মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা

ফারদীন হক জ্যোতি
প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আমরা ঠিক যতটা উদাসীন তার থেকেও বেশি অজ্ঞ। ঠিক এই কারণেই জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। 

মানসিক সমস্যা নিয়ে বেশ কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা আছে যা আমরা সত্য বলেই বিশ্বাস করি। এরই ফলাফল হলো দীর্ঘদিনের মানসিক অসুস্থতা এবং পরিণামে ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনা। ঠিক তেমনই কিছু প্রচলিত ভুল ধারণার বাস্তবতা নিয়েই আজকের এই লেখা-  


বিজ্ঞাপন


health

১. ‘মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সবাইকে প্রভাবিত করে না’ 

এই ধারণাটি ভুল। সত্য হলো, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন সবাই হতে পারে। ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, ৬ জনের মধ্যে একজন যুবক একটি বড় বিষণ্ণ পরিবেশের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে এবং ২০জনের মধ্যে একজন মানুষ একটি গুরুতর মানসিক অসুস্থতার সাথে বাস করেছে যেমন সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা ভয়াবহ রকমের বিষণ্ণতা।

২. ‘শিশুরা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয় না’ 


বিজ্ঞাপন


এটি একটি প্রচলিত ভুল ধারণা। সত্য হলো, খুব ছোট শিশুরাও মানসিক সমস্যাতে পরতে পারে। এই বয়সেই প্রাথমিকভাবে তারাও কিছু লক্ষণের প্রকাশ করে। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো প্রায়শই ক্লিনিক্যালি নির্ণয় করা যায়। সমস্ত মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ব্যাধিগুলোর অর্ধেকই একজন ব্যক্তির ১৫ বছর বয়সের আগেই শুরু হতে পারে।

health

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর তিন-চতুর্থাংশ ২৪ বছর বয়সের আগে শুরু হয়। দুর্ভাগ্যবশত, কেবল অর্ধেক শিশু এবং কিশোর-কিশোরীরা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা পায়। শিশুকাল থেকেই এই বিষয়ে সচেতন হলে পরবর্তীতে অনেক বড় মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। 

৩. ‘মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সব সময় আক্রমণাত্মক থাকে’

এই চিন্তাটিও ভুল। সত্য হলো, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন এমন বেশিরভাগ লোকই অন্যদের প্রতি হিংসাত্মক বা আক্রমণাত্মক নন। কেবল ৩-৫ শতাংশ রোগীকে হিংসাত্মক কার্যকলাপের জন্য দায়ী করা যেতে পারে। তবে তারা মূলত গুরুতর মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন। অনেকেই আছেন যাদের বিভিন্ন রকম মানসিক সমস্যা আছে কিন্তু তাদের দেখে বোঝা সম্ভব হবে না। কারণ তারা তাদের দৈনন্দিন কাজগুলো স্বাভাবিকভাবে করে এবং সমাজে তাদের অবদান সাধারণের থেকেও বেশি। 

health

৪. ‘ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা বা আচরণগত ত্রুটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে’

এমনটা মনে করা একটি ভুল ধারণা। বাস্তবতা হলো, অলস বা দুর্বল হওয়ার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কোনো সম্পর্ক নেই। একজন মানুষ চেষ্টা করলেই এই সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে জৈবিক যেমন জিন, শারীরিক অসুস্থতা, আঘাত, বা মস্তিষ্কের রসায়ন, জীবনের অভিজ্ঞতা যেমন ট্রমা বা অপব্যবহারের ইতিহাস, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার পারিবারিক পূর্ব ইতিহাস ইত্যাদি। 

৫. ‘মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা কখনো ঠিক হয় না

সত্যি হলো, সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হলে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আক্রান্ত মানুষেরা সম্পূর্ণরূপে ভাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারে। এসব মানুষ তাদের সমস্যা কাটিয়ে উঠে সাধারণভাবে কাজ করতে, শিখতে এবং সম্পূর্ণভাবে সকল সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে পূর্বের চিকিৎসা পদ্ধতির চেয়েও অনেক বেশি উন্নত চিকিৎসা আছে যা খুব অল্প সময়েই একজন মানসিক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে পারে।

health

৬. ‘থেরাপি অর্থের অপচয় মাত্র’

এটি একটি ভুল ধারণা কারণ রোগীর সমস্যা, তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধেই কাজ হয়। আবার অনেক রোগীর জন্য থেরাপি ও ওষুধ উভয়ই প্রয়োজন হতে পারে। তাই থেরাপির ক্ষেত্রে অবহেলা করা ঠিক নয়। এতে সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। 

৭. ‘মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে কাউকে রক্ষা করতে আমাদের কিছুই করার নেই’

এমন চিন্তা একটা ভুল ধারণা। কারণ সত্য হলো, বন্ধু বা পরিবারের লোকদের এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ আছে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রাপ্তবয়স্ক মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসকে কাছে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু অন্যরা বেশিরভাগই পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছে। 

health

যদি আপনি বুঝতে পারেন আপনার আশেপাশে কাছের কেউ মানসিক সমস্যা ভুগছে, তবে তাকে যথেষ্ট পরিমাণে সহায়তা করুন এবং সহমর্মিতা প্রকাশ করুন। সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই তাকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণের জন্য।

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর