শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মানসিক রোগ মানেই ‘পাগল’ নয়

ফারদীন হক জ্যোতি
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৫০ এএম

শেয়ার করুন:

মানসিক রোগ মানেই ‘পাগল’ নয়

আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। অনেক সময় মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার ফলে বিভিন্ন কুসংস্কারের ওপর ভিত্তি করে রোগীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়। 

মানসিক রোগ শারীরিক রোগের মতনই স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা আমাদের সকলের জন্যই সমানভাবে প্রয়োজন। তাহলে চলুন জেনে আসা যাক মানসিক স্বাস্থ্য আসলে কী- 


বিজ্ঞাপন


mental health

মূলত মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের আবেগ অনুভূতি, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতার অন্তর্ভুক্ত। আমাদের চিন্তা ও অনুভূতি শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা কীভাবে কাজ করি তা নিয়ন্ত্রণ করে এটি। মানসিক স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে যে আমরা কীভাবে মানসিক চাপ গ্রহণ করি। অন্যদের সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং আমাদের পছন্দ অপছন্দের দিকগুলোও মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্ত।

শৈশব থেকে যৌবন বা বৃদ্ধ বয়স, জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য একজন মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জীবনে যেকোনো পর্যায়েই আপনি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এটি আপনার চিন্তাভাবনা, আচার-আচরণ, শারীরিক স্বাস্থ্যসহ পারিবারিক সম্পর্ক ও কর্মক্ষেত্রকেও প্রভাবিত করতে পারে। 

mental health


বিজ্ঞাপন


অনেকগুলো কারণ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে যার মধ্যে রয়েছে- জৈবিক কারণ (যেমন: জিন বা মস্তিষ্কের রসায়ন)। আবার অনেকেই জীবনের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা থেকেও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকিতে থাকেন (যেমন: বিভিন্ন ধরনের ট্রমা বা সম্পর্কের অবনতি)।   

লক্ষণ কী? 
 
কীভাবে বুঝবেন আপনি বা আপনার কাছের কোনো মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছে কি না? এটি বোঝা তেমন কঠিন কিছু না, একটু সচেতনতা এই স্বাস্থ্যসমস্যা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে একজন মানুষের বেশ কিছু আচরণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় যেমন-
খাওয়া বা ঘুম খুব বেশি বা খুব কম
স্বাভাবিক কাজকর্ম থেকে দূরে থাকার চেষ্টা
দীর্ঘ সময় অবসাদবোধ করা বা জীবনের কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে চিন্তা করা
মাথা ব্যথা
শরীর ব্যথা 
অতিরিক্ত অসহায় বোধ করা  
আশাহীন বোধ করা 

mental health

অনেকেই এই পর্যায়ে ধূমপান, মদ্যপান বা মাদকদ্রব্যে আসক্ত হয়। পরবর্তীতে আচরণগত সমস্যাগুলো তীব্র হলে দেখা যায় একজন ব্যক্তি অস্বাভাবিকভাবে বিভ্রান্ত, ভুলে যাওয়া প্রবণতা বৃদ্ধি, সব সময় রাগান্বিত, বিচলিত বা উদ্বিগ্ন থাকছে। 

অতিরিক্ত ভয় পাওয়াসহ পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করে থাকে এইসব মানুষ।  এছাড়াও কোনো একটি অপ্রত্যাশিত বিষয় নিয়ে চিন্তা করা। তা থেকে নিজেকে বের করতে না পারা, হঠাৎ কারো কণ্ঠস্বর শোনা বা এমন জিনিস বিশ্বাস করা যা সত্য নয়— এগুলোও মানসিক সমস্যার লক্ষণ। 

অনেকেই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে নিজের বা অন্যের ক্ষতি করার চিন্তা করেন। দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজগুলো সম্পাদন করতেও তারা অক্ষমতা প্রকাশ করে থাকেন। 

mental health

প্রতিকার 

মানসিক রোগ মানেই পাগল— বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। তাই যারা মানসিক রোগে ভুগছেন তাদের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হতে হবে। এই সময় নিজেকে গুরুত্ব দিতে হবে সবার আগে। পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্কের জায়গা থেকে যদি তাদের সহযোগিতা করা হয় তাহলে অবশ্যই অল্প সময়ের মাঝেই এই অবস্থা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব। 

নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ইতিবাচক জনসংযোগগুলো যেমন সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সেবামূলক কাজগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া ভালো। এছাড়াও নিজের পছন্দের কাজগুলো এই সময় করার চেষ্টা করতে হবে। 

ভালো ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম ইত্যাদি মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এসবের মাধ্যমে ভালো ফলাফল না পেলে অবশ্যই বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর