বহুকাল ধরে আতরকে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে মানুষ। মনকে সতেজ রাখতে ও সুগন্ধ ছড়াতে আতরের কোনো বিকল্প নেই। ইসলাম ধর্মে সুগন্ধি হিসেবে আতর ব্যবহারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আতর ব্যবহারকে একটি বিশেষ সুন্নত হিসেবে পালন করা হয়। তাইতো বাংলাদেশেও যুগ যুগ ধরে আতরের ব্যবহার হয়ে আসছে।
রাজধানীসহ সারাদেশেই রয়েছে আতরের দোকান। দেশে এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আতর পাওয়া যায়। এমনকি বাংলাদেশেই তৈরি হয় বিশ্বের অনেক নামি-দামি আতর। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর গ্রামের প্রায় সব মানুষ আগর-আতর শিল্পের সাথে জড়িত। এই এলাকায় প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে গড়ে উঠেছে আতরের কারখানা। রাজধানীতেও বেশ কয়েক জায়গায় আতরের মার্কেট রয়েছে। রাজধানীর বায়তুল মোকররম মসজিদ মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্ক গুলিস্তান, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, কাঁটাবন মসজিদ মার্কেট, চকবাজার এলাকায় রয়েছে অনেকগুলো আতরের দোকান। এখানে রয়েছে বেশ নামি দামী আতরের সমাহার।
বিজ্ঞাপন

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটের চার নাম্বার গেটের ৬ নাম্বার দোকান আহসান আতর হাউজে সরেজমিনে দেখা গেছে, এখানে নানা ধারনের দেশি-বিদেশি আতর বিক্রি করছেন আতর ব্যবসায়ী আবদুল গফুর। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার বিভিন্ন ধরনের আতর রয়েছে। আতর বেইজ, পারফিউম বেইজ, অরগ্যানিক সব ধরনের আতর বিক্রি করে থাকি। এখানে হাসনাহেনা, মাশমুম, হোয়াইটম্যাস, ডিরোজ, কস্তুরি, ফেরারি, কুল ওয়াটার, নুর আল আইন, পিটারনিটি, গুলগিরিয়ান রোজ, মুখাল্লাত, হোয়াইট উদ, শামামাতুল আম্বার, রুহে খাস, হাফসা, জান্নাতুল বাকিসহ অনেক নামি-দামি আতর রয়েছে। বেশিরভাগই বাইরের দেশ থেকে নিয়ে আসা হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমার এখানে প্রতি তোলা (এক তোলায় ১১.৬৬ গ্রাম) ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩২ হাজার টাকা পর্যন্ত আতর আছে। আমার এখানে সাধারণত নুর আল আইন আতর বেশি চলে। যার এক তোলা আতরের দাম দুই হাজার টাকা। এছাড়াও হাসনা হেনা প্রতি তোলা ১২০০ টাকা, মাশমুম ১৬০০ টাকা, হোয়াইটম্যাস ৮০০, ডিরোজ ১২০০, কস্তুরি ৩০০০ টাকা ইত্যাদি দামে বিক্রি করে থাকি। তবে সব থেকে বেশি দামি আতর হচ্ছে ‘উদ’ বা খাঁটি আগরের আতর। যেটা ৩২ হাজার টাকা তোলা বিক্রি করে থাকি। যেটা অনেকেই আরও বেশি দামে বিক্রি করে থাকে। সৌদি আরবে এক তোলা বিক্রি হয় ৮০ হাজার-এক লাখ টাকায়। কেউ যদি আমার এখানে এক শিশি আতর কিনতে চায় তাহলে তাকে তিন লাখ টাকা গুনতে হবে।’
বিজ্ঞাপন

আবদুল গফুর বলেন, ‘আমরা আমাদের দোকানে খুসরা পাইকারি দুই ধরনেরই আতর বিক্রি করে থাকি। এখানে বাইরের দেশের আতরই বেশি। হাসনা হেনা তোলা ১২০০ টাকা, মাশমুম ১৬০০ টাকা, হোয়াইটম্যাস ৮০০, ডিরোজ ১২০০, কস্তুরি ৩০০০, ফেরারি, কুল ওয়াটার ১২০০, নুর আল আইন ২০০০, পিটারনিটি ১২০০, গুলগিরিয়ান রোজ ৬০০০, মুখাল্লাত ২০০০, শামামা ৬৫০০, শামামাতুল আম্বার ২০০০, জান্নাতুল বাকি ২০০০ টাকা তোলা।’
সাধারণত আতর হচ্ছে দুই প্রকার। একটা হচ্ছে অরগ্যানিক বা সরাসরি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে বানানো আতর। যা তুলনামূলক অত্যন্ত দাম দিয়ে কিনতে হয়। আরেকটা হচ্ছে সিনথেটিক, অর্থাৎ অরগ্যানিক আতরকে কপি করে কেমিকেল মিশিয়ে একইরকম স্মেইল তৈরি করা যার দাম হাতের নাগালের মধ্যেই। এই সিনথেটিকের মধ্যেই ভাল খারাপ দুই কোয়ালিটি আছে।

‘উদ’ হচ্ছে মূলত প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা আতরের নাম। যার সিনথেটিকটাও বাজারে পাওয়া যায়। এই উদের মূল উপাদান আগর কাঠ মূলত এক ধরনের অতি বয়স্ক গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশে সিলেটের মৌলভীবাজারের সুজানগরে এই আগরের গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এই উপায়ে আতর সংগ্রহ করার জন্য এসব গাছ থেকে নির্দিষ্ট কাঠ কেটে নিয়ে তা আগুনে জাল দেয়া হয়, এরপর সেখান থেকে যেই তেলটা বের হয়ে আসে, সেটাই ‘উদ’ বা আগর আতর।
প্রায় সারা বছরই আতরের চাহিদা থাকে। তবে রমজান মাস এলে আতরের চাহিদা কয়েকগুন বেড়ে যায়। বিশেষ করে ঈদকে কেন্দ্র করে আতরের একটা বড় বেচাকেনা হয়ে থাকে। রমজানের শেষ সপ্তাহের দিকে এই বেচাকেনা হয়ে থাকে। তাইতো ব্যবসায়ীরাও ঈদের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।
টিএই/এএস

