বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বিনা পুঁজিতে যেভাবে উদ্যোক্তা হলেন ইভেন্ট প্ল্যানার তিতুমী

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৫১ এএম

শেয়ার করুন:

বিনা পুঁজিতে যেভাবে উদ্যোক্তা হলেন ইভেন্ট প্ল্যানার তিতুমী

জেদ কখনো মানুষের সব কেড়ে নেয়। কখনোবা সফলতার দুয়ারে নিয়ে যায়। নিজে থেকে কিছু করার চেষ্টার জেদ থাকলে বিজয়ী হওয়া সুনিশ্চিত। তাসমিয়া আরিফিন তিতুমীর ক্ষেত্রেও জেদটা ভালোই ফল দিয়েছে। তাকে এনে দিয়েছে উদ্যোক্তা তকমা। ইভেন্ট ডেকোরেশন প্ল্যাটফর্ম ‘ড্রিমি আই ইভেন্টস অ্যান্ড ওয়েডিং’ এর কর্ণধার তিনি। কীভাবে উদ্যোক্তা হলেন এই তরুণী। জানালেন গল্প আড্ডায়। 

তিতুমীর জন্ম মাদারীপুরে। তবে ২ বছর বয়স থেকেই ঢাকার বাসিন্দা তিনি। মতিঝিল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক শেষ করেছেন। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন মতিঝিল আইডিয়াল কলেজে। বর্তমানে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক পড়ছেন। শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। 


বিজ্ঞাপন


titumi

বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা করছেন তিতুমী। সঙ্গে চালাচ্ছেন টিউশনও। কীভাবে ব্যবসা শুরু করলেন? স্মৃতিচারণ করে তিতুমি বলে, ‘কলেজে থাকতে এক বান্ধবী ফেসবুকে একটি নারীদের গ্রুপে অ্যাড করে। সেখানে প্রথম পরিচিত এক আপুকে দেখি একটি প্রপোজাল স্টেজ ডেকোরেশনের জিনিস কিনতে চাচ্ছিল। বিকেলে সেই ডেকোরেশন পোস্ট করেন তিনি। আমার কাছে দেখে ভালো লাগে। মনে হয় কাজটি খুব মজার। নিজের মনমতো সাজাবো আর ঘুরবো। সেই থেকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট/ইভেন্ট প্ল্যানার এই বিষয়টাতে অবগত হই।’

কলেজের প্রথম বর্ষ থেকেই কাজ নিয়ে ভাবতে থাকেন এই তরুণী। কী করে শুরু করা যায় তার উপায় খুঁজেন। এরপর নারীদের একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত হন যেই গ্রুপের মূল লক্ষ্য ছিল অনেকজনের ইনভেস্ট নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা। সেখানে অবশ্য কোনো ইনভেস্ট দেননি তিতুমী। যুক্ত হন ভলান্টিয়ার হিসেবে। সেই সূত্র ধরেই একটি ওয়েডিং ইভেন্টে যান। সেখান থেকে বাস্তব ধারণা পান কীভাবে কাজ শুরু করা যায়। 

titumi


বিজ্ঞাপন


তিতুমী বলেন, ‘আমার স্কুলের এক বড় আপুকেও ইভেন্টের কাজ করতে দেখি। আপুকে বলি যে আপু তোমার সাথে কাজ করবো। কোনো প্রফিট বা পারিশ্রমিক দিতে হবে না। শুধু কাজ শিখবো। এই কাজটা আমার অনেক ভালো লাগে। কিন্তু আপু খুব ইচ্ছা আগ্রহ দেখাল না। বলল, ‘এটা শখ হলে হবে না, প্যাশন থাকতে হবে। তুই কাজ এনে দে তাহলে তোকে কাজে নিব।’ আপুকে বলেছিলাম, আমি কাজ পেলে তো তোমার সঙ্গে কাজ করার কথা বলতাম না।’

‘সেদিন খুব জিদ লাগে। প্রতিজ্ঞা করি যে আমি একাই ইভেন্ট শুরু করবো। যে কথা সেই কাজ। সেই দিনের পর আমি রাত দিন বসে কাজ খুঁজতাম আর তখনই পৌসি আপু একটি প্রোমোশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজের জন্য লোক খুঁজছিল। সামনে পিছনে কিছু না ভেবে রাত ১ টায় আপুকে কল দিয়ে আমার কাজ শুরু করার ইচ্ছে আছে সেটা জানাই। আপুও রাজি হয়। তারপর শুরু হলো কাজ শুরু করা। (যদিও আপুর সেই কাজটা হয় নাই কিন্তু তার আগেই আমি গ্রুপ থেকে ৭ ডিসেম্বর মানে আমি একদম আটঘাট বেঁধে মাঠে নামার ৭-১০ দিনের মধ্যে ইভেন্ট পাই। 

titumi

শূন্য পুঁজিতে কাজ শুরু করেন তিতুমী। ক্লায়েন্ট থেকে ১ হাজার টাকা অ্যাডভান্স নিয়ে কাজ করেছিলেন। প্রথম কাজে ১২০০ টাকা লাভ করে মহাখুশি হন তিনি। আগ্রহ পান কাজের। এরপর পেজ ছাড়াই পরপর ৩টি কাজ পেয়ে যান। এক কাছের বন্ধুকে পার্টনার হিসেবে নিয়ে কাজ শুরু করলেও হিসেবজনিত ঝামেলার কারণে তাকে বাদ দেন। পরবর্তীতে তার বিশেষ বন্ধুকে সাথে নিয়ে কাজ শুরু করেন। 

২০১৮ সালের শেষদিকে ব্যবসায়ী জগতে সূচনা হয় তিতুমীর। এরপর ২০১৯ সালে ১৩ জানুয়ারি নিজের জন্মদিনে একটি ফেসবুক পেজ খোলেন তিনি। বর্তমানে সফলতার সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছেন এই তরুণী। চার বছরে তার করা কাজের পরিমাণ ৪০০ এরও বেশি। 

titumi

একপ্রকার বিনা মূলধনে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে তিতুমীর আয় মাসে ২০,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা। পড়াশোনা, টিউশন না থাকলে এই আয় আরও বেশি হতো বলে মনে করেন তিনি। এই উদ্যোক্তা মনে করেন, ব্যবসাক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের সঙ্গে ভালো আচরণ করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাজের শুরু মা আর ছোটবোনের সমর্থন থাকলেও বাবার সমর্থন পাননি তিতুমী। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিজনেসের সঙ্গে পরিচিত না থাকায় তার কাছে মনে হতো এই কাজটি ছোট কাজ। কারণ এতে মানুষ বাসা পরিষ্কার করা, সাজানো ইত্যাদি করতে হয়। 

কখনো কি কাজ থামিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়েছে? প্রশ্নের জবাবে তিতুমী বলেন, ‘থেমে যাওয়ার জন্য মাঠে নামিনি। এইটাই সবসময় মনে রেখেছিলাম। তাই থামবো কোনো দিন তা ভাবিনি।’

titumi

কাজ নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন এই তরুণী। নিজের একটা অফিস হবে, কোম্পানি একটি ব্র‍্যান্ড হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি পাবে এমন দিনের অপেক্ষায় কাজ করে যেতে চান তিনি। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর