শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

দিন-দুপুরে দার্জিলিংয়ে

সিকদার ফারদিন
প্রকাশিত: ০৯ অক্টোবর ২০২২, ০১:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

দিন-দুপুরে দার্জিলিংয়ে

অনেকদিন ধরেই প্ল্যান ছিল ইন্ডিয়া ট্যুর দেওয়ার। হঠাৎ করোনা নামে এক ভয়াবহ মহামারির আর্বিভাবে সব প্ল্যান বাতিল হয়।  

দিন গড়াতে থাকে, সব ঠিক হতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় মনের অবস্থাও। হঠাৎ করে বন্ধু জীম হোসেন আবেদন করে বসে ভারতের ভিসায়। সেই সুবাদে জেনে নেওয়া হয় সহজ উপায়ে ভিসার আবেদনের। মূর্ধাকথায়- অনলাইনে সব ঝামেলা শেষ করে শেষের সময়ে গিয়ে জমা দেওয়া ও শেষের দিকে গিয়ে নিয়ে আসা। 


বিজ্ঞাপন


darjeeling

ভিসা পাওয়ার পর মনের আনন্দে মনে হচ্ছিল অর্ধেক ইন্ডিয়া তো ঘুরেই ফেলেছি। ২৩ দিন আগে শেষ করলাম টিকিট কাটার কাজ। বলে রাখা ভালো- ৩০ দিন আগে থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয় এবং দুটি ট্রেন সরাসরি ইন্ডিয়া যায় যার মধ্যে একটি মিতালি এক্সপ্রেস অন্যটি মৈত্রী এক্সপ্রেস। যেহেতু আমাদের প্ল্যান হলো এনজিপি হয়ে দার্জিলিং ঘুরে আসা সেহেতু আমরা মিতালি এক্সপ্রেসে টিকিট কেটে নিই। টিকিটের দাম উঠানামা করে। তবে সেটা ২৮০০-৩০০০ টাকার মধ্যেই থাকে। 

darjeeling

২৬ সেপ্টেম্বর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসেই গেল। আমরা ভ্রমণ সঙ্গী সবসময় ৫-৬ জন থাকলেও এবার আমরা শুধুই দুজন। জীম আর আমি। বাকি তিনজনের স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ যেহেতু নানা জটিলতায় তারা যেতে পারছে না। তবে তারা সবাই হাজির ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনে। সময় কাটিয়ে, ওদের বিদায় দিয়ে ইমিগ্রেশন শেষ করে উঠে পরলাম ট্রেনে। যাত্রা শুরু রাত ৯টা ১০ এ। ট্রেনের ঝনঝন শব্দে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের সেই ট্রেন। 


বিজ্ঞাপন


সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখ চিলাহাটি হয়ে ভারতে প্রবেশ করে আমাদের ট্রেন। ঢুকতেই চোখে পড়ল হলদি বাড়ি স্টেশন। আমাদের দেশের সব স্টাফ পরিবর্তন হয়ে ইন্ডিয়ার ইঞ্জিন লাগিয়ে খুব অল্প সময়েই পৌঁছে যায় এনজিপি স্টেশনে। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে পৌঁছে গেলাম ভারতের শিলিগুড়ি। 

darjeeling

শিলিগুড়ি, সিটি অব ব্রোকার থেকে শেয়ার জিপে ৩-৪ ঘণ্টায় পৌঁছে দেওয়া হয় দার্জিলিং দ্যা কুইন অব হিলস এ যখন সময় বিকাল ৪টা। তবে যাত্রাপথের জার্নিটা ছিল মনে রাখার মতো। কী এক রোমাঞ্চকর ভ্রমণ! পথিমধ্যে দেখা দিয়েছিল এক পসলা বৃষ্টি। যে বৃষ্টির পানি এতটাই শীতল যে নিজ হাতে না ধরলে সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। 

দার্জিলিং শহরে ঢুকতেই ম্যাল রোডের শুরুতে শীতল হাওয়ায় মন জুড়িয়ে যাবে। মনে হবে এক স্বর্গীয় বাতাস বয়ে যাচ্ছে চারপাশে। ৭০০০ ফুট উঁচুতে তখন আপনার অবস্থান। 

darjeeling

দূরে না গিয়ে ম্যাল রোডেই নিয়ে নিলাম এক হোটেল। তবে বলে রাখা ভালো যে, সব হোটেলে ফরেনার অ্যালাউ করে না। তাই আপনার ডকুমেন্ট যে পাসপোর্ট তা আগেই বলে নিতে হবে।  

রুমে ফ্রেশ হয়েই ম্যাল রোডে ঘুরে ঘুরে মাস্ট ট্রাই আইটেম দার্জিলিংয়ের স্ট্রিট ফুডের টেস্ট চেকে নিতে পারেন। মসলাযুক্ত বাহারি রান্না, বিভিন্ন পদের খাবারের পসরা নিয়ে আপনার সামনে পরিবেশন করবে যেন মুখে লোল চলে আসে। তবে সাবধান। হারাম, হালালের সমস্যা না থাকলে সবই ট্রাই করতে পারেন তবে হালাল খেতে হলে আপনাকে বেগ পেতে হবে। 

darjeeling

এখানকার অত্যন্ত জনপ্রিয় পদ হলো দার্জিলিংয়ের মোমো। এতটাই সুস্বাদু যে ট্রাই না করে সেই স্বাদ বোঝা সম্ভব না। লিখে বা ভাষায় বলে প্রকাশ করা সম্ভব না। রাত ৮ টার মধ্যে দার্জিলিংয়ে আপনাকে ডিনার সেরে নিতে হবে। দার্জিলিংয়ের চা, হোপ বারের ফ্রেশ নাশতাও পর্যটকের মন কাড়ে। 

দার্জিলিংয়ে পৌঁছেই প্রথম কাজ পরেরদিন টাইগার হিলসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য গাড়ি ঠিক করা। তিন বা চারজন হলে সেডান কার আর তার বেশি হলে আপনাকে নিতে হবে জীপ। ৩০০০ রূপির মধ্যে সেডান কার হয়ে যাবে আর জীপ হলে লাগবে আরেকটু বেশি। মনে রাখতে হবে টাইগার হিল যাওয়ার জন্য গাড়ি কিন্তু আপনাকে ভোর ৪ টায় পিক করবে।

darjeeling

টাইগার হিলের সৌন্দর্য টাইগার হিলের সঙ্গেই শুধু তুলনা করা যাবে। শীতল হাওয়ায় কেঁপে উঠবে আপনার শরীর। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এতই ভাল লাগবে যে সময় কীভাবে চলে যাবে বুঝবে না কেউ। সেই টাইগার হিল থেকেই দেখে নিবেন সূর্যোদয় আর কাঙ্গনজজ্ঞা। আশার পথে দেখা মিলবে মন্দিরসহ পাইন ফরেস্ট যা সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিবে বহুগুণে। টাইগার হিল থেকে আসার পথেই পাইন ফরেস্টে ছবি তুলতে ভুলবেন না কিন্তু। 

এরপর একে একে বাতাসিয়া লোপ, ঘুমধুম মনেস্ট্রি, জাপানিজ প্যাগোডা, রক গার্ডেন, গঙ্গামায়া (সবচেয়ে সুন্দর), রেলসহ বিভিন্ন মিক্সড পয়েন্ট ঘুরিয়ে বিকাল ৪ টায় গাড়ি বিদায় নিবে। তাই যত প্ল্যান থাকবে সব ৪টার মধ্য শেষ করতে হবে। কালক্ষেপণ করলে নিজেদেরই লস। 

darjeeling

যারা আরও থাকতে চান তারা নেপাল সীমান্ত ঘুরে আসতে পারেন অথবা সকালে শেয়ার জীপে করে এসে এনজিপিতে নেমে যেখানে ইচ্ছা যেতে পারেন। বাজেট ট্যুর হলে এর মধ্যেই শেষ করা শ্রেয়। আনুমানিক ১৪০০০ টাকায় বা ১০০০০ রুপিতে এই ট্যুর শেষ করা যাবে। যেখানে আপনি একদিন শিলিগুড়িও ঘুরতে পারবেন। তবে একা গেলে খরচের পরিমাণ যাবে বেড়ে। 

বিদেশ ভ্রমণে সবারই ভয় কাজ করে। কোথায় কী ঝামেলা হয় কে জানে! তবে সেরকম ভয়ের কিছু নেই। ভয়ের কিছু নেই। ট্রেনে গেলে এবং ট্রেনে আসলে তো ঝামেলাহীন ভ্রমণ। তবে স্থলবন্দর দিয়ে গেলে আপনাকে বেগ পেতে হবে। 

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর