শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পৃথিবীর কোণায় কোণায় ঘুরে ছবি তুলতে চান অপু

মাহবুবা ইসলাম সুজানা
প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২২, ১২:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

পৃথিবীর কোণায় কোণায় ঘুরে ছবি তুলতে চান অপু

সময় ২০১৪। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন শখের বসেই ছবি তোলায় হাতেখড়ি হয়েছে তার। নতুন ফোন হাতে পেয়ে টুকটাক ছবি তোলার চেষ্টা করতেন সবসময়। তবে ছবি তোলার প্রতি আগ্রহের ব্যাপারটা ছোটোবেলা থেকেই ছিল। বাড়িতেই মায়ের একটা পুরাতন ফিল্ম ক্যামেরা ছিল। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঐ ক্যামেরা দিয়েই ছবি তোলা হতো সবার। সেখান থেকেই ক্যামেরা ও ছবি তোলার প্রতি আগ্রহ। একটা সময়ে হঠাৎ সেই ক্যামেরা অকেজো হয়ে যায়। অষ্টম শ্রেণিতে গিয়ে নিজের ফোন হাতে পেয়ে ছবি তোলা শুরু করেন। এভাবে চলতে চলতে এক সময় প্রফেশনাল পর্যায়ে ফটোগ্রাফি করার কথা ভাবেন। ২০১৬ সালের দিকে বেশ গুরুত্ব সহকারে ফটোগ্রাফি শুরু করেন।

বলছিলাম তানজিদ আহমেদ অপুর কথা। বর্তমানে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল & ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। ছেলেবেলা কেটেছে পাবনায়। ২০১৭ সালে পাবনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এরপর ২০১৯ সালে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন। 


বিজ্ঞাপন


apuছবি তুলতে ভীষণ ভালোবাসেন অপু। মূলত মানুষ, মানুষের জীবনকে ছবির ফ্রেমে আবদ্ধ করতে পছন্দ করেন। ট্রাভেল ও স্ট্রিট ফটোগ্রাফির প্রতিই বেশি ভালোলাগা কাজ করে তার। ছবি তোলার গল্প বলতে গিয়ে অপু বলেন, ‘একবার পদ্মার চরে ঘোড়ার গাড়ির প্রতিচ্ছবি তুলতে গিয়ে পকেটে ফোন মানিব্যাগসহ কাদা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। ছবিটা বেশ মনমতোই হয়। ছবি তোলা শেষে টের পাই যে পকেটে মানিব্যাগ আর ফোন।’

প্রথম ক্যামেরা কেনার গল্প শুনতে চাই অপুর কাছে। তিনি জানান, শুরুর দিকে ফোন দিয়েই বছরখানেক ছবি তুলেছেন। এমনকি বেশকিছু জাতীয় এক্সিবিশনেও অংশ নিয়েছেন। এরপর ছবি তোলার প্রতি আগ্রহ আর প্রতিভা দেখে একজন ফটোগ্রাফার তাকে তার নিজের ক্যামেরা গিফট করেন। সেটি দিয়েই অনেকদিন ফটোগ্রাফি চালিয়ে যান। 

apuবিভিন্ন সময়ে এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ ও ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করে পাশাপাশি নিজের জমানো টাকা দিয়ে ২০১৮ তে একটা ক্যামেরা কিনেন। যদিও সেই ক্যামেরা আড়াই মাসের মধ্যেই চুরি হয়ে যায়। এরপর ক্যামেরা ছাড়া অনেক বড় একটা সময় বিরতিতে কাটালেও পরবর্তীতে ২০২০ এ ফুজিফিল্ম মিররলেস ক্যামেরা কিনেন, এখন এটি দিয়েই ফটোগ্রাফি চালিয়ে যাচ্ছেন।

একদম শুরুর দিকে পড়াশোনার ফাঁকে ছবি তোলার ব্যাপারটায় পরিবারের আপত্তি থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করার পর সবসময়ই তারা সাপোর্ট দিয়েছেন। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই ৯টি জেলা ঘুরে ঘুরে ছবি তুলেছেন। তখন পরিবারের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছেন। 


বিজ্ঞাপন


apuব্রেক দ্য সার্কেল, বাংলাদেশ ইন ফ্রেমস, ড্রিম বিয়ন্ড ইমাজিনেশন, বিকজ আই ওয়াজ দেয়ার, টেল অব ডার্করুম, লাইফ ইন ফটোসসহ প্রায় ৩০টি জাতীয় এবং ১০-১৫টি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে লন্ডন স্ট্রিট ফটোগ্রাফি ফেস্টিভ্যাল এ ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৮ সালে ফাইনালিস্ট ছিলেন।

ফটোগ্রাফি পেশাকে এখনও সমাজ আড় চোখে দেখলেও এই তরুণের বিশ্বাস সময় বদলাবে এবং মানুষ ফটোগ্রাফার হিসেবে পেশা নিয়ে যেসব প্রচলিত মিথ মেনে চলেন তা থেকে বের হয়ে আসবে। কারণ এই পেশা থেকে ভালো আয় করা সম্ভব। তবে তা নির্ভর করে একজনের ছবি তোলার স্কিলের ওপর। ভালো ছবি তুলতে পারলে অবশ্যই এই পেশায়ই ভালো আয় করা সম্ভব। 

apuছবি তোলার জন্য এখন পর্যন্ত দেশের ২৯টি জেলা ঘুরে ফেলেছেন অপু। পড়াশোনার পাশাপাশি বর্তমানে ঢাকায় একটি ই-কমার্স সাইটের ফটোগ্রাফি ডিপার্টমেন্টের হেড হিসাবে কর্মরত আছেন। ভবিষ্যতে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছা আছে তার। সেই সঙ্গে ছবি তোলা চালিয়ে যেতে চান। আপাতত পড়াশোনার চাপে ট্রাভেল বা স্ট্রিট ফটোগ্রাফিতে আগের মতো সময় দিতে পারছেন না। তবে ইচ্ছা আছে গ্র্যাজুয়েশনের পর আবার দেশে বা দেশের বাইরে গিয়ে স্ট্রিট এবং ট্রাভেল ফটোগ্রাফিটা নতুন করে শুরু করার। পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় ঘুরে ঘুরে ছবি তুলতে চান তিনি। 

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর