রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

একজন হুমায়ূন আহমেদ এবং আমি

তুনা ফেরদৌসী
প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২২, ১১:৫৩ এএম

শেয়ার করুন:

একজন হুমায়ূন আহমেদ এবং আমি

সম্ভবত তখন ক্লাস থ্রি/ফোরে পড়ি। একদিন শুনলাম আমার আম্মু খুব ভয় পাচ্ছেন। তিনি রান্নাঘরে একা কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। ওয়াশরুমে গেলে দরজার সামনে কাউকে না কাউকে দাঁড় করিয়ে রাখছেন। রাতে ভয় পেয়ে চিৎকার করে জেগে উঠছেন। বিশেষকরে আমাকেই তিনি সবসময় কাছে কাছে রাখতেন। 

কারণ জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছিলাম যে তিনি হুমায়ূন আহমেদ নামে কোনো এক লেখকের একটা গল্প পড়ে খুব ভয় পেয়েছেন। গল্পটার নাম ছিল ‘নিশীথিনী’। তখন সেই শিশু মনে নামটা গেঁথে গিয়েছিল। গল্পটার একটু-আধটু আম্মুর কাছে শুনে আমারও সে কী ভয় লেগেছিল!


বিজ্ঞাপন


humayun

এর কয়েকদিন পরে আম্মুর কাছেই সেই একই লেখকের লেখা উপন্যাস ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ এর খণ্ডাংশ শুনেছিলাম। আমার মা আমাকে ঐসব বড়োদের বই পড়তে দিতেন না ঠিকই কিন্তু সেসব গল্পের সুন্দর অংশগুলো আমার উপযোগী করে আমাকে শোনাতেন। মুগ্ধ হয়েছিলাম শ্রাবণ মেঘের দিন শুনে। নিজেকে গল্পের ছোট মেয়ের চরিত্রে ভাবতে ভালো লাগত।

সেই সময়েই ভিসিআরে ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকটাও দেখেছিলাম। যেহেতু দেশের বাইরে থাকতাম তাই বাংলাদেশের অনেক নাটকই আমরা ভিডিও ক্যাসেটে দেখতাম। সে যাইহোক, তখন থেকেই নিজের অজান্তেই হুমায়ূন ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।

tuna


বিজ্ঞাপন


এর কিছুদিন পরে আমি প্রথম একটা হুমায়ূন আহমেদের বই হাতে নিয়ে পড়ার অনুমতি পেলাম। বইটির নাম ছিল ‘ভূত ভূতং ভূতৌ’। তখন থেকেই হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলার শুরু। এরপর একে একে পড়তে লাগলাম এলেবেলে, মজার ভূত, বোতল ভূত ইত্যাদি। 

ধীরে ধীরে আমার বয়স যেমন বাড়তে লাগল, হুমায়ূন প্রীতিও সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকল। একটা সময় অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার চরিত্রের অনেক বৈশিষ্ট্যে হুমায়ূন আহমেদের ছায়া পড়েছে। এই যে আমি বৃষ্টি দেখলে খুশিতে পাগল পাগল হয়ে যাই, পূর্ণ চাঁদের আলোয় চন্দ্রাহত হই, সাগরের ঢেউ পায়ে এসে আছড়ে পড়লে আবেগে আপ্লুত হই– এসবকিছুতে কি হুমায়ূন আহমেদের প্রভাব নেই? 

শুধু আমিই নই, আমাদের জেনারেশনের অনেকের মাঝেই হুমায়ূন আহমেদের ছায়া পড়ে আছে। একজন লেখক কতটা জাদুকরি হলে পুরো একটা জেনারেশনের মনস্তত্বে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন তা ভাবতেই অবাক লাগে।

humayun

একই মানুষ তার লেখনি দিয়ে কখনও পাঠককে হাসিয়েছেন, কখনও কাঁদিয়েছেন, কখনও ভয় দেখিয়েছেন, কখনোবা করেছেন বিস্মিত। তিনি যেমন পূর্ণ বয়ষ্কদের জন্য লিখেছেন, তেমনি শিশুদেরও নিরাশ করেননি। সাধারণত একেকজন লেখক একেক জনরায় লিখতে পারদর্শী হন। অথচ আমাদের হুমায়ূন আহমেদ সব ধরণের জনরাতেই নিজের পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন। 

>> আরও পড়ুন: বইবিমুখ আমার বইয়ের প্রতি ভালবাসা তৈরি করে দিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ

আমরা শুধু একজন হুমায়ূন আহমেদকে হারাইনি, হারিয়েছি একজন জিনিয়াসকে। তাকে হারানোর ক্ষতি অপূরণীয়। তবুও তিনি আছেন আমাদেরই মাঝে। চলে গিয়েও তিনি পুরোপুরি আমাদের ছেড়ে যাননি। নিজের সৃষ্ট সাহিত্যে যেমন তিনি বেঁচে আছেন, তেমনি মিশে আছেন তার ভক্তকুলের মননে, স্বভাবে। হুমায়ূন আহমেদকে আমরা ধারণ করেছি আমাদেরই মাঝে। তাকে কিছুতেই হারিয়ে যেতে দেব না।

আজ প্রিয় লেখকের জন্মদিনে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা জানাই। যেখানেই থাকুন অনেক ভালো থাকুন। জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর