শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘সুমি একটি সাহসের নাম’

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৩২ এএম

শেয়ার করুন:

‘সুমি একটি সাহসের নাম’
ছবি শামীমা সুলতানার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত ও সম্পাদিত
পুরো নাম শারমিন সুলতানা সুমি হলেও সবাই তাকে চেনেন সুমি নামেই। একজন বাংলাদেশি সংগীতশিল্পী তিনি। জনপ্রিয় ব্যান্ড চিরকুটের প্রধান কণ্ঠশিল্পী এই নারী। পরিচিত সমাজের আর দশজন নারী থেকে সরে এসে নিজের অবস্থান সৃষ্টি করেছেন সুমি।

জনপ্রিয় এই শিল্পীর জন্মদিন উপলক্ষে তার সহপাঠী বন্ধু শামীমা সুলতানা, সুমিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। তার বলা কথাগুলো ঢাকা মেইলের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। 


বিজ্ঞাপন


আমার চেনাজানা ভালো মানুষের দুনিয়াকে বদলে দিতে এসেছিল সুমি। ভালো মেয়েরা স্কার্ট পরে না, ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে না, হেসে কথা বলা তো বহুত দূর। ভালো মেয়েরা কোনো বান্ধবীর বাসায় গিয়ে দুই ঘণ্টা সময় কাটায় না, সেই বাড়িতে বান্ধবীর কোনো বড় ভাই থাকলে হুঁশিয়ার সাবধান। ভালো মেয়েরা কোথাও যাওয়ার সময় মায়ের সঙ্গে যায় আর ফেরার সময় বাবা বা বড় ভাইয়ের সঙ্গে ফিরে আসে। ভালো মেয়ে স্কুলের অফিস ঘর চিনে না, মাসের বেতন বাবা অথবা ভাই বা মুরব্বি কেউ দিয়ে দেয়। ভালো মেয়ে মাথায় কাপড় বা ওড়নার আঁচল তুলে দিয়ে পথ চলে। ভালো মেয়ে ভালোভাবে লেখাপড়া করে ভালো রেজাল্ট করে।

sumi

১৯৯৩ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন ছবি

ভালোর কী অদ্ভুত একটা ফ্রেম দেখেন! ভালো বলতে আমি এই রূপটিকে চিনতাম এবং মেনে নিয়েছিলাম। এই দর্পণ ভেঙে দিলো সুমি। 

ছেলে 'বর্গি' রাজীবকে তুই বলে কথা বলতো ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। রাজীবের সঙ্গে কথা বলার সময় সুমির আচরণে আমার আর রাজীবের ভিতরে কোনো পার্থক্য ছিল না। স্কার্ট পরত। নিজের বেতন নিজে দিত। আমাদের বাসায় বেড়াতে আসতো সকালে আর ফিরে যেত বিকেল বেলায় ক্লাস এইটে পড়ার সময়। 


বিজ্ঞাপন


কেরাম বোর্ড খেলতাম আমি, সুমি, ছোট ভাইয়া (সাদী) এবং আমার মা। সুমির কোনো জড়তা ছিল না আমার বড় বড় দুটো 'বর্গি' ভাইয়ের সামনে। লেখাপড়া নিয়ে হা হুতাশ ছিল না। অথচ ফলাফল খারাপ করেনি কখনো। মুখস্থ করার ধারেকাছে দিয়ে হাঁটত না। তার সৃজনশীলতায় হয়তো মহার্ঘ্য ছিল না, কিন্তু নিজস্বতা ছিল। যেসব কাজ ভালো মেয়েরা করে না বলে তথ্য এবং বিশ্বাস আমার ছিল, সেগুলো করেও সে দিব্যি ভালো মেয়ে হয়েই ছিল। কি অদ্ভুত না বলেন!

sumi

১৯৯৫ সালের ছবিতে বন্ধু বর্ণালী, শামীমার সঙ্গে সুমি

এখনো তার সেই বৈশিষ্ট্য অটুট আছে। চিরকুট ব্যান্ডের ভোকাল দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বনামধন্য সুমিকে নিয়ে গণপরিবহনে বসে আলাপচারিতা শুনেছি। সল্ট ক্রিয়েটিভ নামের অ্যাডভার্টাইজিং ফার্ম দিয়ে সে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন নির্মাণের কাজ করছে। কাজ পেয়ে সে অনেক সময় সাব কন্টাক্টও দেয়। সুমির সঙ্গে কথা বলে দেখ! জ্বি, এই হলো সুমি। 

মিডিয়াতে কাজ করা একটা মেয়ে পরিশ্রম, কন্ঠশীলন, সংগীত, বিজ্ঞাপন নির্মাণ করে নিজের পরিচয় নিজে সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে। কোনো ভাইয়ার সমর্থন তার প্রয়োজন নেই। মানুষ হিসেবে মানুষের কাছে যে প্রত্যাশা, একটা কাজের জন্য যে শ্রম দেয়া প্রয়োজন সেটা দেয়াই সুমির মূলধন। 

sumi
২০০৭ সালের ছবি 

বিরাট একটা পরিবার সুমির সঙ্গে আছে। আমি তার বাসায় গিয়ে দরজার সামনে চমকে উঠেছি। কী ব্যাপার, মিলাদ নাকি বাসায়? এতো জুতা স্যান্ডেল কেন দরজার সামনে! ভেতরে ঢুকে দেখি সাত ভাইবোনের পরিবারের সবকজন সদস্য বাসায় উপস্থিত। ভাগ্নে ভাগ্নি, ভাইপো ভাইঝি সহ সংখ্যাটা ওয়াজ মাহফিল বা মিলাদের মতোই বটে। পরিবারের এই একাত্মতার পেছনে প্রধান কারিগরটিও সুমি। 

থ্যাংকস সুমি। তুই আমার কাছে একটা উদাহরণ, একটা সম্ভাবনা, একটা সাহসের নাম। তোর দীর্ঘায়ু কামনা করি। শুভ জন্মদিন সুমি। এই দিনটি ঘুরে ফিরে আসুক বারবার শতবার।

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর