বুধবার, ১ মে, ২০২৪, ঢাকা

‘শেখ রাসেলকে কেন মারলো ওরা?’

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২২, ০১:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

‘শেখ রাসেলকে কেন মারলো ওরা?’

শোকাবহ ১৫ আগস্ট আজ। বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক কলঙ্কময় দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিন জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, আবহমান বাংলা ও বাঙালির আরাধ্য পুরুষ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কেবল তিনি নয়, ঘাতকদের বুলেট থেকে রক্ষা পাননি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নারী-শিশুরাও। ঘৃণ্য কাপুরুষ এ ঘাতকচক্রের হাতে প্রাণ দিতে হয় তাদের। 

সময় বয়ে যায়, ইতিহাস রয়ে যায়। স্বপরিবারে জাতির পিতাকে হারানোর এই দিনটির ইতিহাস আজও মানুষের চোখে পানি এনে দেয়। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে তরুণ, যুবক সবার মনেই জাগে নানা প্রশ্ন। কষ্টের তীব্রতা ফুটে ওঠে তাদের ভাষায়। 


বিজ্ঞাপন


rasel
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে শেখ রাসেল

রাজধানী একটি বেসরকারি স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র তারাজ মুহাম্মদ রাশাদ। বড় মামার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ এর বাড়িতে ঘুরতে যায় সে। রাশাদ বলে, ‘বঙ্গবন্ধুর কথা এত শুনেছি। একদিন বড় মামাকে বললাম, চলো, বঙ্গবন্ধুর বাড়িটা দেখবো। মামাও রাজি হয়ে গেলেন। একবার নানুর সঙ্গে গিয়েছিলাম, তখন বাড়িটাতে ঢুকতে পারিনি। বন্ধ ছিল। ওইদিনের কথা মনে পড়ে গেল। যদি আজও বন্ধ পাই!’

নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে রাশাদ বলে, ‘টিকিট কেটে বাড়িটার ভেতর ঢুকলাম। বাড়িটা এখন জাদুঘর। খুব ভয় লাগছিল। এতো বড় বাড়ি। এই বাড়িতেই নাকি বঙ্গবন্ধু থাকতেন। আমাদের বাসায় অল্প কজন মানুষ থাকেন। কিন্তু এই বাড়িতে নাকি অনেকগুলো মানুষ থাকতেন। এত বড় বাড়িতে আমি থাকলেও খুব মজা হতো। খেলতে পারতাম অনেক।’ 

rashad
তারাজ মুহাম্মদ রাশাদ

ধানমন্ডি ৩২ এর বাড়িটির প্রতিটি জায়গায় ছড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু আর তার পরিবারের অসংখ্য স্মৃতি। বাড়িটিতে ঢুকলেই সবার প্রথমে চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধুর বড় একটি ছবি। রাশাদ বলে, ‘মামা বলেছে নিচতলার ঘরটা নাকি ড্রয়িংরুম ছিল। বঙ্গবন্ধু এখানে অনেক বড় বড় মানুষদের সঙ্গে মিটিং করতেন। পাশের ঘরটা ছিল বঙ্গবন্ধুর পড়ার ঘর। এখানে বসে তিনি লেখালেখিও করতেন। মামা জানালেন, এখান থেকেই নাকি বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠিয়েছিলেন।’

‘আমরা এরপর দোতলায় যাই। মামা জানালেন প্রথম ঘরটি বঙ্গবন্ধু ব্যবহার করতেন। এর পরের ঘরটিতে তিনি ঘুমাতেন। চারপাশে অনেক জিনিস ছড়িয়ে ছিল। আমার চোখ গেল দুটো সাইকেলের দিকে। একটি লাল সাইকেল, আরেকটি নীল। আরেকটু বড় হলে আম্মুকে বলবো আমাকে ওরকম একটা সাইকেল কিনে দিতে।’— যোগ করে রাশাদ। 

rasel
শেখ রাসেলের সাইকেল

ছোট্ট এই শিশুটি ফের বলে, ‘মামা জানালেন ওগুলো নাকি শেখ রাসেলের সাইকেল। আরও খেলনা আছে সেখানে। বল, হকিস্টিক, ব্যাট আর হেলমেট। আচ্ছা শেখ রাসেল কি আমার মতো খেলত? সে কি ঘরের মধ্যে সাইকেল চালিয়ে বেড়াত? খারাপ মানুষগুলো বড়দের না হয় মেরেছে, কিন্তু রাসেলকে মারলো কেন? সে কী দোষ করেছিল?’

রাশাদের চোখে জল ছলছল করছে। কাঁদো কাঁদো চোখে সে বলে উঠল, ‘শেখ রাসেলকে কেন মারলো ওরা?’ এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া কঠিন। কাপুরুষের দলেরা হয়তো বন্ধবন্ধুর অস্তিত্ব মুছে ফেলতে চেয়েছিল। তাই হয়তো মানবতার ঘৃণ্য শত্রু-খুনি ঘাতক চক্রের নির্মম বুলেটের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেল। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর