প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাজেক ভ্যালিতে একঝাঁক বাইকপ্রেমীদের নিয়ে ছুটে যাই একদিন। যেখানে মেঘ এসে মানুষের হাতের কাছে ধরা দেয়। পাহাড়, ঝর্ণা, মেঘ আর নীল আকাশের রাজ্য সাজেক। যেখানে প্রকৃতির সাথে মেঘ-সূর্যের লুকোচুরি চলে অবিরাম।
প্রকৃতির এমন অমায়িক রূপ দেখতে কার না ভালো লাগে! যেই সৌন্দর্যের কথা চাইলেও কেউ কখনো ভুলতে পারবে না। মেঘ, পাহাড় আর সূর্যের দোলাচলে মুহূর্তেই হারিয়ে গিয়েছিলাম কিছু সময়ের জন্য। এ যেন পৃথিবীর এক স্বর্গরাজ্যে ঘুরতে এসেছি। যেদিকে তাকাই সেদিকেই প্রকৃতির নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছোট বড় পাহাড়। এ যেন প্রকৃতির রাজকন্যার দেশে নিজেকে হারিয়ে খুঁজে ফেরা। এ দৃশ্য দেখে পাহাড়ে পঙ্খিরাজ ঘোড়া নিয়ে ছুটে চলতে মন চাইবে যে কারও। আমাদের সাথে পঙ্খিরাজ ঘোড়া না থাকলেও প্রত্যেকের কাছে ছিল বাইক। আর পাহাড় বেয়ে উঁচু-নিচু রাস্তায় বাইক নিয়ে ছুটেছি পঙ্খিরাজের মতো। পাহাড়ের এমন দৃশ্য আত্মতৃপ্তিতে ভরপুর করে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন

মোটরবাইক হাঁকিয়ে এমন দৃশ্য দেখতে ছুটে গিয়েছি সাজেক ভ্যালিতে। কেউ চাকরিজীবী আবার কেউ ব্যবসায়ী কিংবা শিক্ষার্থী। প্রায় সব শ্রেণি পেশার লোকজন নিয়ে এমন এক ট্যুরের আয়োজন করে গাজীপুরস্থ শ্রীপুর ট্যুরিজম বাইকার্স যুব উন্নয়ন সংঘ। স্বদেশের প্রকৃতির প্রেমে বার-বার হাবুডুবু খেতেই তারা ছুটে চলে পাহাড়-পর্বত আর সমুদ্র পানে। তাদের ঘুরতে বাদ যায়নি বাংলাদেশের কোন পর্যটন এরিয়া, সবই ঘুরেছেন বাইকে করে। একঝাঁক বাইকার প্রেমী যুবকদের নিয়ে প্রতি বছরেই বিভিন্ন ট্যুরের আয়োজন করে এই বাইকার্স গ্রুপটি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০টি বাইক ট্যুরের আয়োজন করেছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি খন্দকার মাসুদ রানা।
তাদের সঙ্গে দুটি বাইক ভ্রমণে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার। আমার ভ্রমণসঙ্গী ছিল বন্ধু মাহবুবুর রহমান খান। এর মধ্যে একটি ছিল ২০২২ সালের আগস্ট মাসে রুমা, থানচি, বান্দরবান, বগা লেক ও কেওক্রাডং। আরেকটি বাইক ভ্রমণ ছিল গত ২ মার্চ, খাগড়াছড়ি, সাজেক ভ্যালি। সবগুলো ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয় গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে।

বিজ্ঞাপন
এই দুটি ট্যুর ছিল আমার জীবনের সেরা এবং রোমাঞ্চকর ভ্রমণ। যখন পাহাড়ের রাস্তায় প্রবেশ করি, তখন দেখতে থাকি পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকেবেঁকে চলা পথে ছোট ছোট জুম ঘর আর সবুজে ঘেরা পাহাড়ের সৌন্দর্য। আর নানা জাতের ফলমূল আর পাহাড়ি গাছের দৃশ্য। উঁচুনিচু পাহাড়ে মোটরবাইক নিয়ে আমরা বেশ কজন বাইকারদের নিয়ে এগিয়ে চলতে থাকি।
যতদূর যাই ততই মুগ্ধ হতে থাকি বিশেষ করে খাগড়াছড়ি থেকে যখন সাজেকের পথ চলতে থাকি ততই বিমুগ্ধ হতে থাকি। এ যেন সৃষ্টিকর্তার অপার এক সৃষ্টি। যা দেখে যে কেউ পাহাড়ের প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে।

শ্রীপুর ট্যুরিজম বাইকার্স যুব উন্নয়ন সংঘের পক্ষ থেকে সঙ্গে ছিলেন সংগঠনটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রুহুল আমিন। তার তত্ত্বাবধানে প্রতিটি বাইকের পিছনে সিরিয়ালের স্টিকার দিয়ে দেওয়া হয় যেন একজন বাইকার অপরজনকে অনুসরণ করতে পারে। বাইকের প্রথম সারিতে ছিলেন রুহুল আমিন এবং সর্বশেষে ছিলেন আজিজুল ইসলাম। একজন সামনের রাস্তার দিক নির্দেশনা প্রদান করছিলেন অপরজন পিছনের সারির সকল বাইকের সিরিয়াল ঠিক রেখে পথ চলছিল।
সকলের গায়ে ছিল লাল কালো রংয়ের পোশাক। পাহাড়ি রাস্তায় যখন সারি সারি বাইক চলছিল, আশেপাশের মানুষ আর অন্যান্য পর্যটকদের নজর ছিল আমাদের দিকেই। আর আমার তো মনে হচ্ছিল পৃথিবীর স্বর্গ রাজ্যে প্রবেশ করছি। বিশেষ করে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার পথে যে রাস্তাটুকু ছিল সেই রাস্তাটুকু ছিল আরও বেশি রোমাঞ্চকর। আমাদের শৃঙ্খলা দেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনও প্রশংসা করছেন। কখন যে পথ শেষ হয়ে গেল কেউ টেরই পায়নি। মেঘের রাজ্য সাজেকে প্রবেশের ঠিক আগে একটি উঁচু চূড়া রয়েছে এটি ছিল বেশ রোমাঞ্চকর।

আমাদের প্রধান গন্তব্য ছিল সাজেক ভ্যালি আর কংলাক পাহাড়। বিকেলের স্কট ধরে আমরা সন্ধ্যার আগেই সাজেকে পৌঁছি। সন্ধ্যায় হ্যালিপ্যাড চলে যাই। আর রাতের সময়টা যার যার মতো করে উপভোগ করি।
ভোরে উঠে চলে যাই কংলাক পাহাড়ে, রিসোর্ট থেকে বাইকে করেই কংলাকের নিচ পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে পাহাড়ে উঠে ভোরের সকালটা উপভোগ করি। এক কথায় চোখ ধাঁধানো, মন জুড়ানো পাহাড়ের সেই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছি দুদিন। অবশেষে সাজেক ভ্যালির ভ্রমণ শেষে উচ্ছ্বসিত সবাই।
এ ব্যাপারে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আরিফ মন্ডল জানান, শ্রীপুর ট্যুরিজমের পথ চলা শুরু হয় ২০১০ সালে। ইতোমধ্যে এই সংগঠনটি বাইকে করে দেশের প্রায় ৬৪টি জেলা ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ পর্বত কেওক্রাডং, তাজিংঢং সহ বিভিন্ন পর্বত জয় করেছেন এবং দেশ ও বিদেশে নিয়মিত ভ্রমণ করে যাচ্ছেন।
লেখক: সদস্য সচিব, ইউনিভার্সিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (UJF)
এনএম

