বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

শিক্ষক দিবস এবং বাংলাদেশের শিক্ষকের অবস্থা

এইচ এম আবির হোসেন
প্রকাশিত: ০৫ অক্টোবর ২০২২, ০৪:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

শিক্ষক দিবস এবং বাংলাদেশের শিক্ষকের অবস্থা

পারিবারিকভাবে মা-বাবাই যেমন সর্বোচ্চ শিক্ষক, তেমন সামাজিক, রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণই  সর্বোচ্চ শিক্ষক। আজ মহান শিক্ষক দিবস। ছোটবেলা থেকেই পড়ে এসেছি শিক্ষক হলো একটি জাতির মেরুদণ্ড। কারণ তারাই আপনাকে শিখায় স্বপ্ন দেখতে,  নিজের চিন্তা জগতকে বিকশিত করতে,  জীবনে বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরেও আকাশ  ছুঁতে হবে তোমাকে সেই বিশ্বাস তোমার ভিতরে গেঁথে দিয়ে।  এর মত মহান পেশা পৃথিবীতে আর কিছু আছে কিনা আমার জানা নেই । 

তাই তো, আবদুল্লাহ্ আল-নিটাব খাঁন লিখেছেন- 


বিজ্ঞাপন


আজি মুগ্ধ কিসে প্রাণ-
আজি করবো কি অভিমান,
আমার যত সার্থকতা আছে
সে তো তোমারই অবদান।

ইউনেস্কোর রিপোর্ট অনুযায়ী, যে দেশে শিক্ষকের মান যত ভালো, সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা তত উন্নত। আমেরিকায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসম্মত শিক্ষার ২০ শতাংশ নির্ভর করে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ এবং অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ওপর। কিন্তু ৮০ শতাংশ নির্ভর করে যোগ্য শিক্ষকের ওপর।

১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনে সংস্থার তৎকালীন মহাপরিচালক ফ্রেডারিক এম মেয়র এডুকেশন ইন্টারন্যাশনালের অনুরোধে ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে এজুকেশন ইন্টারন্যাশনাল প্রতিবার একটি   প্রতিপাদ্য  নির্ধারণ করে দেয় । এবারে শিক্ষক দিবসের তাদের স্লোগান হলো - The Transformation of education begins with teachers।  

এই শ্লোগানের শাব্দিক অথবা কাব্যিক যে ব্যাখ্যায় আমরা করি না কেন এর অর্থ দাঁড়ায় শিক্ষকের দ্বারাই রূপান্তর হয় শিক্ষার। যেহেতু শিক্ষার মান উন্নয়নের সাথে শিক্ষকের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে সেহেতু শিক্ষকের মান উন্নয়ন করা অপরিহার্য। কোনো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নয়ন করতে হলে অবশ্যই সেখানকার শিক্ষকের উন্নতি সবার আগে করতে হবে। তা না হলে সেখানকার শিক্ষার অবস্থা ভঙ্গুর থেকে যাবে।


বিজ্ঞাপন


এবার আসি বাংলাদেশের শিক্ষকদের অবস্থান নিয়ে। যেহেতু আমি একজন শিক্ষার্থীর তাই পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে বেড়াই। আমার এক ছাত্র ক্লাস সেভেনে পড়ে। তার মা তাকে পাঁচটা টিউশনি দিয়েছে মাত্র ক্লাস সেভেনে থাকা অবস্থায়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম এত প্রাইভেট কেন পড়ছো? সে উত্তরে জানালো, প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষক নাকি পরীক্ষা নাম্বার কম দেবে। সেই কথা শুনে আমি অবাক হইনি। কারণ আমি যখন ছাত্র ছিলাম আমাদের স্কুলে প্রথা প্রচলন ছিল । এই যদি হয় শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থান বর্তমানে জাতির মেরুদণ্ড না হয়ে জাতি ধ্বংসের কারিগর হয়ে যাবে তারা। 

এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে কিছু কথা বলি । যতটা না শিক্ষক তার চেয়ে ঢের বেশি চাকুরীজীবীর মতো অবস্থা শিক্ষকদের। মাস শেষে অনেক শিক্ষকেরই মূল চাওয়া বেতন। এর বাইরেও যে দায়বদ্ধতা আছে তা নিয়ে কজনই বা ভাবি? ক্লাস করানো, মিডটার্ম, ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া, কুইজ নেওয়া আর ফলাফল ঘোষণা এই হলো শিক্ষকদের কাজ। ক্লাসের পড়ার বাইরে দুটো কথা বলার চেষ্টা কি করি আমরা? 

সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো শিক্ষকদের রাজনীতি করতে গিয়ে ছাত্রদের কাজে লাগানো।  অনেকেই শিক্ষক রাজনীতির ঘোরতর বিরোধী। আমি কখনোই এ বিষয়ে সহমত পোষণ করি না। বাংলাদেশের অন্য প্রায় সব পেশার মানুষ রাজনীতি করতে পারলে শিক্ষকরা কেন পারবেন না? আর এ পেশার মানুষদের যেহেতু জানাশোনার গণ্ডি বড় সেহেতু তাদের জন্য রাজনীতি করাটা অধিক যৌক্তিক বলেই আমার মনে হয়। কিন্তু এক্সট্রা কারিকুলার কাজ করতে গিয়ে তারা আসল কাজ করতে পারছেন কিনা সেটাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। 

আজকাল শিক্ষকদের একাংশ শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ছাত্রদের ব্যবহার করছে। যা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। একজন শিক্ষক যখন তারই ছাত্রকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করান তখন তার কাছ থেকে জাতিকে নৈতিক শিক্ষা প্রদানের নিশ্চয়তা কীভাবে পেতে পারি?

লেখক: ছাত্র, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর