শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পিসিওএস: নারীর যে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ চিকিৎসকদেরও অজানা 

ফারদীন হক জ্যোতি
প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

পিসিওএস: নারীর যে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ চিকিৎসকদেরও অজানা 

নারীদের নানা জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস)। হরমোনজনিত এই রোগটির কারণে অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া, দেহে লোমের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। পিসিওএস নিয়ে বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা কম। জটিল এই স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে বিশদভাবে জানা জরুরি। 

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) কী


বিজ্ঞাপন


এটি এমন একটি অবস্থা যা একজন নারীর শরীরের স্বাভাবিক হরমোনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। পিসিওএস হলে মহিলাদের দেহ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে পুরুষ হরমোন তৈরি করে। এই হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে শরীর স্বাভাবিকভাবে মাসিক বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ নিয়মিত পিরিয়ড হয় না। পরবর্তীতে এমন নারীদের গর্ভধারণ করাও জটিল হয়। 

pcos

পিসিওএস কীভাবে পিরিয়ডে বাধা সৃষ্টি করে  

সাধারণত সুস্থ নারীদের শরীর প্রত্যেক মাসে একটি করে ডিম্বাণু ছেড়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় এটি বন্ধ থাকে এবং পরবর্তীতে সাধারণ মাসিক চক্রে রূপ নেয়। পিসিওএস এ আক্রান্ত নারীদের শরীরে পুরুষ হরমোনের আধিক্যের কারণে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। ফলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বড় হয়ে ডিম বের হওয়ার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এর জন্য কেবল গর্ভধারণেই নয় বরং নিয়মিত ঋতুচক্রও বাধাগ্রস্ত হয়। 


বিজ্ঞাপন


কত বছর বয়সে হয়? 

মূলত ১৫ থেকে ৪৪ বছরের নারীদের মধ্যে পিসিওএস এর সমস্যা বেশি দেখা যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে এই বয়সের নারীদের মধ্যে ২.২ থেকে ২৬.৭ শতাংশের মধ্যে পিসিওএস রয়েছে। আবার লক্ষ্য করা যায় অনেক নারীর সমস্যাটি থাকার পরও তারা এটি সম্পর্কে জানেন না। একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, ৭০ শতাংশ মহিলার কখনো এই সমস্যাটি বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে নির্ণয় করেননি। 

pcos

পিসিওএস ভোগা নারীদের অ্যান্ড্রোজেন বা পুরুষ হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অপরদিকে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। এই অতিরিক্ত পুরুষ হরমোন মাসিক চক্রকে ব্যাহত করে, তাই এই সময় মহিলাদের স্বাভাবিকের চেয়ে কম পিরিয়ড হয়। যা পরবর্তীতে গর্ভধারণের সময় বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি করে। 

পিসিওএস এর কারণ 

পিসিওএসের কারণ কী তা এখনো সম্পূর্ণভাবে ডাক্তাররা জানেন না। তারা বিশ্বাস করেন যে পুরুষ হরমোনের উচ্চ মাত্রা ডিম্বাশয়কে হরমোন তৈরি করতে এবং স্বাভাবিকভাবে ডিম তৈরি করতে বাঁধা দেয়। এই সমস্যার কারণ হতে পারে জিনগত। তাছাড়াও অতিরিক্ত স্থূল নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। 

pcos

পিসিওএস-এ আক্রান্ত ৭০ শতাংশ নারীর ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। যার অর্থ তাদের কোষগুলি সঠিকভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না। ইনসুলিন শরীরকে শক্তির জন্য খাবার থেকে চিনি ব্যবহার করতে সাহায্য করে। যখন কোষগুলি সঠিকভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না, তখন শরীরের ইনসুলিনের চাহিদা বেড়ে যায়। অগ্ন্যাশয় এ ক্ষতিপূরণের জন্য আরও ইনসুলিন তৈরি করে। অতিরিক্ত ইনসুলিন ডিম্বাশয়কে আরও পুরুষ হরমোন তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করে। 

এটি পিসিওএস আক্রান্ত নারীদের ক্ষেত্রে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ স্থূলতা ইনসুলিন প্রতিরোধের একটি প্রধান কারণ। পিসিওএস এর জন্য একইসঙ্গে স্থূলতা বৃদ্ধি এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ করার ক্ষমতা দেহে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। 

pcos

লক্ষণ কী?

ইতালীয় চিকিৎসক আন্তোনিও ভ্যালিসনেরি প্রথম ১৭২১ সালে পিসিওএস এর কিছু লক্ষণ বর্ণনা করেছিলেন। রোগটির লক্ষণ সাধারণত কিছু নারীর ক্ষেত্রে তাদের প্রথম মাসিকের সময় থেকেই দেখা যায়। অন্যরা কেবল তাদের অনেক ওজন বেড়ে যাওয়ার পরে বা তাদের গর্ভবতী হতে সমস্যা হওয়ার পরেই বুঝতে পারেন যে তাদের পিসিওএস আছে। 

পিসিওএস এর সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হলো- অনিয়মিত পিরিয়ড। ডিম্বস্ফোটনের অভাব জরায়ুর আস্তরণকে প্রতি মাসে বাধা দেয়। পিসিওএস-এ আক্রান্ত কিছু নারী বছরে আটটিরও কম পিরিয়ড পান বা একেবারেই পান না। তাছাড়াও অনেকের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণও হয়ে থাকে। আবার মুখ, পিঠসহ বিভিন্ন স্থানে অনেকের অতিরিক্ত চুল গজিয়ে থাকে, এই চুল গজানোকে বলে হিরসুটিজম। এছাড়াও অতিরিক্ত ব্রণের সমস্যা, মাথার চুল ঝরে পড়া, ত্বকে লালচে ভাব, শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালো দাগ হয়ে থাকে। হরমোনের পরিবর্তনের ফলে কিছু নারীর অতিরিক্ত মাথাব্যথা ও অবসাদের সমস্যাও দেখা যায়। 

pcos

চিকিৎসা

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটার কোনো নিদিষ্ট কারণ নেই তাই এর চিকিৎসা পদ্ধতিও সমস্যার মাত্রা অনুসারে পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রথমেই এটি ধরা পরলে পরবর্তীতে চিকিৎসার মাধ্যমে এই জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে রোগটি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। পিসিওএস থেকে মুক্তির জন্য নারীদের দৈনন্দিন জীবনধারণের পরিবর্তন করতে হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম করা, ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি বেশি পরিমাণে গ্রহণ, ডায়েট কন্ট্রোল করে ওজন কমানো এগুলোই এই সমস্যার মূল চিকিৎসা। রোগী যদি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন তাহলে পিরিয়ড স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়। তবে পিসিওএস এর রোগীদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা খুব একটা সহজ নয়। 

এছাড়াও বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নিয়মিত চিকিৎসা করলে এটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন ডট কম 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর