শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ওয়াই (Y) আকৃতির সেতু/ টানেল: ঢাকা শহরের ওপর যেমন প্রভাব ফেলবে

মো. শাহিন রেজা
প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:২২ এএম

শেয়ার করুন:

ওয়াই (Y) আকৃতির সেতু/ টানেল: ঢাকা শহরের ওপর যেমন প্রভাব ফেলবে

কয়েক মাস আগে পাবনার ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের এক শিক্ষকের সঙ্গে পাবনার উন্নয়ন নিয়ে আলাপ করেছিলাম। আমাদের আলোচনার বেশি অংশ জুড়ে ছিল মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও পাবনার কাজিরহাটকে সংযুক্ত করা ওয়াই আকৃতির সেতু/ টানেল নির্মাণ। এই পয়েন্টে সেতু/ টানেল নির্মাণ হলে বৃহত্তর পাবনা, যশোর, কুষ্টিয়া জেলার মানুষ অতি সহজে ঢাকা শহরে যাতায়াত পারবে। পাবনা থেকে কাজিরহাট এসে নদী পার হয়ে সহজেই ঢাকাতে আসা যায়। আমি একবার এই পথ দিয়ে ঢাকা এসেছি। 

বর্তমান সরকার টানা তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছে। সরকারের নেওয়া অনেক উন্নয়ন কাজের মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন বেশ দৃশ্যমান। ঢাকা শহরে নতুন নতুন ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, উড়ালপথ, পদ্মা সেতু, ঢাকা-ভাঙা এক্সেপ্রেসওয়ে, ঢাকা-যশোর রেলপথ, ঢাকা চন্দ্রা হয়ে উত্তর বঙ্গে ফোরলেন যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। 


বিজ্ঞাপন


তবে জনসংখ্যার তুলনায় ঢাকার আয়তন কম। অনেক ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে ঢাকা শহর দিন দিন বসবাসের অনুপযোগী হচ্ছে। ফলে ঢাকা শহরকে বাঁচতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ এখন খুব জরুরি। তা না হলে পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হবে ঢাকা। সেতু, বড় বড় মহাসড়ক নির্মাণ হলেও ঢাকার ভিতরে প্রবেশ মুখে সমস্যা রয়েই গেছে। কয়েক মাস আগে খুলনা থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টায় ঢাকা আসলেও প্রবেশ পথে অনেক সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়েছিল।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় খুলনা, বরিশাল ও যশোর অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। এখন এই অঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্প কারখানা তৈরি করতে হবে। ফলে কর্মসংস্থানের জন্য মানুষ আর ঢাকামুখি হবে না। এতে শহরে জনসংখ্যার চাপ কমবে।

এ বছরের ডিসি সম্মেলনে পাবনার ডিসি ওয়াই আকৃতির সেতু বা টানেল নির্মাণের কথা বলেছেন। সরকার উদ্যোগ নিলে জনগণ এর সুফল ভোগ করবে। কারণ এই সেতু বা টানেল নির্মাণ হলে বৃহত্তর পাবনা সহ কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর জেলার মানুষ স্বল্প সময়ে ঢাকা শহরে যাতায়াত করতে পারবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে এ অঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে যা কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। পাবনা ইপিজেড ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এর সুফল ভোগ করবে। অন্যদিকে, যমুনা সেতুর উপর চাপ কমবে। চন্দ্রা থেকে উত্তর বঙ্গেগামী পথে যানজট হ্রাস পাবে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সড়ক পথের সঙ্গে রেল পথের দিকে নজর দিতে হবে। ঢাকা থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। ঢাকা, সাভার ও গাজীপুর থেকে শিল্প কারখানা পরিকল্পিত ভাবে মানিকগঞ্জ ও নদীর ওপারের জেলা গুলোতে স্থানান্তর করতে হবে। পাটুরিয়াতে স্যাটেলাইট শহর তৈরি করতে হবে যেখানে বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম, সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র নির্মাণ করতে করে বসবাসরত মানুষের সব ধরনের সুবিধার আওতায় আনা যায়। 


বিজ্ঞাপন


রেলে স্বল্প খরচে ঢাকা থেকে সহজেই যাতায়াত করা যাবে। এছাড়া নবীনগর থেকে পাটুরিয়াগামী মহাসড়কটি ফোর লেনে উন্নতকরণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব। এর ফলে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জনসংখ্যা কমবে। কারণ কাজের জন্য শহরের থাকার প্রয়োজন পড়বে না। অল্প খরচে ঢাকা শহরের বাইরে থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত করা যাবে। গণপরিবহন ও ট্রেন যাতে যাত্রীবান্ধব হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। সাভারে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা করতে পারবে।

ওয়াই আকৃতির সেতু বা টানেল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী শহরের মধ্যে সেতুবন্ধনে কাজ করবে। বৃহত্তর যশোর, কুষ্টিয়া অঞ্চলে উৎপাদিত সবজিসহ বিভিন্ন কাঁচা মাল, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন করা সম্ভব হবে। সরকার যশোরে ইপিজেড তৈরির পরিকল্পনা করছে। যশোর ছাড়াও কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, সাতক্ষীরাতে ইপিজেড তৈরি করতে পারে। জেলা শহরগুলোতে আইটি পার্ক, বিভিন্ন শিল্প কারখানা তৈরি উদ্যোগ নিতে হবে। দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। 

ফলে বেসরকারি পর্যায়ে অনেক কলকারখানা, ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে। এদিকে, পাটুরিয়া থেকে রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত রেলপথ রয়েছে। এই একই পথ ভাঙা এবং কুষ্টিয়া, ঈশ্বরদী হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত গেছে। ওয়াই আকৃতির সেতু বা টানেলে রেলপথ যুক্ত করে ঢাকার সাথে রেল যোগাযোগ করা সম্ভব। এতে সরাসরি রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া জেলা শহর ঢাকার সাথে রেল পথে যুক্ত হবে। এছাড়াও ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুর শহরকে রেলপথের আওতায় আনতে হবে। ফলে এ অঞ্চলের প্রতিটি জেলা শহরে রেল যোগাযোগ বিস্তৃত হবে যা যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করবে।

দ্রুত সময়ে, যশোর থেকে উত্তর বঙ্গের সড়ক পথ ফোর লেন, যশোর থেকে চৌগাছা মহেশপুর হয়ে দর্শনা রেলপথ নির্মাণ শেষ করতে হবে। এছাড়াও পাটুরিয়া থেকে ফরিদপুর মাগুরা হয়ে ঝিনাইদহ সড়ক পথ ফোর লেন, কালীগঞ্জ থেকে কোটচাঁদপুর জীবননগর হয়ে চুয়াডাঙ্গা সড়ক প্রশস্তকরণ ও আঞ্চলিক সড়ক মেরামত ও প্রশস্তকরণ করে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ ঢাকা বা অন্য শহরে কাজের জন্য যাবে না। 

নিজ জেলা বা উপজেলাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। ফলে, ঢাকা শহরের উপর অতিরিক্ত চাপ কমবে। একই ভাবে প্রতিটি অঞ্চলে মানুষ কর্মের জন্য ঢাকা যাতে না আসতে হয় এমন ব্যবস্থা করতে হবে। যা ঢাকার যানজট ও পরিবেশগত উন্নত সাধন করবে। এছাড়াও, ঢাকার বাস টার্মিনালগুলো শহরের বাইরে স্থানান্তর, টার্মিনাল থেকে শহরে প্রবেশে মেট্রোরেল ও সড়ক পথের যোগাযোগ উন্নয়ন করতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভালো মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে।

ধারনা করা যায়, ওয়াই আকৃতির সেতু বা টানেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করার সাথে দেশের জিডিপিতে অবদান রাখবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করবে। সরকার অতি দ্রুত সেতু বা টানেল নির্মাণে উদ্যোগ নিবে আশা করি।

লেখক: প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর