শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রোদ পোহানোর উত্তম সময়

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৪৭ এএম

শেয়ার করুন:

রোদ পোহানোর উত্তম সময়

রোদ পোহানোর কথা ভাবতেই মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। শীতের সকাল, মিষ্টি রোদ, পাটি বিছিয়ে রোদ পোহাতে পোহাতে পরিবারের সবাই মিলে আড্ডা। অনেকের কাছেই বিষয়টি এখন কেবলই স্মৃতি। শহুরে জীবনে অনেকেই হয়তো আলাদা করে রোদ পোহানোর জন্য সময়-সুযোগ পান না। কিন্তু গ্রামের মানুষের কাছে শীতকালে রোদ পোহানো নিত্যকার একটি বিষয়।  

শুধুমাত্র শীত তাড়ানোর জন্য রোদ পোহানো নয়— এটির অন্যান্য উপকারও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিয়ম মেনে গায়ে রোদ লাগালে নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায়। এটি আমাদের মানসিকভাবেও ভালো রাখে। আমাদের হাড় ভালো রাখতে ভিটামিন ডি জরুরি। রোদে রয়েছে ভিটামিন ডি। দেহের মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ ভিটামিন ডি আসে সূর্যালোক থেকে। তাই তো ভিটামিন ডি-কে বলা হয় ‘সানশাইন ভিটামিন’। 


বিজ্ঞাপন


রোদে আরও যত উপকারিতা: 

১. ফাঙ্গাল যেকোনো ইনফেকশন দূর করতে কাজ করে সূর্যের আলো। তাই শরীরে ছত্রাকজনিত কোনো ইনফেকশন থাকলে প্রতিদিন রোদে বসতে হবে। 

২. নবজাতক শিশুদের জন্ডিস হলে বিশেষ নিয়ম মেনে শিশুকে নিয়ে সকালের রোদে বসতে পরামার্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকগণ।

৩. অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে রোদের কার্যকারিতা রয়েছে। প্রতিদিন নিয়ম মেনে রোদ পোহালে শরীরে মেলাটোনিন হরমোন বাড়ে। এটি ঘুম আনতে সহায়ক। 


বিজ্ঞাপন


sun-bath-2৪. ওজন কমাতে সাহায্য করে রোদ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, সূর্যের আলোতে থাকলে আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে অনেকটাই। আর কোলেস্টেরল কমলে কমে ওজনও। 

৫. হাইপার টেনশন থেকে মুক্তি দিতে পারে রোদ। সকালের রোদ মানব শরীরের রক্তচাপ কমাতে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। রোদে কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করলে মনও উৎফুল্ল হয়।

তবে এসব উপকার নিতে চাইলে রোদ পোহাতে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণে। জানতে হবে রোদ পোহানোর উত্তম সময় সম্পর্কে।

বাড়তি ভিটামিন ডি বা বেশি উপকারের আশায় অনেক্ষণ রোদে থাকলে তাতে আবার হিতে-বিপরীত হবে। 

কখন এবং কতক্ষণ রোদ পোহাবেন?

মেডিসিন ইনস্টিটিউটের খাদ্য ও পুষ্টি বোর্ডের মতে, শিশু ও তরুণদের প্রতিদিন ৬০০ আইইউ বা ১৫ এমসিজি ভিটামিন ডি দরকার। 

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দুপুরের ঠিক আগমুহূর্ত হলো রোদে যাওয়ার সঠিক সময়। কারণ এই সময়ে সূর্যের তাপ বেশি থাকে। তাই অল্প সময়েই আপনি পেয়ে যাবে ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি। 

বিভিন্ন গবেষণা বলে, এই সময়টাতে ভিটামিন ডি নেওয়ার জন্য শরীর সব থেকে বেশি উপযোগী থাকে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মিড ডে-র পরে রোদে যাওয়া আরও বেশি ক্ষতিকর। এতে স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০ থেকে ৩০ মিনিট রোদে থাকলেই প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এ সময়ে যতটা সম্ভব ছোট হাতার পাতলা কাপড় পরতে হবে, যেন রোদ সরাসরি গায়ে লাগে। 

মুখে রোদ লাগাতে না চাইলে সূর্যের দিকে পিঠ এলিয়ে দিয়ে বসতে পারেন। ত্বক খুব বেশি স্পর্শকাতর না হলে সানস্ক্রিন ছাড়া কিছু সময় রোদে বসলে ত্বক বেশি ভিটামিন ডি পাবেন। এ ছাড়া চাইলে সানগ্লাস ও হ্যাট পরেও রোদে বসা যায়।

sun-bathe-3এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. শাহজাদা সেলিম-এর মতে, “কতক্ষণ রোদ পোহাতে হবে, তা নির্ভর করবে আপনি পৃথিবীর কোন জায়গায় অবস্থান করছেন। এ নিয়ে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তেমন কোনো গবেষণা নেই। তবে অন্যান্য দেশের গবেষণার সঙ্গে তুলনা করে প্রতিদিন নিয়মিত প্রায় ৩০ মিনিট রোদ পোহানো প্রয়োজন হতে পারে বলে ধরে নেওয়া যায়। এ সময় শরীরের কমপক্ষে ১৮ শতাংশে রোদ লাগতে দিতে হবে। দুপুরের কাছাকাছি সময়, মানে সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত রোদে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। আর বছরের গরম কালের সময়টুকু, অর্থাৎ এপ্রিল-সেপ্টেম্বর মাস রোদ থেকে ভিটামিন ডি পাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময়।”

তিনি বলেন, দুপুরের কাছাকাছি সময়ে সূর্য যখন সবচেয়ে ওপরের দিকে থাকে, তখন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ভিটামিন ডি তৈরিতে সবচেয়ে বেশি উপযোগী। অন্যদিকে সূর্য পূর্ব-পশ্চিম আকাশে হেলে থাকলে তাতে যে অতিবেগুনি রশ্মি থাকে, তা পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে না। শীতকালের কম আর্দ্র ও কুয়াশাচ্ছন্ন দিনগুলোতে অথবা শীতপ্রধান দেশে অধিকাংশ সময় সূর্যালোকে যে অতিবেগুনি রশ্মি থাকে, তা ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ত্বকের রং সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ডি তৈরিকে প্রভাবিত করে। ত্বকের রং যত গাঢ় (যদি ত্বকে বেশি মেলানিন থাকে), তা সূর্যালোক থেকে অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশে তত বেশি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। অর্থাৎ গায়ের রং যত কালো, তাকে তত বেশি সময় রোদে থাকতে হবে।

এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর