শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সালমার ‘ডীন'স বেকারি’: কেক যার ক্যানভাস

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
প্রকাশিত: ০৭ জুন ২০২৩, ০২:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

সালমার ‘ডীন'স বেকারি’: কেক যার ক্যানভাস

কোনো কাজকে কঠিন মনে হলে সেটাকে এড়িয়ে যাওয়াই মানুষের স্বভাবজাত প্রকৃতি। কিন্তু উম্মে সালমার বেলায় হয়েছিল তার উল্টো। ২০১৪ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমসে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেন সালমা। পড়াশোনা শেষ করার আগেই বসে গিয়েছিলেন বিয়ের পিঁড়িতে। ঘর আলো করে এসেছিল ফুটফুটে সন্তান। তাই পড়াশোনা, সংসার আর সন্তানকে সামলে অন্য কোনোদিকে তাকানোর অবকাশই যেন ছিল না একদম। কিন্তু ভেতরে ভেতরে পেশাগত জীবনে যোগ দেওয়ার ইচ্ছেটা বারবার নাড়া দিয়ে যাচ্ছিল তাকে।  

খাবার খেতে আর রান্নার নতুন নতুন পদ বানাতে অসম্ভব ভালোবাসতেন সালমা। ইউটিউব তখনো এতোটা সহজলভ্য না। পত্রিকা পড়ে, বই ঘেঁটে নতুন সব মুখরোচক খাবার বানানোর চেষ্টা করতেন তিনি। নিজেও খেতে ভালোবাসেন খুব, তাই পছন্দমতো রান্না ঘরে বসে বানিয়ে ফেলার ঝোঁক ছিল। কিন্তু সব রান্না সহজে হলেও বেকিং ব্যাপারটা বেশ কঠিন লাগতো উম্মে সালমার। 


বিজ্ঞাপন


cake

কঠিন বলেই একটু বাড়তি সময় দিতে হলো তাকে বেকিং-এ। বাড়িতেই চলছিল ফুড টেস্টিং। নতুন নতুন কেক আর বেকিং আইটেম বানিয়ে একবার না হলে, দুইবার, দুইবারে না হলে তিনবার- এভাবেই রপ্ত হচ্ছিল শিল্পটা। আর প্রচুর শ্রম আর সময় দেওয়ার জন্যই বোধহয় একটু বেশিই ভালোবেসে ফেললেন সালমা বেকিংকে। 

এরমধ্যে শেষ হলো পড়াশোনা। সন্তান বড় হয়ে উঠল। সংসার, সন্তান আর জীবন গুছিয়ে অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন সালমা। এখন তো কিছু করাই যায় নিজের জন্য, নিজের মতন। কিন্তু করবেনটা কী? বুদ্ধি এল সেসময়। 

cake


বিজ্ঞাপন


বেকিং যেহেতু এতো পছন্দের, সবাই কেক-পেস্ট্রি খেয়ে এতো প্রশংসা করছে যখন, বেকিং নিয়েই কিছু করে ফেলা যাক না কেন! যেই ভাবা সেই কাজ। ২০২০ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলো ডীন'স বেকারি। তবে তার আগে টানা ৬-৭ মাস নিজের দক্ষতাকে ঝালিয়ে নিলেন সালমা বারবার।

এতো পরিশ্রম বৃথা যায়নি। ডীন'স বেকারি খুব দ্রুতই সাড়া ফেলল গ্রাহকের মধ্যে। কাঁচামালের দাম অনেক। তাও বেস্ট কোয়ালিটিতে যতটা সম্ভব সাশ্রয়ে কাস্টোমাইজড কেক বিক্রি করায় উম্মে সালমার হাতের জাদুকে যেন লুফে নিলো সবাই।

cake

কটন চিজকেক, প্রিন্সেস কেক, লেমন জেস্ট দিয়ে ভ্যানিলা কেক, ভেলভেট কেক- কী নেই উম্মে সালমার ডীন'স বেকারিতে! আছে সুগার ফ্রি কটন চিজকেক আর চকলেট/ভ্যানিলা কেকও। গ্রাহকদের চাহিদামাফিক কেক দিতে গিয়ে প্রায়ই হিমশিম খেয়ে যান উম্মে সালমা। কাস্টোমাইজড ছবির কেক করতে কখনো কখনো ৯-১০ ঘণ্টাও লেগে যায়।

তবে এতো ব্যস্ততার মধ্যেও ভালো লাগে তার প্রতিটি ক্রেতার পছন্দের ডিজাইনে, পছন্দের কেকটি ঠিক সময়ে হাতে পৌঁছে দিতে। লাগবে নাই বা কেন, প্রত্যেকটা কেক তো উম্মে সালমার জন্য একেকটা গল্পের মতো। গল্পটা গ্রাহকের, তবে লেখক উম্মে সালমার ডীন'স বেকারি!

cake

জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরেও এখনো শিখে যাচ্ছেন সালমা। নিয়মিত করছেন বেকিং, বিজনেস আর ফটোগ্রাফির কোর্সগুলো। শিখছেন নতুন সব ফিউশন। যোগ দিয়েছেন 'আনন্দমেলা', 'হার ই ট্রেড'সহ নানারকম মেলায়। 

ভবিষ্যৎ নিয়ে কী পরিকল্পনা উম্মে সালমার? কোথায় নিতে চান তিনি তার স্বপ্নের ডীন'স বেকারিকে? প্রশ্নের জবাবে উম্মে সালমা বলেন, ‘শুরুর দীর্ঘ দুবছরে আমি শুধু সাসটেইন করার পেছনে সময় দিয়েছি। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থায় হুট করে বড় সেটআপে যাওয়ার পদক্ষেপ কিছুটা রিস্কিও। তাই সহসাই অফলাইনে আসার সম্ভাবনা কম। তবে আমি স্বপ্ন দেখি একদিন হয়ত লাল নীল রংয়ের বিলবোর্ডে ডীনস বেকারির বিজ্ঞাপন চলবে। আমি না থাকলেও ডীনস বেকারির কার্যক্রম চলবে। 

cake

প্রতিকূল আর কঠিন এই পথে সবসময় পরিবারকে পাশে পেয়েছেন সালমা। গ্রাহকদের সাথে নিয়ে তাই এত পথচলাটা যেন আরও অনেকটা দূর এগিয়ে যায়, শুভকামনা তাকে। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর