পূজা মানেই ঢাকে কাঠি, মাইকে গান, ভিড়, আলো, বেড়ানো আর প্যান্ডেল হপিং। সব মিলিয়ে আনন্দ আর আনন্দ।
পূজার আনন্দটা ছোটবেলা থেকেই উপভোগ করতে শুরু করেছি। আমাদের আশেপাশে অনেকগুলো পূজার আয়োজন হতো। কিন্তু সবচেয়ে ভালো লাগত নিজেদের বাসার কাছের পাথরঘাটা স্কুলের পূজা। যখনতখন সেখানে ছুটে যেতাম। মাইকে অঞ্জলির শব্দ শুনে চলে যেতাম। অষ্টমী নবমীর পূজা নিয়ে ছুটে যেতাম। যেতাম বিসর্জনের দিনও। মা খুব মনখারাপ করত এই দিনে। বলতো, মনে হয় মেয়েকে বিদায় দিয়ে এলাম যাওয়ার জন্যে।
বিজ্ঞাপন
পূজার জামাকাপড় মা-বাবা খুব একটা কিনে দিত না। বাবার কথা ছিল, কাপড় লাগলে কিনতে হবে। কেন শুধু শুধু পালপার্বণে কেনা! বড় ঘরে ছিলাম বলে সবার ছোটো কাকাই কিনে দিত। আমায় খুব আদর করত। নিজেও কিনেছি বড় হয়ে। একটা সময় কটা জামা পেলাম সেসব হিসেব করতাম। আর এখন বললেও কিছু কিনতে ইচ্ছেই করে না। এখন অন্যদের দেই। ছেলেদের দেই। ওদের হাসিতেই আমার সুখ।
বিয়ের পর থেকে তুতো ভাইবোনেরা মিলে গাড়িভাড়া করে পূজা দেখতে বেরুতাম সারা শহরে। উত্তেজনা থাকত খুব। কীভাবে কোনদিকে ঢোকা যাবে, কোনটা কেমন হলো— এই নিয়ে খুব মাতামাতি হতো। কিন্তু ভাইবোনেরাও বড় হয়ে ছিটকে পড়েছি নানান দিকে।
বিজ্ঞাপন
পূজার আরেক মনকাড়া আকর্ষণ ছিল চকচকে মলাটের পূজাবার্ষিকী। বিশেষত আনন্দমেলা। কাকাবাবু সন্তু, ফেলুদা, অর্জুন, প্রফেসর শঙ্কু, শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজের গল্প, দুলেন্দ্র ভৌমিকের হাসির গল্প, সঞ্জীবের রুকুসুকু, মামাদের মজার গল্প আমার কৈশোর রাঙিয়ে দিত নানান মধুর রঙে। অথচ আজ সেসব হাতের কাছে থাকলে কিনতে ইচ্ছে হয় না, পড়ারও সময়ও পাই না একদম।
আমার কাছে এখন পূজা মানে কয়েক মাস ধরে গ্রাহকদের তাড়া, নতুন গয়নার চিন্তা। নতুন জিনিস ঠিকমত এলো কিনা, সময়মতো গ্রাহকদের হাতে পৌঁছাতে পারব কিনা সেই উদ্বেগ। পূজা এখন আমার আর কিছু নয়, বর্ণাঙ্কনের উৎসব।
গ্রাহকদের সঙ্গে সঙ্গে আমিও দিনগুলো কাটাই উৎকণ্ঠা আর অপেক্ষায়। সবার হাতে পছন্দের গয়নাগুলো তুলে দিয়ে, ব্যস ছুটি! খুব ভালো লাগে এরপর হাসিমাখা মুখের সুন্দর ছবিগুলো দেখতে।
পূজার দিন রান্নাবান্না করতাম শখ করে। বিশেষ করে বিজয়া দশমীতে ভালো ভালো রান্না করতাম, ফেসবুকে ছবি দিতাম। এবারও হয়তো হবে কিছু। দেখা যাক।
পূজায় মাকে বড্ড মনে পড়ে। মনে হয়, মা এখুনি ডাকবে, স্নান করে নে, অঞ্জলি দিয়ে আসব। তৈরি হয়ে নে। বের হব। মাকে নিয়ে পূজা ঘুরিয়ে দেখানোর আনন্দ বেশি পাইনি। জগজ্জননীকে বলি, মাকে ভালো রেখো, যেখানেই রাখো। তুমি মা হয়ে পাশে থাকো। প্রতি পূজায় এক মায়ের সামনে আরেক মায়ের জন্য নীরবে চোখের জল ঝরে আমার।
লেখক: অনলাইন উদ্যোক্তা (বর্ণাঙ্কন)
এনএম