ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে কিংবা স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন অনেকেই চিনির পরিবর্তে ভরসা রাখেন জিরো ক্যালোরি সুইটেনারে। তবে তাদের জন্য এবার দুঃসংবাদ দিচ্ছেন গবেষকরা। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত জিরো ক্যালোরি পণ্য অর্থাৎ ‘এরিথ্রিটল’ গ্রহণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে।
বহুল ব্যবহৃত এ খাদ্যপণ্যের সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধা, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এমনকি মৃত্যুঝুঁকিরও যোগাযোগ লক্ষ্য করা গেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) নেচার মেডিসিন জার্নালে ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এতে বলা হয়, হৃদরোগের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে যারা ডায়াবেটিসের মতো ঝুঁকিপূর্ণ সমস্যায় ভুগছেন, তাদের রক্তে সর্বোচ্চ মাত্রায় এরিথ্রিটল থাকলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়।
গবেষক দলের প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক লার্নার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওভাসকুলার ডায়াগনস্টিকস অ্যান্ড প্রিভেনশন সেন্টারের পরিচালক স্ট্যানলি হ্যাজেন বলেন, জিরো ক্যালরির এ খাদ্য উপাদানে ‘ঝুঁকির মাত্রা কম নয়’।
আরও কিছু ল্যাব ও প্রাণীর ওপর গবেষণার তথ্য এই গবেষণাপত্রে তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, এরিথ্রিটল এর কারণে রক্তের প্লাটিলেট খুব দ্রুত জমাট বাঁধে। আর সেই জমাট বাঁধা রক্তের দলা হৃদপিণ্ডে পৌঁছালে হার্ট অ্যাটাক অথবা মস্তিষ্কে পৌঁছালে স্ট্রোক হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে ডেনভারের ন্যাশনাল জিউশ হেলথের ‘কার্ডিওভাসকুলার প্রিভেনশন অ্যান্ড ওয়েলনেস’ বিভাগের পরিচালক অ্যান্ড্রু ফ্রিম্যান বলেন, গবেষণার এই ফলাফল একটি সতর্ক বার্তা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে যে, এরিথ্রিটল ব্যবহারে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে সতর্ক থাকতে চাইলে খাবারে আপাতত এরিথ্রিটল না রাখাই ভালো।’
ক্যালরি কন্ট্রোল কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রবার্ট র্যানকিন সিএনএনকে বলেছেন, খাদ্য ও পানীয়তে ব্যবহৃত এরিথ্রিটলের মতো কম-ক্যালরির মিষ্টি জাতীয় উপাদান যে নিরাপদ, গত কয়েক দশকের গবেষণাগুলোতে সে কথাই বলা হয়েছে। তার ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোও এরিথ্রিটল ব্যবহৃত খাবারের অনুমোদন দিয়ে আসছিল। কিন্তু নতুন গবেষণায় যা বলা হচ্ছে, তা এতদিনের সেই ধারণার উল্টো।
তিনি মনে করেন যেহেতু এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা আগে থেকেই হৃদরোগের ঝুঁকিতে ছিলেন, সেহেতু নতুন এ গবেষণার ফলাফল জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করা উচিত নয়।
ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব পলিওল প্রডিউসার এ বিষয়ে সিএনএনের কাছে মন্তব্য জানায়নি। তারা বলেছে, ওই গবেষণা প্রতিবেদন তারা পর্যালোচনা করে দেখেনি।
স্ট্যানলি হ্যাজেনের গবেষণার একটি সহজ লক্ষ্য ছিল। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল একজন ব্যক্তির রক্তে কোনো রাসায়নিক বা অন্য কোনো উপাদান রয়েছে কিনা, যেটি পরবর্তী তিন বছরে তার হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা মৃত্যুর ঝুঁকির আভাস দিতে পারে; সেটি যাচাই করে দেখা।
এই কারণে ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের রক্তের ১ হাজার ১৫৭টি নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। ফলাফল যা মেলে যা ছিল ‘অপ্রত্যাশিত’। গবেষকদল একটি উপাদান খুঁজে পান যেটি ঝুঁকি বাড়ানো ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শুরুতে তারা এই রাসায়নিকের উৎস খুঁজতে চেষ্টা করেন। এতেই দেখা যায় এটি আসলে এরিথ্রিটল, একটি সুইটেনার।
এরিথ্রিটল কী?
এরিথ্রিটল হলো সরবিটল ও জাইলিটলের মতো এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট। এটি সুগার অ্যালকোহল নামে পরিচিত। প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ফল ও সবজিতে এই উপাদানটি পাওয়া যায়। এতে চিনির মিষ্টির প্রায় ৭০ শতাংশ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একে জিরো ক্যালরি হিসেবে মনে করেন।
প্রচুর পরিমাণে এরিথ্রিটল প্রস্তুত করা হয়, যেগুলো ব্লাড সুগার বাড়ায় না এবং অন্যান্য সুগার অ্যালকোহলের চেয়ে কম রেচক প্রভাব ফেলে। চিনির বিকল্প হিসেবে খাদ্যপণ্যে এটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের খাদ্যপণ্যে চিনির বিকল্প হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
এনএম