শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

আমাদের শৈশব রঙিন করা ‘মীনা’র জানা-অজানা

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:১৫ এএম

শেয়ার করুন:

আমাদের শৈশব রঙিন করা ‘মীনা’র জানা-অজানা

নব্বইয়ের দশকে যাদের জন্ম তাদের শৈশব ঘাঁটলে মীনার অস্তিত্ব মিলবেই। একটি কার্টুন চরিত্র হলেও তখনকার শিশু কিশোরদের বাস্তব জীবনেও সে যেন বন্ধু হয়ে উঠেছিল। মীনার এমন তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে সার্কভুক্ত দেশগুলো ১৯৯৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরকে মীনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। 

৯ বছর বয়সী শিশু মীনা। যে অত্যন্ত মেধাবী। নারী-পুরুষ সমঅধিকার থেকে শুরু করে সমাজের নানা সমস্যা সমাধানে ছোট্ট মাথা খাটিয়ে বুদ্ধি বের করে সে। আমাদের শৈশব রাঙানো মীনা সম্পর্কে জানা-অজানা কিছু তথ্য চলুন জেনে নেওয়া যাক- 


বিজ্ঞাপন


meena

মীনা জন্ম বা সূচনা লগ্নের কথা 

১৯৯০ এর দশকের কথা। উপমহাদেশের মেয়েদের অধিকার সুংসহত করার লক্ষ্য কোনো অ্যানিমেশন মানে কার্টুন প্রচার করার উদ্যোগ নেয় ইউনিসেফ। কী করা যায় ভাবতে থাকেন তারা। কীভাবে মেয়ে শিশুর অধিকারের ব্যাপারে সামাজিকভাবে সচেতন করা যায় এই অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীকে?

সেই সময় বাংলাদেশের চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার বিটিভিতে ‘মনের কথা’ নামে একটি পাপেট শো করতেন। সেই পুতুলদের মধ্যে ‘পারুল’ নামের একটি চরিত্র ছিল। এই মেয়ে শিশুর চরিত্রটি বাংলাদেশে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। পারুলকে দেখেই আইডিয়া পায় ইউনিসেফ। 


বিজ্ঞাপন


meena

১৯৯১ সালে খ্যাতনামা কার্টুনিস্ট রাম মোহন ইউনিসেফের সহযোগিতায় মিনা কার্টুনের প্রথম অ্যানিমেশন করেন। মোট ১৬টি এপিসোড তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে মীনা আসে মুস্তাফা মনোয়ারের হাত ধরেই। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম বিটিভিতে মীনা কার্টুন দেখানো শুরু হয়। ২০০১ সাল পর্যন্ত এর ১৬টি পর্ব দেখানো হয়। এই পর্বগুলোর জন্য রাম মোহনকে সাহায্য করে ইউনিসেফ, হান্না-বারবারা কার্টুনস ও টুনবাংলা।

‘মীনা’ নাম রাখা হলো যেভাবে 

মীনা কিন্তু শুধু বাংলাদেশের জন্য তৈরি করা হয়নি। দক্ষিণ এশীয় সবগুলো দেশের জন্য এর সৃষ্টি। চরিত্র বানানোর পর সবার মাথায় চিন্তা ঢোকে নামকরণের। যেহেতু অনেকগুলো দেশের জন্য বানানো তাই কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম হওয়া চাই এমন যেন নাম শুনে প্রত্যেকটি দেশ মেয়েটিকে নিজেদেরই দেশের প্রতিনিধি বলেই মনে করতে পারে।

meena

অর্থাৎ সার্কভুক্ত ৭টি দেশেই সেই নামের গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। কিন্তু এমন নাম পাওয়া যে কঠিন। অনেক ভেবে শেষে মেয়েটির নাম রাখা হয় ‘মীনা’। কারণ, ভারত-বাংলাদেশ-শ্রীলংকায় মীনা, মীনাক্ষী, মীনা কুমারি এমন নামগুলো বেশ প্রচলিত। আমার মীনা নামটির সঙ্গে ‘আমিনা’ নামের কিছুটা সাদৃশ্য থাকায় মুসলিম দেশগুলো (বিশেষত পাকিস্তান) আপত্তি জানায়নি। শেষে, সব দেশের অনুমোদন সাপেক্ষে মীনা নামটিই চুড়ান্ত করা হয়। সিন্ধী ভাষায় 'মীনা' শব্দটির অর্থ 'আলো'।

মীনার পোশাক নির্ধারণ করা হলো যেভাবে 

কেমন পোশাকে মানাবে মীনাকে? রাম মোহন বাবু মীনার হরেক রকম স্কেচ আঁকতে থাকেন। কোনোটিতে তার গায়ে জড়ানো হয় সেলোয়ার কামিজ, কোনোটাতে পরান স্কার্ট আর ব্লাউজ। শার্ট কিংবা ওড়না দিয়েও সাজান মীনাকে। বিভিন্ন পোশাকে মীনাকে সাজিয়ে মানুষকে দেখাতেন তিনি। নিতেন মতামত। সবশেষে লং স্কার্ট আর ফতুয়ায় সবাই মীনাকে বেশি পছন্দ করেন। 

meena

মীনার সঙ্গী ‘মিঠুর’ আগমন 

শিক্ষণীয় হলেও কার্টুন হতে হয় একটু মজার, একটু রসাত্মক। তাই ঠিক করা হয় কোনো একটি প্রাণীর চরিত্র রাখা হবে। শুরুতে প্রস্তাব করা হয়, মীনার পছন্দের পোষা প্রাণী হিসেবে রাখা হবে একটি বানর। সবাই এই প্রস্তাব মানলেও বাধ সাধে শ্রীলংকা। বানরকে কৌতুক চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না বলে জানালো তারা। কারণ, দেশটিতে বানরকে ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত পবিত্র ও সম্মানীয় বিবেচনা করা হয়।

তখন ভারত প্রস্তাব দিলো, এই পোষা প্রাণী হিসেবে তোতাপাখি ব্যবহৃত হতে পারে। এবার আর কেউ না বলেনি। ব্যাস, এভাবেই মীনার সঙ্গী দুষ্টু মিষ্টি কথা বলা মিঠুর আগমন হয়। 

meena

মীনা কার্টুনের মূল সংগীত 

মীনা কার্টুনের সঙ্গে যে বিষয়টি সবচে বেশি জড়িয়ে রয়েছে তা হলো এর মূল সংগীত। ‘আমি বাবা মায়ের শত আদরের মেয়ে...’— গানটির সঙ্গে গলা মেলাননি এমন মানুষ কমই আছেন। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই গানটি রচনা করেছেন প্রখ্যাত সঙ্গীতকার আরশাদ মাহমুদ এবং ফারুক a। গানে যে মিষ্টি কণ্ঠটি শোনা যায় তা সুষমা শ্রেষ্ঠার। এই গানটি পাকিস্তানে রচনা ও রেকর্ড করা হয়।

meena

নানা দেশে ‘মীনা’

মীনা কার্টুন কেবল বাংলা ভাষায় তৈরি হয়নি। অবাক হলেও সত্য যে হিন্দি, উর্দু, নেপালি, ইংরেজিসহ কমপক্ষে ২৯টি ভাষায় এই কার্টুনটি তৈরি হয়েছে। আরবিতেও মীনা কার্টুন ডাবিং করা হয়েছিল। 

প্রথমে মীনার ১৬টি পর্ব বানানো হয়। সার্কভুক্ত সাতটি দেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এই পর্বগুলো প্রচার করা হয়। বর্তমানে মীনার ৩৭টি পর্ব রয়েছে। মীনার কার্টুন ছবি নিয়ে ২৩টি কমিক বইও বের হয়েছে। এসব বই পেয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। 

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, ইউটিউব ও অন্যান্য

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর