বসন্ত মুখর আজি দক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনে বনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি। আজ পহেলা ফাল্গুন ১৪২৯। শীতের জড়তা কাটিয়ে প্রকৃতি তার নিজস্ব রূপে ফিরতে শুরু করেছে। আর ঠিক এসময়ই সকল মলিনতা পেছনে ফেলে, নতুন করে উজ্জীবিত হওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের আগমন। বসন্তের এ সূচনা লগ্নে প্রকৃতি যেন আহ্বান করছে তাকে বরণ করে নিতে।
ঋতুরাজ বসন্তকে ঘিরে উদযাপন চলছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। প্রথমবারের মতো সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছে এমন একটি উৎসব। তাই উৎসবের রেশও রয়েছে এবার ভিন্ন মাত্রায়। উৎসবকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ছিল জোরদার। সাংবাদিকতা বিভাগের আবর্তন ৪ ও ৫ এর একান্ত প্রচেষ্টায় আয়োজিত হচ্ছে এ উৎসব।
বিজ্ঞাপন
বাঙালি সংস্কৃতির নিজস্ব এ উৎসবকে প্রাণবন্ত করতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। আগের দিন থেকেই শ্রেণীকক্ষ ও ক্যাম্পাস সাজানো থেকে শুরু করে পরবর্তী সকল আয়োজনের জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে শিক্ষার্থীরা। উৎসবকে ঘিরে নানা আকারের পোস্টার, ছবি তোলার ফ্রেম ও সরঞ্জাম বানানোর কাজে সকলের অংশগ্রহণ এক অনন্য মাত্রা যোগ করে। অনুষ্ঠানের দিন সকাল থেকেই বিভাগে পরিলক্ষিত হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। একে একে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে শুরু হয় রঙিন দিনের।
পহেলা ফাল্গুনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ছিল শাড়ি-পাঞ্জাবি দিবস। কমলা, হলুদ ও বাসন্তী শাড়ি-পাঞ্জাবি পরিহিত শিক্ষার্থীদের পদচারণায় প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কোণা।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দুপুর ১২ টায় এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্ব শুরু হয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে। একে একে পরিবেশন করা হয় গান, আবৃত্তি ও নৃত্য। এক অন্যরকম আবেশে ভরে ওঠে স্নিগ্ধ দিনটি।

উল্লেখ্য, সাংবাদিকতা বিভাগ আয়োজিত এ বসন্ত বরণ উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ‘আসছে ফাল্গুনে আমরা দ্বিগুণ হবো, প্রজ্ঞায়, বোধে, বুদ্ধিতে।’ জহির রায়হানের কালজয়ী উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’ অবলম্বনেই এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এ প্রসঙ্গে উৎসব আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক শিক্ষার্থী বলেন, ফাল্গুনের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক অনেক পুরনো। আমাদের ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হয় ফাল্গুন মাসে। জহির রায়হানের কালজয়ী উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’ অবলম্বনেই এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়। জহির রায়হানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি অতীতের মত ভবিষ্যতেও যেন বাঙালি জাতি ফাল্গুনের প্রেরণায় তেজদীপ্ত হয়ে পথ চলে- এ বার্তা দেয়াই ছিল এ প্রতিপাদ্যের মূল লক্ষ্য।
বসন্ত উদযাপন নিয়ে গণযোগাযোগ ও সংবাদিকতা বিভাগের আবর্তন-৪ এর শিক্ষার্থী মেহেদী তন্ময় বলেন, এ বছর নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বিউপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফাল্গুন উদযাপন করা হয়নি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি।
আবর্তন- ৫ এর শিক্ষার্থী ইলমা ওয়াসীয়া বলেন, করোনা অবসানের পর বিভিন্ন কারণে বিউপির উৎসব-আয়োজনগুলো আগের তুলনায় কমে গিয়েছে। এরই মধ্যে সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে করা এই বসন্ত বরণ উৎসব আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। আশা রাখি, সামনের দিনগুলোতেও বিভিন্ন উৎসব পার্বণের মধ্য দিয়ে আমরা ক্যাম্পাসকে প্রাণবন্ত রাখতে পারব।
জীবনযুদ্ধে ক্ষুদ্র একটি দিন, ছোট একটি মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে স্মৃতির কেন্দ্রবিন্দু। এরকম সাধারণ মুহূর্তগুলোই অসাধারণ করে তোলে আমাদের শিক্ষাজীবনের শেষ বছরগুলোকে। বিভাগের বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র- জুনিয়র এর মেলবন্ধনের দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরা দেয়। সকলের সাথে আনন্দ ভাগাভাগির এসময় গুলো জীবনে বারবার আসুক। উদযাপিত হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি দিন, ক্যাম্পাসগুলো মুখরিত হোক শিক্ষার্থীদের কোলাহলে, যত্নে থাকুক বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার সম্পর্কগুলো।
লেখক:
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস।
এনএম/এজেড

