শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মৌসিনরাম: পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের স্থান

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৩, ০২:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

মৌসিনরাম: পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের স্থান

‘মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর/ মন খারাপের দিস্তা/ মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়/ ব্যাকুল হলে তিস্তা’—শ্রীকান্ত আচার্যের কণ্ঠে এ গান শুনে আনমনে মেঘের দেশে হারায় অনেকে। মেঘের কথা বললেই চলে আসে বৃষ্টির কথা। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় কোথায়? কেউ এই প্রশ্ন করলে আপনার উত্তর হবে- ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি। তবে এখন এই উত্তর দিলে তা ভুল হিসেবে গণ্য হবে। কেননা সবচেয়ে বৃষ্টিপাতের স্থান বদলে গেছে।

mawsynram


বিজ্ঞাপন


মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগবে তাহলে বৃষ্টি এখন সর্বোচ্চ রাজত্ব চালাচ্ছে কোথায়? চেরাপুঞ্জিকে হারিয়েছে কোন জায়গা? বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় মেঘালয়েরই আরেক জায়গায়। এর নাম মৌসিনরাম।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ইতোমধ্যেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের স্থান হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে মৌসিনরাম। 

mawsynram

মৌসিনরামে গড় বৃষ্টিপাত বছরে ১১,৮৭২ মিলিমিটার বা ৪৬৭ ইঞ্চি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে একই জেলার চেরাপুঞ্জি। সেখানকার গড় বৃষ্টিপাত বছরে ১১,৭৭৭ মিলিমিটার বা ৪৬৩.৭ ইঞ্চি।


বিজ্ঞাপন


মৌসিনরাম গ্রাম সম্পর্কে একটু বলা যাক। মেঘ পিয়ন এখানে উড়ে উড়ে বৃষ্টি নিয়ে আসে। এত মেঘ যে তা ঘরের ভেতর ঢুকে যায়। প্রায় এক হাজার পরিবারের বাস এখানে। বছরজুড়ে বৃষ্টি ঝরতেই থাকে মৌসিনরামে। এপ্রিল-মে মাসে তার গতি একটু বেড়েই যায়। বৃষ্টির লাগাতার ঝমাঝম শব্দ যেন কানে তালা লাগিয়ে দেয়। অতিথি হিসেবে কেউ কদিনের জন্য সেখানে গেলে অবশ্য বৃষ্টির এই শব্দ মন্দ লাগে না। 

mawsynram

শহরের বুকে একঘেয়ে বৃষ্টি অস্বস্তির কারণ হলেও, মৌসিনরামের প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে। চলতি পথে কখন যে মেঘ এসে আলিঙ্গন করবে টেরই পাবেন না। আবার ইচ্ছে হলেই বৃষ্টির রিমঝিম ধারা ভিজিয়ে দেবে দেহ। প্রশান্তি নিয়ে আসবে মনে। চাইলে হারিয়ে যেতে পারেন পাইন বনে। লম্বা গাছের সারির মাঝে বৃষ্টিভেজা পথ হাঁটতে গিয়ে রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি হবে। 

নীল আকাশ, সাদা মেঘ, সুদূর সবুজ প্রান্তর, ঢেউ খেলানো পাহাড়, স্বচ্ছ নদী, পাহাড় বেয়ে বয়ে আসা জলপ্রপাত, হ্রদ, অর্কিডের বাগান আর উপজাতি। সবকিছুই যদি একই স্থানে পেতে চান তবে মৌসিনরামে একবার ভ্রমণ করা চাই। 

mawsynram

মৌসিনরামে এই মেঘ, এই বৃষ্টি। তাই ঘরের বাইরে বের হলে ছাতা সঙ্গী করতে হবে। তবে আমরা সাধারণ যে ছাতা ব্যবহার করি তা দিয়ে কাজ হবে না। বড়জোর এক বা দুই দিন পরেই এই ছাতা ছিঁড়ে যাবে। তাহলে মৌসিনরামের গ্রামবাসীরা কী করেন? তারা ভরসা রাখেন বেত বা বাঁশের তৈরি বিশেষ এক ছাতায়। যা দেখতে খানিকটা আমাদের পরিচিত বেতের ঝুড়ির মতো। এই ছাতা মাথায়ই যাতায়াত করেন তারা। 

mawsynram

মৌসিনরামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বড্ড স্নিগ্ধ। এখানে নেই শহুরে কোলাহল। আছে কেবল পাখিদের গুঞ্জন। এখানকার মানুষের জীবনযাত্রাও অনেক সরল। মূলত খাসি উপজাতির মানুষের বসবাস মৌসিনরামে।

কখনো যদি বৃষ্টির এই বাড়িতে ঘুরতে যাওয়া ইচ্ছে হয় তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে যাওয়াই শ্রেয়। তখন বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কম থাকে। আর আপনি যদি বৃষ্টির ঘ্রাণে নাক ডোবাতে চান, দেখতে চান প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা— তবে চলে যান কোনো এক বর্ষায়।

mawsynram

পৃথিবীর কথা তো বলা হলো। বাংলাদেশের বৃষ্টি কথা বলে ইতি টানা যাক। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় সিলেটের লালখানে। আর সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয় নাটোরের লালপুরে। দুটো স্থানের নামের মিল থাকলে প্রকৃতি পুরোই ভিন্ন, তাই না? অবশ্য প্রকৃতি সবসময় নিজ মর্জিতেই চলে। তবে অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি থেকে বাঁচতে বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই।  

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর