শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘কারুনীলে’র যাত্রা গল্প

লাবণী মণ্ডল
প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৩৮ এএম

শেয়ার করুন:

‘কারুনীলে’র যাত্রা গল্প

জ্ঞান ছাড়া জীবন বিফল। পৃথিবীতে যারাই সফলতা অর্জন করেছেন, তাদের প্রত্যেককে স্ব স্ব জায়গায় জ্ঞানী হতে হয়েছে। উদ্যোক্তা জীবনও এর বাইরে নয়। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত সফল হওয়া যত উদ্যোক্তা আছে, তাদের প্রত্যেকেই তাদের কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেছে। কেউ হয়তো অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছে, আবার কেউ হয়তো বই পড়ে শিখেছে। তাই হয়তো সফল উদ্যোক্তা পৃথিবীর সব থেকে ধনী ব্যক্তি বিল গেটস।

ফাতেমা সাইয়েদার জন্ম ঢাকায়। বেড়ে উঠেছেন নোয়াখালীর কেশারপাড় গ্রামে। বাবা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, মা গৃহিণী। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ছিলেন পরিবারের সবার প্রিয়। 


বিজ্ঞাপন


karunil

করোনাকালে বিশ্বব্যাপী স্থবিরতা চলে আসে। মানুষ ঘরবন্দি। এ সময়ে তিনি উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন। তার দুই মেয়ে। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাবেন এটা তার পরিকল্পনার ভেতর ছিল না, তবে নিজেকে স্বাবলম্বী করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল। মেয়েদের দেখাশোনা করাটা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং মনে হওয়ায় কর্পোরেট জব ছেড়ে দেন তিনি। শুরু করেন জীবনের নতুন যাত্রা। 

ফাতেমা সাইয়েদা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স করেছেন। এর পর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে করেছেন এমবিএ। খুব ছোটবেলায় তিনি বাবাকে হারিয়েছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই শিখেছি, অর্থ উপার্জন কতটা দরকার। স্কুলে পড়ার সময়েই বাড়ির আশপাশের ছোট বাচ্চাদের পড়াতাম। স্কুলের বৃত্তি পরীক্ষা দিতাম। স্বাবলম্বী হবো- ছোট থেকেই এ চিন্তা মাথায় খুব ভালোভাবে গেঁথে গিয়েছিল। পরিবারের সহযোগিতা সব সময় ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘পড়াশোনা শেষে চাকরি করেছি। মেয়েদের দেখাশোনা করাটা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং মনে হওয়ায় করপোরেট চাকরি ছেড়ে স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করি। করোনায় যখন বেতন বন্ধ হলো, তখন মন খুব খারাপ। ভাবছি কী করব। আমার বড় মেয়ে বলল, আম্মু, তোমার মিষ্টি খুব ভালো। বিক্রি করা শুরু করো।’


বিজ্ঞাপন


karunil

এরপর জীবন ভিন্ন পথে এগোলো। প্রথমে বিল্ডিংয়ের নিচতলা-ওপরতলায় মিষ্টির চাহিদা বেড়ে গেল। লোকমুখে মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। জীবনকে উদযাপন শুরু করলেন ফাতেমা সাইয়েদা। দুই মেয়ে তার উদ্যোক্তা জীবনের প্রধান উৎসাহদাতা। জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে পেয়েছেন ছুটে চলার প্রেরণা। জীবনের জয়গান গাওয়ার উদ্যমতা। তিনি বলেন, ‘ছোটমেয়ে এখনই বলে বড় হলে উদ্যোক্তা হব। এটা আমার কাছে একটা বড় পাওয়া বলে আমি মনে করি। 

পথচলা থেমে থাকে না। বাধা অতিক্রম করেই স্বপ্নের পথে যেতে হয়। যে পথ মসৃণ নয়; বন্ধুর। চাকরি না করে ব্যবসা করা আমাদের সমাজব্যবস্থা এখনও মেনে নিতে পারে না। হাজারটা মতপার্থক্য থাকে। অনেকের অনেক মত। তাতে কারও পথ থেমে থাকে না। সব বাধা, সমালোচনা পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হয় আপন গতিতে। 

ফাতেমা বলেন, ‘কিছুদিন অন্যের পণ্য এনে কাজ করার পর চিন্তা করলাম, নিজেই ডিজাইন করি। সেই চিন্তা থেকেই কাজ শুরু করে দিলাম। নিজের চিন্তার ফল 'কারুনীল'। নিজস্ব নকশার শাড়ি, গজ কাপড়, ব্লাউজ; আরেকটা নতুন ট্রেন্ড হলো কাপল সেট। বিভিন্ন গানের কথা ও উৎসবভিত্তিক থিম শাড়িও আমরা করছি।’

karunil

কিছুদিন ধরে বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করছে কারুনীল। এ প্রসঙ্গে ফাতেমা বলেন, ‘মেলায় সরাসরি কাস্টমার যখন আমার পণ্যের ভালো দিক বলেন, কোনো পরামর্শ দেন, খুব উৎসাহ পাই।’

উদ্যোক্তা জীবন নিয়ে এখন আর তার তেমন কোনো হতাশা নেই। এখন নতুনের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। তাঁর থিমভিত্তিক শাড়িগুলো অনেক বিক্রি হচ্ছে। সাড়া ফেলেছে ক্রেতাদের মধ্যে। তিনি বলেন, ‘ছোট মেয়ে এখনই বলে, বড় হলে উদ্যোক্তা হবে। এটা আমার কাছে এক বড় পাওয়া বলে মনে করি।’

উদ্যোক্তা জীবন মানেই এক ধরনের লড়াকু মানসিকতা থাকতে হয়। তার ওপর আবার নারী। যেকোনো কাজে নারীদের প্রথম যাত্রা কণ্টকাকীর্ণ হয়। যে পথে হাঁটতে গিয়ে বার বার হোঁচট খেতে হয়। কারুনীলের ফাতেমাও এর বাইরে নয়। তবে উদ্যমতাকে তিনি হারাননি। নিন্দুককে ভালোবেসেছেন। নারীর লড়াইয়ে সহযাত্রী হওয়ার চিন্তা করেন। তার ভাবনায় রয়েছে প্রতিটি থিম, যে থিমকে তিনি ফুটিয়ে তুলতে চান শাড়িতে।  

karunil

তিনি বলেন, ‘এখন কারুনীলে নিয়মিত-অনিয়মিতভাবে ১০জন কাজ করেন। ডিজাইন, মডেল এবং কুরিয়ার করা সহ। আমি স্বপ্ন দেখি সব প্রিয় ব্যক্তিদের কাছে আমার নকশার শাড়ি থাকবে।’

তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক তরুণ উদ্যোক্তাকে চিনি, যারা খুব পরিশ্রমী ও খুব ভালো কাজ করছেন। একটাই কথা-লেগে থাকতে হবে। সামনে এগিয়ে যেতে হবে। অনেকে অনেক কথা বলবে। তাতে পিছিয়ে পড়লে চলবে না।’

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর