বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

ভুয়া বিজ্ঞাপনে ১৭০ কোটি টাকা হাতিয়েছেন প্রতারক জিয়া

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ভুয়া বিজ্ঞাপনে ১৭০ কোটি টাকা হাতিয়েছেন প্রতারক জিয়া

নিজেকে পরিচয় দিতেন শিল্পপতি হিসেবে। আকর্ষণীয় ভুয়া বিজ্ঞাপন, কোম্পানি, ওয়েবসাইট এবং বিদেশে সাজানো ফ্যাক্টরি, অফিস পরিদর্শন, বিপণন কেন্দ্র, কৃষি খামার‌ আছে বলে মানুষকে আকৃষ্ট করতেন। তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলে অনেক লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। এভাবে ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে বহু মানুষের কাছ থেকে ১৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক জিয়াউদ্দিন ওরফে জিয়া। এছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে কেনা জমি দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা ফেরত দেননি। আত্মসাৎ করা অধিকাংশ টাকা পাচার বিদেশে পাচার করেছেন।

প্রতারণার কৌশল হিসেবে ব্যবসায়ীদের দামি এবং আকর্ষণীয় গিফট দিতেন জিয়া। পরে তাদের বিদেশে তার তথাকথিত ভূয়া মালিকানাধীন টাইলস ফ্যাক্টরিতে ভ্রমণের ব্যবস্থা করতেন। ওইসব ফ্যাক্টরির অফিসের পরিদর্শনযোগ্য ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থ প্রদান করতেন। শিগগিরই বাংলাদেশে এই ধরনের ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে যাচ্ছে বলে দেশি বা বিদেশি ব্যবসায়ীসহ খ্যাতনামা অনেককেই প্রলুব্ধ করতেন। কারসাজির মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে দেশে উৎপাদিত পণ্যের লাভ দেখিয়ে সকলকে বিভ্রান্ত করতেন।


বিজ্ঞাপন


জিয়া দীর্ঘদিন ধরে এমনভাবে প্রতারণা করলেও কেউ তাকে ধরতে পারেননি। কিন্তু এবার রক্ষা হয়নি। সোমবার রাতে উত্তরায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৭টি চেক বই, ৬ বোতল বিদেশি মদ, ৯৯ হাজার টাকার জালনোট, ৬ হাজার জাল ইউএস ডলার, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ফোসান সিরামিক প্ল্যান্ট এবং জিয়া টাওয়ারের কাঠামোগত ভবিষ্যত পরিকল্পনা, ওমানে অর্থপাচারের তথ্যাদি, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য "জাপানে তৈরি" স্টিকার, ৫ ধরনের আইডি এবং বিজনেস কার্ড, নগদ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ২০০ কোটি টাকা নেওয়ার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সংক্রান্ত নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।

imrul-2মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে গ্রেফতার জিয়ার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব। সেখানে এলিট ফোর্সটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য তুলে ধরেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, জিয়াউদ্দিন ১২টি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার অর্থাৎ চেয়ারম্যান বা এমডি হিসেবে দাবি করে থাকেন। সে নিজেকে জাহির করার লক্ষ্যে এ ধরনের তথ্য সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড তৈরি করেছে বলে জানায়। এছাড়াও তার অস্ট্রেলিয়া, চায়না, হংকং, ওমান ও দুবাইয়ে বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে ভূয়া প্রচারণা চালায়। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিকে কৌশলে প্রলুব্ধ করে ব্যবসায়িক পার্টনার বানানোর নামে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন। এছাড়া প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে নানাভাবে প্রতারিত করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জিয়া জানায়, তিনি ২০১৪ সালে ফোসান সিরামিক লিমিটেড স্যানিটারি প্যাড, হাইলেডি স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ নানাবিধ পণ্যের আকর্ষণীয় টিভিসির মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেন। ব্যবসায়িক অংশীদার বানানোর লোভ দেখিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে কয়েকশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০০৯ সালে প্রবাসে থাকা অবস্থায় টাইলস ব্যবসার খুঁটিনাটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেন। এছাড়া বিদেশি দুটি দেশের মাফিয়াদের মাধ্যমে বিপুল টাকা এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করেন। এভাবে অর্থপাচার চক্রের সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়। পরে ২০১৪ সাল থেকে ফোসান সিরামিক লিমিটেড, হাইটেক সিরামিক লিমিটেড ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে অধিক মূল্য দেখিয়ে বিদেশে অর্থপাচার করেন। ২০১৬ সাল থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ হতে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা পাচার করেছে।


বিজ্ঞাপন


এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের সরকারি উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে মর্মে প্রচারণা চালাতো। বিভিন্ন প্রজেক্টের নামে কয়েকশ একর জমি লিজ নিয়ে সেটিকে তার নিজস্ব সম্পত্তি বলে প্রচার করতেন। যা দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত হত। সেই সমস্ত দেশে টাইলসসহ বেশ কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই ধারণা দিতে তিনি সেখানে সাময়িক দোকান ভাড়া দেখাতেন। পরবর্তীতে দেশি/বিদেশি ব্যবসায়ীদের সেখানে পরিদর্শন করিয়ে বিনিয়োগের নামে অর্থ আত্মসাৎ করতেন।

imrul-3র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, জিয়া নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজসে টাইলসে ফোসান সিরামিকের লোগো খোদাই করে নিজের ফ্যাক্টরি থেকে তৈরি করা বলে প্রচার করে বাংলাদেশে ব্যবসা করে। প্রতারণার মাধ্যমে বিলাসী জীবনযাপন করতেন। তিনি ক্রেতাদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ নিয়ে সামান্য টাইলস সরবরাহ করতেন। বাকি অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিপুল জমি কেনেন। পরে সমস্ত জমির বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কয়েকশ কোটি টাকা ঋণ নেন। পরে সেই টাকা শোধ না করে বিদেশে পাচার করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে জিয়া র‌্যাবকে আরও জানায়, তিনি তার ৪টি ব্রান্ডের সিরামিকস বা টয়লেট সামগ্রীর ব্যবসার আড়ালে বিভিন্নভাবে মানুষকে প্রতারিত করেন। প্রতারণার অর্থ থেকে প্রায় ১৩০ বিঘা জমি কিনেছেন। যার বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় তিনশ কোটি টাকা ব্যাংক লোন নেন। দেশে বিভিন্ন ব্যাংকে ৩৯টি অ্যাকাউন্ট ও বিদেশে তিনটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এছাড়াও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৬০-৭০ টি ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৮-২০টি মামলা রয়েছে।

এমআইকে/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর