রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নিজের ভুল যতো দ্রুত বুঝতে পারবেন, ততোই মঙ্গল

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১১:২৩ এএম

শেয়ার করুন:

নিজের ভুল যতো দ্রুত বুঝতে পারবেন, ততোই মঙ্গল

সম্পর্ক বিষিয়ে ওঠা বা টক্সিক রিলেশনশিপ— আজকালকার দিনে খুবই পরিচিত একটি বিষয়। দীর্ঘ দিনের সম্পর্কে হঠাৎ তৃতীয় ব্যক্তির আগমন, সন্দেহ প্রবণতা বা আগের মতো ভালো না লাগাসহ বিভিন্ন কারণেই সম্পর্ক বিষিয়ে উঠতে পারে। এই ধরণের সম্পর্ক বয়ে বেড়ানো অনেক কঠিন। এ সময়ে ঠিকঠাক সিদ্ধান্তও নেওয়া যায় না। এই সম্পর্কের দায়ও কেউ নিতে চায় না। দুই পক্ষই মনে করে, সে ঠিক রাস্তায় আছে অন্যজন ভুল করছে। আবার দেখা যাচ্ছে— কোনও এক পক্ষ হয়তো অন্যজনকে সহ্য করতে পারে না, কিন্তু অন্যজন ঠিকই মুখ বুজে সব সয়ে নিচ্ছে।

টক্সিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মোটামুটি সবাই হয়তো এক বাক্যে বলবেন— সম্পর্ক থেকে সরে আসতে, বিচ্ছেদ ঘটাতে। বিন্তু বিচ্ছেদ হলেই কি সমাধান? একটা সম্পর্ক গড়তে যে সময় বা অধ্যাবসায় লাগে, সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই সম্পর্ক ভাঙার আগেও অনেকবার ভাবা প্রয়োজন। 


বিজ্ঞাপন


বিষাক্ত সম্পর্ক বয়ে বেড়ানোর চেয়ে ভেঙে ফেলাটা কখনো কখনো আরও বড় ভুলও হয়ে যেতে পারে। যা আরও কষ্টকর। কী করবেন তাহলে?

নিজের ভুল যতো দ্রুত বুঝতে পারবেন, ততোই মঙ্গল: 
সম্পর্ক বিষাক্ত হয়ে উঠলে আগে বোঝার চেষ্টা করুন, আপনার নিজের ভুলটা আসলে কোথায়? আপনার দুর্বলতাগুলো আলাদা করুন। নিজের ভুল মনে হলে সেটি যথাসম্ভব দ্রুত শোধরানোর চেষ্টা করুন। নিজের দুর্বল পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোও সমাধান করার চেষ্টা করুন। এই কাজগুলো যতো দ্রুত করতে পারবেন, ততোই মঙ্গল। দুই পক্ষেরই উচিৎ নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজেদের ভুল শোধরানোর চেষ্টা করা।   

bad-relationship-3বোঝার চেষ্টা করুন: 
নিজের জায়গা থেকে শুধরে নিয়েও যদি সমাধান না পান, তাহলে অন্য পক্ষকে বোঝার চেষ্টা করুন। সে আসলে কী চায়— আপনাকেই চায়? নাকি অন্য দিকে আগ্রহ? আস্তে আস্তে বিস্তারিত বোঝার সেষ্টা করুন। তবে হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি বিষয় মাথায় রাখবেন। তা হলো— সন্দেহ বাতিকগ্রস্থ হবেন না। তাকে বুঝতে চেষ্টা করতে গিয়ে উঠতে-বসতে সারাদিন তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করবেন না। অনর্থক তা সব কাজে খবরদারি নজরদারি করবেন না। তাকে তার মতো থাকতে দিন, তার দৈনন্দিন আচরণ নীরবে পর্যবেক্ষণ করুন। ঘুণাক্ষরেও যেন তার কাছে মনে না হয় যে— আপনি তাকে সন্দেহ করছেন। সন্দেহ নিজের মাথা থেকেও দূরে রাখুন। অস্থির হবেন না। সুষ্ঠভাবে সব কাজ করুন।  

আবারও চেষ্টা করুন: 
নিবিড় পর্যবেক্ষণে যদি আপনার মনে হয়, সে আসলে আপনাকে চায় না। অন্য কোনও দিকে তার আগ্রহ আছে— তাহলেও তাকে এ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। প্রথমত সে আসলে কী ধরণের চায়— নিজেকে সেইভাবে প্রস্তত করুন। সেটা না করা সম্ভব হলেও— অন্তত তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে, আপনিই তার জন্য সর্বোত্তম। অনর্থক চেঁচামেচি করবেন না। তাকে মেন্টাল সাপোর্ট দিন, যেকোনোরকম মুহুর্তে তাকে আশ্বস্ত করুন। যাতে তার কাছে মনে হয়, তার জন্য আপনার চেয়ে ভালো কেউ হতে পারে না। এতে তার মন শান্ত হবে। আপনার প্রতি আগের আন্তরিকতা ফিরেও আসতে শুরু করতে পারে। 


বিজ্ঞাপন


সমাধানের চেষ্টায় বিফল হলে…
এত সব চেষ্টায়ও যদি কাজ না হয়, তাহলে বুঝবেন সময়টা আসলেই বড় কঠিন রূপ ধারণ করেছে। এই বিষ নামানো আসলে প্রায় অসম্ভব। ধৈর্য ধরুন। নিজের জায়গা থেকে সঠিক থাকুন। ভুল করা যাবে না। সে যদি আপনাকে ছেড়েও যায়— নিজের অবস্থান পরিষ্কার রাখবেন, যাতে দেরিতে হলেও সে বুঝতে পারে যে— আপনিই আসলে ঠিক ছিলেন, আর সে ভুল। 

relationshipত্যাগের প্রশ্নে ছাড় দিবেন না:
যেকোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার অন্যতম প্রধান শক্তি হলো— ত্যাগ বা স্যাক্রিফাইস করা। নিজের জায়গা থেকে স্যাক্রিফাইস করতে ভুলবেন না। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে করার মানসিকতা রাখতেই হবে।

আপনি কী চান, সেটাই সব:
সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি কী চান, সেটাই আসলে সব। আপনি যদি চান যেকোনও মূল্যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবেন, তাহলে সেই চেষ্টাটাই করবেন। আর যদি মনে করেন— অনেক হয়েছে, আর এভাবে সম্ভব না। তাহলে অন্য হিসাব। 

‘অন্তিম সিদ্ধান্ত’ যদি নিতেই হয়:
যদি দেখেন, বেশির ভাগ সময় আপনাকেই পতনের অংশীদার হতে হচ্ছে, প্রেমের সম্পর্ক চালাতে গিয়ে আপনার অন্যান্য পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক জলাঞ্জলি দিতে হচ্ছে, সবচেয়ে বড় কথা, নিজের ব্যক্তিগত জীবন আর স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ছে। আরেকজনকে ভালোবাসতে গিয়ে যদি নিজের স্বাভাবিকতাই বদলে ফেলতে হয়, তাহলে সেটা সুস্থ সম্পর্ক নয়! তখনই বুঝবেন সম্পর্কটা আর সুস্থ নেই। তখন এই বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে বের হওয়া ছাড়া উপায় নেই বলেই মনে হবে। আর এই সিদ্ধান্ত যদি নিতেই হয় অপর পক্ষের প্রতিটি কাজের পেছনে নিজের মনকে অজুহাত না দিয়ে বরং সম্পর্কের লালবাতিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিন।

relationshipমানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন:
এবার আসে কঠিন সিদ্ধান্তকে বাস্তবে রূপান্তর করার বিষয়। মুখে বলা যতটা সহজ, করা ততটা সহজ নয়। ব্রেকআপ করাটা সব সময়ই কঠিন, বিশেষ করে টক্সিক রিলেশনশিপে। সে জন্য কী বলবেন, সেটা আগেই ভেবে নিন। মেজাজের খেই হারাবেন না। পুরোনো স্মৃতি, ঝগড়া যত তুলে আনবেন, বিষয়টি তত খারাপের দিকে যাবে। তাতে সম্পর্ক চুকানো তো হবেই না, উল্টো দেখা যেতে পারে দিনটা নিত্যদিনের আরেকটি ঝগড়ায় পরিণত হয়েছে। পা ফসকে আবেগের গর্তে পড়ে খেই হারাবেন না। সম্পর্কটা যে আর কাজ করছে না, সে ব্যাপারে আগে থেকেই স্পষ্ট হন। শুধু অপর পক্ষের নয়, নিজের ভুলগুলোও তুলে ধরে সম্পর্কে যে আর থাকতে চান না, সেটাও বুঝিয়ে বলুন। দুজনের বোঝাবুঝিই পারে সম্পর্ক সমাপ্তির তিক্ত অভিজ্ঞতা কিছুটা হলেও লাঘব করতে।

নিজের সিদ্ধান্তে আত্মবিশ্বাসী হোন:
সিদ্ধান্ত যেহেতু নিয়েছেনই ভেবেচিন্তেই নিয়েছেন। তাই নিজের সিদ্ধান্তে আত্মবিশ্বাসী থাকুন। হীনমন্যতায় ভুগবেন না। টক্সিক রিলেশনশিপে থাকাটা শুধু নিজের মন নয়, শরীরের ওপরও অনেক বড় প্রভাব ফেলে। একটা সম্পর্ক ছেড়ে আসা সহজ বিষয় নয়। ছেড়ে আসার কিছুক্ষণ পরেই মনে হবে, সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল না তো? যেমনই হোক ছিল তো...ফিরে যাওয়ার তাড়না মনে মনে পোড়াবে। এমন সময় নিজেকে শক্ত রাখাটা জরুরি। নিজেকে যে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাচ্ছিলেন, তাতে মনোযোগ দিন। টক্সিক রিলেশনশিপ আপনার উন্নতিতে যে বাধাটা দিচ্ছিল, সেটাকে উতরে নতুন মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করুন। সমস্ত ইতিবাচকতা আর শুভবোধকে নিজের দিকে টেনে নিন। 

এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর