শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

ফটোগ্রাফি সংক্রান্ত ১০ তথ্য যা অবাক করবে আপনাকে

ফারদীন হক জ্যোতি
প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২২, ০৯:১৫ এএম

শেয়ার করুন:

ফটোগ্রাফি সংক্রান্ত ১০ তথ্য যা অবাক করবে আপনাকে

একটি ছবি অনেক কথা বলে। না বলা গল্প গল্পের বাহক একটি স্থিরচিত্র। আজ (১৯ আগস্ট) বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস (World Photography Day)। ১৮৩৯ সাল থেকে ১৯ আগস্ট থেকে এই দিনটি বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। 

সুন্দর সুন্দর ছবি তুলতে কার না ভালো লাগে। আগের যুগে ছবি তোলার কাজটি সহজ না থাকলেও বর্তমানে আমাদের মুঠোফোনে ক্যামেরা থাকাতে এটি অনেকটা সহজ কাজে পরিণত হয়েছে। ফটোগ্রাফি অনেকেই করেন শখের বসে। আবার অনেকেই এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। 


বিজ্ঞাপন


ফটোগ্রাফি নিয়ে এমন আশ্চর্যজনক কিছু তথ্য রয়েছে যা হয়তো একজন ফটোগ্রাফার বা ফটোপ্রেমী হয়েও এর আগে জানতেন না। চলুন জেনে আসা যাক ফটোগ্রাফির জগতের কিছু অজানা তথ্য। 

photoছবি মানেই গোমড়া মুখ! 

খুব পুরনো কোনো ছবি যদি আপনার দেখার সৌভাগ্য হয় তাহলে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন সেই ছবিগুলোতে থাকা মানুষদের মুখে হাসি নেই। আপনার মনেও নিশ্চয় প্রশ্ন এসেছে কেন তারা এমন গোমড়া হয়ে তাদের ছবিটি তুলেছে! কারণ সেই সময় প্রযুক্তি ততটা উন্নত ছিল না, একটি ছবি সঠিকভাবে ধারণ করতে কয়েক ঘণ্টা সময় নেওয়া হতো। সেই সময় একটি ছবি তোলার জন্য তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থির থাকতে হতো। পুরোটা সময় তাদের মাথাও সোজা রাখতে হতো। অবশ্যই ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসি দিয়ে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা ছিল একটি অসম্ভব কীর্তি। তাই আগের কালের ছবিগুলো হাসি ছাড়াই তুলতে সবাই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। 

কোন পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবেন? 


বিজ্ঞাপন


কোন পাশে দাঁড়িয়ে বা বসে ছবি তুলবেন তা নিয়ে যদি দ্বিধায় থাকেন তাহলে এই তথ্যটি আপনার জন্য। কারণ ওয়েক ফরেস্ট ইউনিভার্সিটির কেলসি ব্ল্যাকবার্ন এবং জেমস শ্রিলো পরিচালিত গবেষণা মতে আমাদের মুখের বাম দিকের ছবি ডান দিকের ছবির চেয়ে স্থিরচিত্রে ভাল দেখায়। তাদের এই গবেষণা দেখায় যে আমাদের মুখের বাম দিকে আবেগের একটি বৃহত্তর তীব্রতা প্রদর্শন করে এবং এজন্যই সাধারণত আমরা এটিকে আরও আকর্ষণীয় ও সুন্দর বলে মনে করি।

photoদুই মিনিটে এত ছবি তোলা হয়! 

আপনি কি জানেন প্রতি দুই মিনিটে কতগুলো ছবি তোলা হয়? জানলে অবাক হবেন পুরো আশির দশকে তোলা ছবির চেয়ে এই সংখ্যা বেশি। প্রথম বাণিজ্যিক ক্যামেরা চালু হওয়ার সময় পর্যন্ত ৮০ বছরে মাত্র কয়েক মিলিয়ন ছবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৯ সালে থেকে কোডাক রিপোর্ট মতে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ছবি তোলা হয়েছিল। অনুমান করা হয় যে শুধুমাত্র ফেসবুকে বছরে ৭৩০ বিলিয়ন ছবি শেয়ার করি। এর মধ্যে খাবারের ছবি, বেড়ানোর ছবি আর সেলফি বেশি প্রাধান্য পায়। 

বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা 

ডিজিটাল ক্যামেরা বর্তমানে একটা পরিচিত ক‍্যামেরার নাম কিন্তু এটি আবিষ্কার হয় ১৯৭৫ সালে এটিই বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা। ১৯৭৫ সালে, স্টিভেন স্যাসন বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা আবিষ্কার করেন এই সময় তিনি ইস্টম্যান কোডাক এ কর্মরত ছিলেন। 

photoএক ব্যক্তির ৪৪২৫টি ক্যামেরা 

ক‍্যামেরার প্রতি আপনার আলাদা আকর্ষণ থেকে থাকে তাহলে আপনি জেনে অবাক হবেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ক্যামেরা যার সংগ্রহে আছে তার কাছে মোট ৪,৪২৫টি অ্যান্টিক ক্যামেরা আছে। এই সংগ্রহশালার মালিক মুম্বাইয়ের ফটোসাংবাদিক দিলিশ পারেখ।

এত ওজন! 

প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরার ওজন ছিল একটি আধুনিক ডিএসএলআর এর থেকে চার গুন বেশি।  স্টিভেনের আবিষ্কৃত ক্যামেরার ওজন প্রায় ৮ পাউন্ড অর্থাৎ ৩.৬ কেজি এবং এতে মাত্র ০.০১ এমপি শট করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে একটি আধুনিক ডিএসএলআর এর গড় ওজন প্রায় ২ পাউন্ড হয়ে থাকে।

photoফেসবুকে রোজ ৩০০ মিলিয়নের বেশি ছবি আপলোড হয় 

সাধারণত প্রতিদিন কত ছবি তোলা হয় তার কোনো নিদিষ্ট সংখ্যা নেই তবে কিছু তথ্যের ভিত্তিতে অনুমান করা হয় যে এক বছরে এক ট্রিলিয়নেরও বেশি ছবি তোলা হয়। ইনস্টাগ্রামে প্রতিদিন গড়ে ৯৫ মিলিয়ন ছবি আপলোড করা হয় এবং ফেসবুকে প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি ছবি আপলোড করা হয়ে থাকে।

টমাস সাটনের অবদান 

বিশ্বের প্রথম রঙিন ছবি তোলা হয়েছিল ১৮৬১ সালে। টমাস সাটন বিশ্বের প্রথম রঙিন ছবি তোলার প্রক্রিয়াটির প্রস্তাব দেন। ছবিতে তখন লাল, সবুজ এবং নীল রং এর তিনটি পৃথক ফিল্টার ব‍্যবহার করা হয়েছিল। তখন সংশ্লিষ্ট ফিল্টারগুলির সঙ্গে একটি আলোক সংবেদনশীল প্লেট প্রক্ষেপিত করা হয়। যার ফলাফল রঙিন ছবি। সাটন একজন মহান ফটোগ্রাফার এবং উদ্ভাবক ছিলেন। প্রায় একই সময়ে রঙিন ছবি তোলার পাশাপাশি তিনি প্রথম এসএলআর ক্যামেরাও তৈরি করেন। এছাড়াও তিনিই ছিলেন যিনি ১৮৫৯ সালে ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্স সহ প্রথম দিকের প্যানোরামিক ক্যামেরা তৈরি করেছিলেন। এর জন্য এখন পর্যন্ত ফটোগ্রাফির দুনিয়া তাঁর কাছে অনেক ঋণী।

photoসবচেয়ে ব্যয়বহুল আলোকচিত্র 

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফটোগ্রাফটি ৪.৩ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছি ৷ ১৯৯৯ সালে, আন্দ্রেয়াস গুরস্কি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবি ‘রাইন’ এর ক্যাপচার করেছিলেন। বারো বছর পরে ২০১১ সালে এটি নিলামে একটি অবিশ্বাস্য মূল্য ৪,৩৩৮,৫০০ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। এটি এখন পযর্ন্ত বিক্রিত সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবি। পরবর্তীতে পিটার লিক একটি ছবি ৭ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি দামে বিক্রি করার দাবি করেছেন কিন্তু এর কোনো প্রমাণ নেই কারণ ক্রেতার নাম বেনামী ছিল। 
বিড়ালের ছবি তোলার ট্রেন্ড বেশ পুরনো 

বিড়াল প্রেমিদের অনেকেই নিজের পোষা বিড়ালের ছবি তুলতে পছন্দ করে। এই বিড়ালের ছবি তোলার বিষয়টি কিন্তু মোটেও আধুনিক যুগের কোনো ট্রেন্ড নয়। বরং বিড়ালের ফটোগ্রাফির ধারণা আপনার অনুমানের চেয়েও পুরানো। বহু যুগ পুরাতন এই ট্রেন্ডটি এখনও গুগলের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুসন্ধানগুলির মধ্যে একটি। এই ভাইরাল ফটোগ্রাফির বিষয়টি ১৮৭০ এর দশকে জন্ম হয়েছিল যখন হ্যারি পয়েন্টার তার বিড়ালের একটি ছবি তুলেছিলেন। বর্তমানে যারা বিড়ালের ছবি তুলতে ও দেখতে পছন্দ করেন তারা অবশ্যই ঐ মানুষটিকে মনে মনে একটা ধন্যবাদ দিতে ভুলে যাবেন না।

ছবি তুলতে বা দেখতে তো ভালোবাসেন। কিন্তু এই বিষয়টি সম্পর্কে আশ্চর্য হওয়ার মতো এই তথ্যগুলো কি জানা ছিল আপনার? 

লেখক পরিচয়: ফিচার লেখক

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর