আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারি। প্রচলিত এই ধারণার কারণে মনে করা হয় কর্মক্ষেত্রে থাকতে হবে ফিটফাট। তাই পোশাকেও অনেকে পছন্দ করে ফুল ফর্মাল পোশাক। ফুল ফর্মাল ক্রেতাদুরস্ত পোশাক আমাদের প্রচলিত ধ্যান ধারণারই বহিঃপ্রকাশ।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ধ্যান-ধারণারও পরিবর্তন হচ্ছে। নিজেকে যেমন অন্যদের সামনে উপস্থাপন করতে হয় তেমনি ভাবে পোশাকটি যদি কমফোর্টেবল না হয় তাহলে কাজে মন বসে না যোনো।
তাই কর্মক্ষেত্রে পোশাকের প্রচলিত ধারণার অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ এখন কর্মক্ষেত্রে পছন্দ করে আরামদায়ক ক্যজুয়াল পোশাক। হোক সেটি অফিস বা অফিসের চার দেওয়ালের বাহিরের কোন কাজ, স্মার্ট ক্যাজুয়াল পোশাকই আধুনিক তরুণ প্রজন্মের প্রথম পছন্দ।
বিশেষ করে কোভিড ও লকডাউনের পরে পোশাকের ব্যবহারে মানুষের অভ্যাসের অনেক পরিবর্তন আসছে। ওয়ার্ক ফ্রম হোমে মানুষ ক্যাজুয়াল ও কমফোর্টেবল পোশাক পরত। ঠিক তার পরে অফিসে বা যে কোন কর্মক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ক্যাজুয়াল পোশাকের ব্যবহার পছন্দের শীর্ষে।
একই সঙ্গে মানুষ এখন অনেক বেশি মিতব্যায়ী। স্বল্পখরচে ক্যাজুয়াল পোশাকেই তাই নির্ভরতা । ক্যাজুয়াল পোশাক বা স্মার্ট ক্যাজুয়াল অথবা বিজনেস ক্যাজুয়াল যে কোন যে টাইপ ই হোক না কেন ক্যজুয়াল পোশাক ব্যবহার পছন্দের শীর্ষে থাকার অনেক যুক্তিও রয়েছে।
ক্যাজুয়াল পোশাক মানেই কমফোর্টেবল
বিজ্ঞাপন
যে কোন ক্যাজুয়াল পোশাকই সাধারণত আরামদায়ক হয়। দৈনন্দিন চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করা যায়। অফিস বা অফিসের বাহিরে ব্যবহারে ক্যাজুয়াল পোশাক নিশ্চিত করে আল্টিমেট কমফোর্ট।
ক্যাজুয়াল পোশাকে নিশ্চিত হয় প্রডাক্টিভিটি ও ক্রিয়েটিভিটি
কর্মক্ষেত্রে মানুষ যখন আনন্দে ও আরামদায়ক পরিবেশে কর্মীরা কাজ করতে পারে তখন কাজের প্রডাক্টিভিটি বেড়ে যায়। মানুষ যখন কমফোর্টেবল পোশাক পরে ঠিক তখন আনন্দে থাকতে পারে। আনন্দে কাজ করা মানেই প্রডাক্টিভিটির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা
কর্মক্ষেত্রে যখন পোশাক হতে হয় ফরমাল ঠিক তখন পোশাক, পোশাকের রঙ এবং ডিজাইনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা চলে আসে। নিজেদেরকে মানুষ তখন ভাবে যে সে নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ। বরং পোশাকে ক্যাজুয়াল এর স্বাধীনতা থাকলে মানুষ তার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও মতামত প্রকাশ করতে পারে পোশাকের মাধ্যমে। উপলক্ষ্য পোশাক হলেও মানুষের মনস্তাত্বিক চিন্তা ধারায় এই স্বাধীনতা বজায় থাকে।
প্রতিদিনের সময় বাঁচায়
ফরমাল পোশাক মানেই নিজেকে বিশেষ ভাবে উপস্থাপন করা, প্রতিদিন সকালে পোশাকটি প্রস্তুত করা ও সর্বক্ষেত্রে পোশাকটি ফিটফাট আছে কিনা এই দিকে নজর দেওয়া, এই সব মিলিয়ে অনেক সময় অপচয় হয়। কিন্তু ক্যাজুয়াল পোশাক হলে এই সময় ব্যয় করতে হয় না। সুতরাং মানুষ সেই সময়কে বিভিন্ন উৎপাদনশীল কাজে ব্যয় করতে পারে।
পোশাকের খরচ বাচিয়ে দেয়
ফরমাল পোশাক সবসময়ই ব্যায়বহুল হয়ে থাকে। কিন্তু ক্যাজুয়াল পোশাকের মূল্য অপেক্ষাকৃত কম হয়ে থাকে। তাই পোশাকের পিছনে অনেক খরচ কমিয়ে সাশ্রয়ী হওয়া যায়।
কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্রতা আনে
ডাইভারসিটি বিষয়টি এখন বর্তমান বৈশ্বিক কর্মপরিবেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি অফিসে বিভিন্ন দেশ, ধর্ম, জাতির মানুষ থাকে। পোশাকে স্বাধীনতা নিশ্চিত করে ক্যাজুয়াল পোশাক এর ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করলে সবাই নিজ নিজ স্বকীয়তা বজায় রেখে পোশাক পরতে পারে।
আবহাওয়া উপযোগী পোশাক
বাংলাদেশের মত দেশে যেখানে গড় তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেখানে ফরমাল পোশাক স্বাভাবিক ভাবেই যায় না। স্যুট আর টাই পরে থাকা মানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের বেশি বেশি ব্যবহার। তাই ক্যাজুয়াল ড্রেস ব্যবহার করলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার কম হয় যা বিদ্যুতের অপচয় রোধ করে।
মেধাবী কর্মীদের আকৃষ্ট করা
এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে ৬০% চাকরি প্রত্যাশী আশা করে এমন অফিস যেখানে ক্যাজুয়াল ড্রেসকোড ফলো করা হয়। তাই বর্তমানে অধিকাংশ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ক্যাজুয়াল ড্রেস কোড চালু করেছে।
পেশা যে রকমই হোক ক্যাজুয়াল ড্রেস যেকোন পরিবেশেই মানানসই। ক্যাজুয়াল পোশাক যেমন নিশ্চিত করে প্রডাক্টিভিটি ঠিক তেমনি সহায়তা করে ক্রিয়েটিভিটিতে। বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখা গিয়েছে ক্যাজুয়াল ড্রেসের প্রাধান্য।
এজেড