ভোগান্তির ছিটে-ফোঁটাও নেই ফুটপাত লাগোয়া পার্কে। ছোট ছোট দলে দৌড়ঝাঁপ ও খেলাধুলায় মেতেছে শিশুদের কয়েকটি দল। যাদের অধিকাংশই পথশিশু।

বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে গুলশান শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ স্মৃতি পার্কে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে মঙ্গলবার। পার্ক ঘুরে দেখা যায়, শিশুদের কেউ গাইছে গান, কেউবা পাঠ করছে কবিতা। অভিভাবকসহ নানা বয়সীদের ভিড়ও নেহায়েতই কম নয়। যাদের কেউ আনমনে ছবি আঁকছেন। আবার কেউবা পরিশ্রান্ত শরীরে গাছে হেলান দিয়ে বসে দেখছেন শিশুদের দুরন্তপনা।

গুলশান ১০৩ ও ১০৯ নম্বর রোড সংলগ্ন ৩ দশমিক ৩৩ একর আয়তনের এই পার্ক নির্মাণে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয় করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। যা একটি কমিউনিটি পার্ক। সর্বসাধারণের ব্যবহারে সবসময় উন্মুক্ত। বর্তমানে এই পার্কে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন চক্রাকার হাটা-চলার মাঠ, শিশু কিশোর ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ২টি প্লেয়িং জোনসহ ২২ ধরনের খেলনা। সেই সঙ্গে পার্কজুড়ে আছে দেশীয় ফলজ, বনজ ও ঔষুধি গাছের সমারোহ। রয়েছে ঘাসে আচ্ছাদিত একটি খেলার মাঠ।

বিজ্ঞাপন
সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা যায়, পার্কটিতে ছোট ছোট দেশীয় প্রজাতির গাছের সঙ্গে রয়েছে ফুল গাছও। কোনোটিতে ফুল ফুটেছে আবার কোনোটিতে এসেছে ফল। ছোট ছোট পাথর বিছিয়ে চক্রাকার হাঁটার রাস্তা দিয়ে সামনে যেতেই চোখে পড়ে প্রজাপতি, ভীমরুলও। উড়ছে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে। আবার হাঁটার পথ ছাড়া পার্কের ফাঁকা জায়গায় গজিয়েছে সবুজ ঘাস। আর উল্লেখযোগ্য গাছের মধ্যে রয়েছে নিম, হরিতকী, বহেরা, পারিজাত, কাঞ্চন, ডুমুর, হিজল, পলাশ, শিমুল, ছাতিম, মহুয়া ও অর্জুনগাছ। সবমিলিয়ে যেন সবুজের ছড়াছড়ি।
পার্কটির উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে আছে শিশু-কিশোরদের খেলার জন্য বিশেষ রাইড, যেখানে প্রথম রাইডটি দুই-তিন বছর বয়সী শিশুদের খেলার উপযোগী। দ্বিতীয়টিতে কিছুটা বড় বয়সী শিশুরা খেলতে পারে। তবে এই দুটি স্থান ছাড়াও রয়েছে স্লাইড, দোলনাসহ আরও কয়েকটি রাইড। অন্যদিকে পূর্ব পাশের সীমানা পাশের জায়গাটি ঢালু। সেখানে বসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
পার্কের হাঁটার পথের অংশে আছে ছোট ছোট অনেক গাছ। তবে মাঝামাঝি অংশের গাছগুলো বড় আকৃতির। এখানে বিশেষ নালা তৈরি করা হয়েছে। যা দেখতে অনেকটা দ্বীপের মতো। সঙ্গে পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে কংক্রিট ছাড়া। যেখানে স্থান পেয়েছে আকন্দ, কেয়া, বন তেজপাতার মতো গাছ।

গুলশানের এই পার্কে বসানো দোলনায় দোল খেতে দেখা যায় পথশিশু রাসেদ, নাইম ও বিকাশকে। কথা হলে তারা জানায়, প্রায় প্রতিদিন এখানে ঘুরতে আসে তারা। দোলনায় দোল খায়, বিভিন্ন রাইডে চড়ে। কাউকে বিরক্ত করে না বলেও দাবি তাদের। রাসেদ বলে, পার্কের বাতাস ঠাণ্ডা। টয়লেট আছে, তাই আসি। অন্যকোথাও গেলে তো টাকা দেওয়া লাগে। মাঝেমধ্যে দারোয়ান ঢুকতে দিতে চায় না। কিছু করব না বললে ঢুকতে দেয়।
সন্তানকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে এসেছেন সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে গল্পে মেতেছেন তিনি। কথা হলে ঢাকা মেইলকে জানান, তার বাসা পাশেই।

পার্কের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ক্লাবের ব্যবস্থাপনা থাকায় একটা শৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে পার্কটি। শিশুদের ভিড় সবসময়ই থাকে। তবে কিছু সংখ্যক পথশিশুর উপস্থিতি সবসময় থাকে। কোনো কোনো অভিভাবকের বিষয়টি নিয়ে আপত্তি আছে। এ সময় পথশিশুদের উপস্থিতিতে কোনো সমস্যা হয় কি না জানতে চাইলে বলেন, সমস্যা হয় না। তাও আপত্তি, কাদের সঙ্গে মিশছে এসব নিয়ে।

গুলশানের এই পার্কের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা পার্ক ও মাঠ নির্মাণ করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। মাঠ ও পার্কগুলো উন্মুক্ত করার পরে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ একটা চ্যালেঞ্জ। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কটি রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভাল করছে গুলশান ইয়ুথ ক্লাব। এ নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে তাদের একটি চুক্তি রয়েছে।
উল্লেখ্য, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গুলশান সেন্ট্রাল পার্কের নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্ক’।
ডিএইচডি/আইএইচ

