শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ভিটামিন বি১২: কেন খাবেন, কাজ কী? 

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ জুন ২০২৩, ১২:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ভিটামিন বি১২: কেন খাবেন, কাজ কী? 

ভিটামিন। শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারণ খাদ্য দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, তাকে ভিটামিন বলা হয়। দ্রাব্যতা অনুযায়ী একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।। জলে দ্রবণীয় আর ফ্যাটে দ্রবণীয়। 

ভিটামিন বি, সি, এবং ভিটামিন পি জলে দ্রবণীয়। অন্যদিকে ভিটামিন এ, ডি, ই, কে ফ্যাটে দ্রবণীয়। আবার ভিটামিন বি১২ জলে দ্রবণীয়, যা ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সের অংশ। এই বিশেষ ভিটামিন নিয়ে অনেকের মনেই অনেকরকম প্রশ্ন জাগে। কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন বি১২? এর কাজই বা কী? সব প্রশ্নের জবাব জানুন এই প্রতিবেদনে- 


বিজ্ঞাপন


vitamin

কেন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন বি১২ 

শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান ভিটামিন বি১২। শরীরে ডিএনএ থেকে শুরু করে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অনেকের দেহেই এই ভিটামিনের ঘাটতি লক্ষ করা যায়। যার ফলে দেখা দেয় নানা অসুখ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতের প্রায় ৪৭ শতাংশ মানুষ এই ভিটামিনের অভাবে ভুগছেন। বিশেষত, নিরামিষাশীদের মধ্যে এই ঘাটতি বেশি দেখা যায়।

শরীরের জন্য কতটুকু ভিটামিন বি১২ প্রয়োজন? 


বিজ্ঞাপন


ব্যক্তিবিশেষে শরীরে এই ভিটামিনের প্রয়োজনীয় মাত্রা আলাদা হলেও, সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ২ দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি১২ প্রয়োজন হয়। গর্ভবতী নারীর দৈনন্দিন ২ দশমিক ৬ মাইক্রোগ্রাম আর সন্তানকে স্তন্যপান করানো মহিলাদের ২ দশমিক ৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি১২-এর প্রয়োজন। 

vitamin

বয়সের ওপর ভিত্তি করে এই ভিটামিনের চাহিদা কম-বেশি হয়। জলে দ্রবণীয় হওয়ার কারণে শরীরে কখনো প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন বি১২ থাকে না। দেহের চাহিদা পূরণ হয়ে গেলে অতিরিক্ত ভিটামিন মূত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়।

ভিটামিন বি১২-এর কাজ কী

শরীরে লোহিত রক্তকণিকা গঠন ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ভিটামিন বি১২। এটি স্বাভাবিক কোষ বিভাজন, হাড়, ত্বক, দাঁত ও নখের গঠন সুস্থ রাখতে প্রয়োজন হয় ভিটামিন বি১২। মেটাবলিজম ও ক্যানসার প্রতিরোধেও ভিটামিন বি১২-এর ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া, এই ভিটামিন ত্বক ও মাথার খুলিকে আর্দ্র রাখে। এগজিমা প্রতিরোধে ও ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। 

vitamin

শরীরে অ্যামিনো অ্যাসিডের ক্ষতিকারক প্রভাব রোধে কাজ করে ভিটামিন বি১২। ফলে কমে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের আশঙ্কা। অ্যালঝাইমারস ও পারকিনসনসের মতো স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষয়জনিত রোগের বিপদও কমায় এই ভিটামিন। চোখের জন্যও এটি উপকারী।

বি১২ ঘাটতির লক্ষণ

দিনভর ক্লান্তি ও দুর্বল লাগা এই ভিটামিন ঘাটতির অন্যতম লক্ষণ। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি১২-এর অভাবে দেহে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয় না। ফলে অক্সিজেন চলাচল ব্যাহত হয়। এই ভিটামিনের ঘাটতি হলে নিঃশ্বাসের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। 

ভিটামিন বি১২-এর অভাবে মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাঘোরা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়ার সঙ্গে দেখা দেয় ক্ষুধামান্দ্য, ডায়রিয়া, পেশির দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা। 

শরীরে ভিটামিন বি১২-এর অভাবে জিভ সাদা দেখায়। চোখের দৃষ্টি কমে আসে। এই ভিটামিনের ঘাটতিতে শরীরে রক্তশূন্যতাও দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি হলে দেখা দিতে পারে স্নায়বিক সমস্যাও। ফলে হাঁটতে-চলতে অসুবিধা হয়। শারীরিক ভারসাম্য রক্ষায় বিঘ্ন ঘটে।

vitamin

কেন ভিটামিন ভি১২ এর ঘাটতি হয়?

আমাদের দেহে ভিটামিন বি১২ তৈরি হয় না। খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমেই শরীরে এর চাহিদা মেটে। পুষ্টিবিদদের মতে অনেক সময়েই ডায়েটের মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন বি১২ পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছয় না। তা ছাড়া, অ্যাট্রোপিক গ্যাসট্রিক, অতিরিক্ত মদ্যপান ইত্যাদি বেশকিছু কারণেও ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি হয়। মূলত প্রাণিজ খাবার থেকেই এই ভিটামিন পাওয়া যায়। তাই নিরামিষাশীদের শরীরে ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি হয়।

ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি মেটাতে কী খাবেন?

রোজকার খাদ্যতালিকায় ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি রাখলেই বি১২-এর ঘাটতি মিটতে পারে। মাছের মধ্যে টুনা, স্যামন ইত্যাদি বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছে তুলনামূলক বেশি ভিটামিন বি১২ থাকে। এছাড়া ঢেকি ছাঁটা চাল ও বিভিন্ন ধরনের গোটা শস্য, মাশরুম, দুধ, ও দুগ্ধজাত খাবারেও কিন্তু ভিটামিন বি১২ থাকে। বর্তমানে বাজারজাত বেশ কিছু খাবারে আলাদা করেও মেশানো হচ্ছে এই ভিটামিন। প্রয়োজনে সেসব খাবারও খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, সসব খাবার সবার জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। এই বিষয়ে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। অতিরিক্ত শারীরিক অসুস্থতায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ভিটামিন বি১২ 

ভিটামিনের ঘাটতির দূর করতে চিকিৎসৎসকরা অনেকসময় ভিটামিন বি১২ সাপ্লিমেন্ট দিয়ে থাকেন। তবে এই ওষুধ কিন্তু আজীবন খেতে হয় না। চাহিদা মিটে গেলেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর