বর্ণাঢ্য এক জীবন কাটিয়েছিলেন রবিঠাকুর। কেবল গল্প, কবিতা, গানে সীমাবদ্ধ ছিল না তার জীবন। রোজকার জীবন থেকে শুরু করে পোশাক, জীবনযাপন— সবকিছুতেই রয়েছে ভিন্নতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে অজানা ছয়টি বিষয় সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
পোশাকে জোব্বা
বিজ্ঞাপন
জোব্বা ঘরনার পোশাক পরতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাড়িতে যখন থাকতেন তখন বেশিরভাগ সময় পরতেন গেরুয়া বা সাদা রঙের জোব্বা আর পায়জামা। উপাসনা বা সভা সমিতিতে যাওয়ার সময় জোব্বার সঙ্গে পরতেন সাদা ধুতি। মাঝেমধ্যে জোব্বার বদলে জামা আর চাদরও জড়াতেন গায়ে। ঋতু উৎসবে ঋতু অনুযায়ী নানা রঙের রেশমি উত্তরীয় নেওয়া ছিল তার শখ।
রোজকার রুটিন
নিয়ম মেনে চলতে ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রতিদিন ভোর ৪টায় তার দিন শুরু হতো। গোসল সেরে পূজা করতেন। এরপর সকাল ৭টা পর্যন্ত একটানা লিখতেন। সকালের নাশতা সেরে আবার লেখা শুরু করতেন। বেলা ১১টা পর্যন্ত লিখে আবার গোসল করতেন। এরপর দুপুরের খাবার খেতেন।
খাওয়ার পর বিশ্রাম বা ঘুমিয়ে সময় পার করতেন না কবি গুরু। পত্রিকা বা বইয়ের পাতা উল্টিয়ে সময় কাটাতেন তিনি। বিকালের নাশতা খেতেন ৪টার দিকে। চা আর সঙ্গে নোনতা কিছু। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে সারতেন রাতের খাবার। এরপর রাতের ১২টা পর্যন্ত লিখতেন বা পড়তেন। এরপর ঘুমিয়ে যেতেন। এই ছিল তার রুটিন।
বিজ্ঞাপন
হোমিওপ্যাথিতে বিশ্বাসী
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাস ছিল। তিনি নিজের জমিদারির প্রজাদের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন। নিজেও এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিতে পছন্দ করতেন। ‘হেলথ কো-অপারেটিভ’ তৈরি করে চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা ভারতে রবিঠাকুরই প্রথম চালু করেন।
বল ডান্সের পারদর্শী
শুনতে অবাক লাগলেও চমৎকার ‘বল ডান্স’ করতে পারতেন কবি গুরু। খুড়তুতো দিদি সত্যেন্দ্রবালা ঠাকুরের কাছে এই নাচ শিখেছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ নিজে তার নৃত্যশৈলীকে বলতেন ‘ভাবনৃত্য’। মণিপুরি, কথাকলি, ভরতনাট্টম, শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিনাচ, জাভার নৃত্যভঙ্গি- নানা দেশের নানা ধরনের নৃত্যশৈলী দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজস্ব নৃত্যশৈলীর জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।
ছিলেন ভালো অভিনেতাও
১৮৭৭ সালে প্রথম অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘এমন কর্ম আর করব না’ নাটকে তিনি অলীকবাবুর ভূমিকায় মঞ্চে উঠেছিলেন। তখন রবিঠাকুর ১৬ বছরের কিশোর ছিলেন। নিজের লেখা নাটকে তিনি প্রথম অভিনয় করেন ‘বাল্মিকী প্রতিভা’য় বাল্মিকীর ভূমিকায়। নাটকটি ১৮৮১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জোড়াসাঁকোয় মঞ্চস্থ হয়। তার অভিনয় দেখে নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথই দেশের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা।’
গাছের প্রতি প্রেম
বৃক্ষপ্রেমী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তার গানে, কবিতায় ছড়িয়ে আছে অসংখ্য উদ্ভিদ আর ফুলের নাম। শুধু কাব্যেই উল্লেখ রয়েছে ১০৮ গাছ ও ফুলের নাম। এর মধ্যে বেশ কিছু বিদেশি ফুলের বাংলা নাম তিনি দিয়েছিলেন। অগ্নিশিখা, তারাঝরা, নীলমণিলতা, বনপুলক, বাসন্তী এই নামগুলো তারই দেওয়া।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আর গল্পে তো ডুব দিয়েছেন অনেক। মুগ্ধ হয়েছেন তার গানেও। তবে রবিঠাকুরের এই বিষয়গুলো কি জানা ছিল আপনার?
এনএম

