শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘স্ত্রীই এখন আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু’ 

তৌহিদ আকাশ
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০২২, ০৩:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

‘স্ত্রীই এখন আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু’ 

অদ্ভুত এক মানব জীবন আমাদের। পরিবারের পরে জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় কাটানো হয় বন্ধু নামক সম্পর্কের মানুষদের সঙ্গে। অথচ এই বন্ধুদের বন্ধুত্ব রক্ষায় আমাদের কোনো বাড়তি শ্রম দিতে হয় না। কিছু বন্ধুত্ব বহুবছর পরেও থেকে যায় একই রকম। অথচ বহু বছরে দেখা হয়নি একবারও, কথা হয়নি এমনকি দেখা হবে কিনা তাও জানা নেই। কিন্তু বন্ধুত্ব রয়ে গেছে আগের মতই। 

সময়টা ১৯৯৮ সাল। রাজধানী ঢাকার জুরাইন এলাকার একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে তখন আমি ৩য় শ্রেণিতে পড়ি। স্কুলের নাম সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন স্কুল। এই স্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকে অধ্যয়ন শুরু হয়েছিল। সেই সময়ে আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাও ভালো ছিল না যে আমাকে একটা ব্যক্তি মালিকানাধীন কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়াতে পারে। তারপরেও বাবা মা চেষ্টা করে কষ্ট করে আমাকে ভালো স্কুলেই পড়াচ্ছিলেন। কিন্তু ওই ছোট বয়সেই মাথার মধ্যে দারিদ্রতা জিনিসটা এঁটে গিয়েছিলো ভালোভাবে। 


বিজ্ঞাপন


ক্লাসের অন্যান্য সহপাঠীদের মতো ভালো জামা জুতো ব্যাগ আমার ছিল না। আমার জামাটা অন্যদের তুলনায় কম উজ্জ্বল থাকতো, কুঁচকানো থাকতো। আর এসবের কারণে নিজের কাছে ওইটুকু বয়সেই নিজের ছোট ছোট লাগত।  

akashক্লাস টু তে পড়ার সময় হঠাৎ করে একদিন একটা ছেলে আমাকে ডেকে ওর পাশে বসালো। আমার সঙ্গে গল্প করতে লাগলো। ক্লাস চলাকালীন সময়েও আমরা ফিসফিস করা শুরু করলাম। শিক্ষকদের নজরে এলে বকুনিও চলতো। কিন্তু আমাদের ফিসফিস আর থামে না। 

অল্প কদিনেই দারুণ সখ্যতা হয়ে গেলো আমাদের দুজনের। সখ্যতা রূপান্তরিত হলো বন্ধুত্বে। একদিন স্কুল ছুটির পরে দুজনে মিলে কোথাও একটা চলে গেছিলাম। অনেক বড় বালুর তীর, সম্ভবত কোন নদীর পাড়েই গিয়েছিলাম। আর ঢাকা যেহেতু, নদী অবশ্যই বুড়িগঙ্গাই হবে হয়তো। কিন্তু ২৪ বছর পরে এসে পুরো ঘটনা বা জায়গা কিছুই স্পষ্ট মনে করতে পারি না। 

সারাদিন ঘোরাঘুরির পর যখন বাসায় ঢুকবো, বাইরে থেকে শুনি মায়ের কান্নার আওয়াজ। হয়তো ভেবেছিলেন কোনো ছেলে ধরার খপ্পরে পড়েছি। 


বিজ্ঞাপন


akashসেই বন্ধুটির নাম শুভ। ১৯৯৮ সালে ঢাকা থেকে স্থায়ীভাবে চলে আসি রাঙ্গামাটি। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি, হয়তো হবেও না কোনদিন। ওর পুরো নামটাও মনে নেই আমার। শুধু 'শুভ' পর্যন্ত মাথায় গেঁথে আছে। এখনো ওই বন্ধুর কথা মনে করে আনন্দ পাই যে বন্ধুকে হারিয়ে এসেছি ২৪ বছর আগে। 

আমাদের জীবনে বন্ধুর আসা যাওয়া ঘটতে থাকে। অনেক নতুন বন্ধু হয় আবার পুরনো অনেক বন্ধু জীবনের দোহাই দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। এই আসা যাওয়ার মিছিলে যে থেকে যায় সেই আসল বন্ধু। আমি ভাগ্যবান আমার জীবনে কিছু বন্ধু থেকে গেছে। তবে নিজের বিবাহের প্রায় তিন বছর পরে এসে উপলব্ধি হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এখন আমার স্ত্রী ‘আলভী’।

প্রায় সব বন্ধুই ক্যারিয়ার, জীবন, সংসারে ব্যস্ত। খুব একটা দেখা সাক্ষাত হয় না এখন আর। সময় ও কাটানো হয় না খুব বেশি। কিন্তু স্ত্রীকে প্রতিদিনই পাশে পাই। অকারণে বকবক করে মাথা আউলায়ে দেই। উনিও আবার জেনে-বুঝে ইচ্ছা করে ঝগড়া বাঁধায় আমাকে মানসিক চাপে রাখার জন্য। আমিও ঝগড়া করি, চিল্লাচিল্লি করি। কিন্তু দিন শেষে শান্তি অনুভব হয়।  

এখন বিশ্বাস করি পুরুষ মানুষের জীবনে বেস্ট ফ্রেন্ড অবশ্যই তার নিজ স্ত্রী হওয়া উচিত। অন্যের স্ত্রীও হতে পারে তবে তাতে রিস্ক থাকে। স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হলে জীবনটা আরামসে কেটে যায়। আমার তাই যাচ্ছে। 

akashএখন আমার জীবনে সবচাইতে ভালো বন্ধু আমার স্ত্রী। এরপরে সবচাইতে ভালো বন্ধু আমার মেয়ে আয়াত। ও আমার বন্ধুই না শুধু, আমার খেলার সাথী। মানুষের বয়স বাড়তে থাকলে বুঝি তারা এভাবেই আস্তে আস্তে একটি গণ্ডিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। আমি হচ্ছি, আমরা হচ্ছি, আপনিও হচ্ছেন। 

যারা এখনো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার সময় করতে পারছেন, আড্ডা দিতে পারছেন তারা প্লিজ এটা চালিয়ে যান। মন দিয়ে উপভোগ করুন। কারণ, আর কিছু বছর পরে এদের কাউকে হয়তো আর কাছে পাওয়া যাবে না, আড্ডায় বসা হবে না। 

মানব জীবনে বন্ধু খুব প্রয়োজনীয় একটা সম্পর্কের নাম। জীবনের প্রয়োজনেই বন্ধুত্ব বদলাতে থাকে। বন্ধুত্বে নতুনত্ব আসতে থাকে এবং কেউ কেউ চলেও যেতে থাকে। তবে এই আসা যাওয়ার ফাঁকে সম্পর্কটা মনের মধ্যে থেকে যায় আজীবন।

লেখক: সহকারি শিক্ষক, বুড়িঘাট পূনর্বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর