বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

স্বামীর সহযোগিতায় হেমার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

স্বামীর সহযোগিতায় হেমার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প

সফলতা কখনো হুট করে জীবনে চলে আসে না। তাকে অর্জন করে নিতে হয়। কর্মের পেছনে লেগে থাকতে হয় একাগ্র চিত্তে। তাহলেই একসময় সফল হওয়া যায়। ঢাকার মেয়ে হেমা চৌধুরী। যদিও এখন থাকেন খুলনা। জীবনের বাঁধাধরা ফ্রেম ভেঙে যিনি হয়েছেন অনলাইন উদ্যোক্তা। নারীদের পোশাকের অনলাইন প্রতিষ্ঠান ‘ইমপোর্টেড ড্রেসেস বাই হেমা’র কর্ণধার এই নারীর সঙ্গে আড্ডা হয় ঢাকা মেইলের। 

হেমার জন্ম ঢাকায়। ছেলেবেলাও এখানেই কেটেছে। তবে বাবা ট্রান্সফারের কারণে ২০০৪ সালে চলে যেতে হয় খুলনা। এই স্মৃতিটি হেমার কাছে কষ্টের। মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলেন ঢাকা ছেড়ে হঠাৎ খুলনায় যাওয়ায়। 


বিজ্ঞাপন


hema

বর্তমানে হেমা এক সন্তানের জননী। সংসার সামলে অনলাইন ব্যবসা সামলান তিনি। কীভাবে ব্যবসায় এলেন জানতে চাই তার কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বিয়ে হয় ২০১০ এ যখন আমার বয়স মাত্র ১৭ ছিল এবং আমার স্বামীর বয়স ছিল ২১। আমরা দুজনই তখন স্টুডেন্ট ছিলাম। আমার স্বামী তখন পার্ট টাইম জব করত আর আমি মাত্র ফ্যাশন ডিজাইনে ভর্তি হয়েছি। দুজনের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো থাকায় সবাই ভাবতো আমরা আর্থিকভাবে ভালো অবস্থানে আছি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমরা দুজনে অনেক বেশি আর্থিক টানাপোড়নে ছিলাম।’ 

‘২০১৪ সালে যখন আমার অনার্স কমপ্লিট হয়ে যায় তখন আমি আমার স্বামী এবং একজন পার্টনার মিলে একটা রেস্টুরেন্ট ওপেন করি। একটি বাচ্চাকে মা যেভাবে আগলে রাখে আমিও ঠিক তেমনি ডেডিকেটেড ছিলাম রেস্টুরেন্টটার প্রতি। একটা কাঁটা চামচ থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্টের পুরো ডেকোরেশন আমি আর আমার স্বামী দুজনে মিলে করি। ক্যাশ সামলানো, বাজার করা, কিচেনে শেফদের হেল্প করা থেকে শুরু করে কাস্টমারদের টেবিলে খাবার সার্ভ করা— সবই আমরা দুইজন করতাম’- যোগ করেন হেমা। 

hema


বিজ্ঞাপন


হঠাৎ করেই সাজানো সবকিছু বদলে যায় হেমার। ১ বছরের মাথায় হঠাৎ তাদের পার্টনার পালিয়ে যায়। অনেকটা বাধ্য হয়েই বন্ধ করে দিতে হয় ব্যবসা। সেইসঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় আয়ের একমাত্র উৎস। সারাদিন ব্যস্ত থাকা হেমা ঘরে বসে থাকতে থাকতে অবসাদে পড়ে যেতে শুরু করেন। 

সেইসময় এই তরুণী অনুভব করেন যে ব্যবসা বিষয়টি তার ভেতর ঢুকে গেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত মূলধন না থাকায় নতুন করে কিছু শুরু করাও সম্ভব হচ্ছিল না। এরই মধ্যে তার স্বামী ভালো চাকরি হয়। হেমাও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ শুরু করেন। 

hema

সব ঠিক চললেও যেন কীসের ঘাটতি ছিল। কিছুতে মন টিকছিল না হেমার। কিছু একটা যেন থেকেও নেই। তখন তার মা তাকে উৎসাহ দিতে লাগলো অনলাইন ব্যবসা শুরু করার জন্য। একসময় মায়ের কথায় রাজী হন হেমা। কিন্তু মূলধন কোথায়? ডিলার কোথায় পাবেন, কী নিয়ে কাজ করবেন? এমন নানা প্রশ্ন উঁকি দেয় মনে। এক্ষেত্রে মা বুদ্ধি দেন, যেহেতু তার ইন্ডিয়ায় প্রচুর যাতায়াত ছিল, সে যেন ইন্ডিয়ান পণ্য নিয়ে কাজ করে। একইসঙ্গে মেয়েকে ৫০ হাজার টাকাও দিলেন। এই ৫০ হাজার টাকা মূলধনেই কাজ শুরু করেন হেমা। 

২০১৭ সালের জুন থেকে ব্যবসায়ী খাতায় নাম লেখান হেমা। তার প্রতিষ্ঠানে ইন্ডিয়ান পোশাক, শাড়ি, গয়না পাওয়া যায়। গুজরাট, চেন্নাই, দিল্লী, জামসেদপুর, ইনদৌর, কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে সরাসরি পণ্য এনে বিক্রি করেন তিনি। 

hema

অন্যদের থেকে হেমার প্রতিষ্ঠান কেন আলাদা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় লেটেস্ট ট্রেন্ড ফলো করি। একটু মার্জিত পোশাক নির্বাচন করি যা সব বয়সের নারীরা পরতে পারবে। তাছাড়া সবসময় আমার জায়গা থেকে সৎ থাকার চেষ্টা করি। অনলাইনে মানুষজন কেনাকাটা করতে গেলেই চিন্তা করে ছবির মত হবে কিনা, টাকাটা মার যাবে কিনা। আমি সেদিকে পুরোপুরি সচেতন থাকতে চেষ্টা করি। 

৫০ হাজার টাকা মূলধনে শুরু করলেও বর্তমানে হেমার আয় মাসে ৩৫-৪০ হাজার। কাজ করতে গিয়ে অনেক ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। ব্যবসার শুরু থেকে বর্তমান দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে হেমা বলেন, ‘আমি আমার ব্যবসার ব্যাপারে খুবই নিবেদিত প্রাণ। ২০২০ এ আমি যখন প্রেগন্যান্ট, ডেলিভারির চারদিন আগে নিজে দাঁড়িয়ে লাইভ করেছি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দুইদিন আগেও নিজে গিয়ে কাস্টমারের বাসায় পার্সেল ডেলিভারি করে এসেছি।’

hema

‘যখন আমাকে হাসপাতাল এ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, ডেলিভারির পেইনে কাতর আমি, তখনও আমার ভাবনায় ছিল কাস্টোমারদের পার্সেল। কারণ তার ৫ দিন পরেই ঈদ ছিল। এমনকি সিজারের ২ দিন পর কাস্টোমারদের আমি হাসপাতাল থেকে পার্সেল ডেলিভারি করেছি’— যোগ করেন তিনি।

এমবিএ শেষে একটি বেসরকারি কলেজের লেকচারার হিসেবে জয়েন করেন হেমা। কিন্তু কিছুতেই মন বসছিল না। মনে হচ্ছিল এই জায়গাটা তার জন্য নয়। ব্যবসায় আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন তিনি। স্বামীর উৎসাহ আর অনুপ্রেরণায় উদ্যোক্তা হয়েছেন হেমা। সামনের দিনগুলোতে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চান তিনি। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর