মো. আরফানুর রহমান। বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট মার্কেট কর্নারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রি করেন ইসলামি বই। রমজান উপলক্ষ্যে তাঁর দোকানে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। পছন্দের বই খোঁজে আরফানুরের কাছে দাম জানতে চাইছেন ক্রেতারা, তিনি জবাব দিচ্ছেন হাসিমুখে। তার দোকানের পাশে আরও তিনটি দোকান। সবগুলোতেই ইসলামি বই। ক্রেতাও আছে প্রচুর।
তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রমজান মাসে পবিত্র কোরআনসহ ইসলামি বই বিক্রি বেড়েছে। অন্য মাসগুলোতে ইসলামি বইয়ের পাঠক থাকলেও রোজায় তা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ফলে বিক্রেতারাও ব্যস্ত থাকেন এই মাসে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা মেইলের সাথে আলাপচারিতায় আরফানুর বলেন, ‘এখন প্রতিদিন ১২ হাজার টাকা বিক্রি করি। আল্লাহর রহমতে বেশ ভালো অন্য মাসের তুলনায়। গত দুইবছর করোনার সময় রোজাতে বিক্রি কম ছিল। তবে এবার ভালো।’ তিনি বলেন, ‘রোজায় মানুষ ধর্মীয় বই পড়তে চান এজন্য বিক্রিটাও বাড়ে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের আশপাশে যারা ইসলামি বই বিক্রি করেন তারা জানান, রমজানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পবিত্র কোরআন। ১৫ রোজা পর্যন্ত পবিত্র কোরআন বেশি বিক্রি হয়। এরপর বিক্রিতে ভাটা পড়ে। তবে হাদিস, সিরাত, ইসলামি গল্প-উপন্যাস, ইতিহাস, সাহাবা জীবন, ইসলামি বিধি-বিধান, মাসয়ালা মাসায়েলসহ গবেষণামূলক বইয়ের চাহিদাও থাকে রমজান মাসজুড়েই।
বাংলাবাজারে ধর্মীয় বইয়ের অন্যতম বিখ্যাত মার্কেট ‘ইসলামী টাওয়ার’। কয়েকশ ধর্মীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ মার্কেটে।
‘ইসলামী টাওয়ারে’ খোঁজ নিলে জানা যায়, বছরজুড়ে পাঠকের ভিড় থাকলেও রমজান এলে বহুগুণে বেড়ে যায় এ চিত্র। বাড়তে থাকে পাঠকদের আনাগোনা। সারি-সারি সাজানো বইয়ে পাঠকের অনুসন্ধানী চোখ। এ মাসে ব্যস্ততা বাড়ে প্রকাশকদেরও। ইসলামী টাওয়ারের বই বিক্রেতা নিয়ামত হোসেন বলেন, রোজার শুরু থেকে ১৫ দিন কাস্টমারের ভিড়ে কথা বলার সময় থাকে না। রোজায় সবাই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে নিয়ম পালন করেন। রোজা রাখেন কোরআন তেলাওয়াত করেন। যাদের বাসায় কোরআন বা ধর্মীয় বই নেই তারা কিনে নেন।
বিজ্ঞাপন
রোজায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামী লাইব্রেরি ও প্রকাশনাগুলোতে পাঠকদের বেশ ভিড় লক্ষ করা যায়। ধর্মীয় প্রকাশকরাও রমজান মাসকেই বই বিক্রির উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন। এ মাসে পাঠকের চাহিদার দিকে লক্ষ্য করেই নতুন বই বাজারে নিয়ে আসেন প্রকাশকরা।
বাংলাবাজারে বই বিক্রেতা সুলতান উদ্দিন বলেন, আমি ৮ বছর হয়ে গেলো ভাইয়ের সাথে ব্যবসায় হাত লাগিয়েছি। করোনার সময়গুলো খুবই খারাপ সময় গেছে। এবার সবকিছু খোলা থাকাতে বিক্রিও শুরু থেকেই ভালো ছিল। সর্বোচ্চ ২০ রোজা পর্যন্ত বিক্রিটা ভালো থাকে। পরে ইসলামী বই আর খুব একটা বিক্রি হয় না। মানুষ শপিং আর বাড়ি যাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসাতে নতুন ইসলামী বই, পবিত্র কোরআন কেনা হয়। সে কারণেও বিক্রিটা বেড়ে যায় বলে জানা গেছে।
রাজধানীর একাধিক মসজিদ সংশ্লিষ্ট কমিটি ও পেশ ইমামদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রোজায় অনেকে বাসা বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। কোনো কোনো মসজিদেও নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ি দেয়া হয় ইসলামি শিক্ষা। আর এসব শিক্ষাক্ষেত্রে প্রচুর ইসলামী বই ব্যবহার হয়।
বাংলাবাজার ইসলামী মার্কেট ব্যবসায়িরা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করতে না পারলেও মার্কেটে রোজায় কয়েক কোটি টাকার বই বিক্রি হয় বলে মনে করেন।
রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের নামাজ শেষে অনেক মুসল্লীরা মসজিদে বসে কোরআন তেলাওয়াত করছেন। তাদের একজন রহমান মিয়া (৩৮)। তিনি বলেন, রোজায় মনজিদে সবার সাথে তেলাওয়াত করলে আরো বেশি উৎসাহ পাই, ভালো লাগে। আবার কোরআন আনতে হচ্ছে না, মসজিদেরটাই পড়তে পাচ্ছি।
মুসলমানদের সংযমের মাস হচ্ছে এই রমজান। আর ধর্মীয় বিভিন্ন বিধি বিধান জানতে শিখতে মানতে মুসলমানদের আগ্রহই টেনে নিয়ে যায় ইসলামি বইয়ের দোকানগুলোতে।
ডব্লিউএইচ/একেবি

