অনুসন্ধানী আর কৌতূহলী হওয়া মানুষের জন্মগত স্বভাব। এই দুটি বৈশিষ্ট্যের কারণেই মানুষ নানা বিষয়ে জেনেছে। আবিষ্কার করেছে নতুন কিছু। বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান উন্নতির পেছনে রয়েছে কৌতূহলী মনের নানা জিজ্ঞাসা। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক বিষয় বা ঘটনা রয়েছে যার ব্যাখ্যা মেলা না। অলৌকিক বলে সংজ্ঞায়িত করা হয় এমন বিষয়গুলোকে।
বিজ্ঞানের তুলনায় অলৌকিকতার প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি। বিজ্ঞান ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ এমন বিষয় নিয়ে থাকে কৌতূহল। অর্থাৎ ভূত কিংবা ভূতের গল্প বাঙালিদের বেশ প্রিয়। কেবল বাঙালি নয়, সব দেশেই এসব গল্প জনপ্রিয়। বিশ্বের এমন কিছু জায়গা রয়েছে যা ভৌতিক স্থান হিসেবে পরিচিত। এসব স্থানে গেলে ভূতের দেখা মিলবে কি মিলবে না তা বলা না গেলেও, পিলে চমকাবে অবশ্যই। ভৌতিক পরিবেশে দুর্ঘটনার মুখে পড়াও কেউ ঠেকাতে পারবে না। এমন কিছু জায়গা সম্পর্কে জানুন।
বিজ্ঞাপন
পোভেগ্লিয়া, ইতালি
ভেনিস আর লিডোর মাঝে অবস্থিত উত্তর ইতালির ছোট্ট সুন্দর একটি দ্বীপ এটি। তবে বর্তমানে তা পরিত্যক্ত। বলা হয়, এই দ্বীপটিতে নাকি অশরীরীদের বসবাস। প্রবেশের সুযোগ থাকলেও কেউ এখানে যাওয়ার সাহস দেখান না। পোভেগ্লিয়া দ্বীপে একটি মানসিক হাসপাতাল ছিল। ১৯২২ সালে তা চালু হলেও, ১৯৬৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়।
একসময় দ্বীপটিতে প্লেগ রোগীদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হতো। এখানে নাকি ভয়ানক সব অপ্রাকৃতিক ঘটনা ঘটতে থাকে। তাই ধীরে ধীরে মানুষের চলাচল কমে যায়। একপর্যায়ে এটি ভূতুড়ে স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়। বর্তমানে এই দ্বীপটিতে অশুভ আত্মাদের বাস বলে প্রচারিত। এখানে প্রবেশ করলে নাকি ফিরে আসা দুরূহ।
হাইগেট গোরস্থান, ইংল্যান্ড
বিজ্ঞাপন
১৮৩৯ সালে উত্তর লন্ডনে অবস্থিত হাই গেট কবরস্থানটি আবিষ্কৃত হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে ভৌতিক জায়গাগুলোর মধ্যে হাইগেট কবরস্থান অন্যতম। হবে নাই বা কেন? এখানে ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি লোককে কবর দেওয়া হয়েছিল। বেশ কিছু অতিপ্রাকৃত ঘটনার খবর পাওয়া গেছে এই কবরস্থানে। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ভয়ংকর হলো ৭ ফিট লম্বা ভ্যাম্পায়ারের গল্প। ওই ভ্যাম্পায়ারের নাকি সম্মোহনী লাল চোখ রয়েছে।
এই জায়গাটির তাপমাত্রা আশ্চর্যজনকভাবে কম। অনেকের বিশ্বাস, ভ্যাম্পায়ারের বাসস্থান হওয়ার কারণেই নাকি তাপমাত্রার এমন ভয়ানক হেরফের।
শ্যাটু ডি ব্রিস্যাক, ফ্রান্স
ফ্রান্সের সবচেয়ে দীর্ঘ এবং সবথেকে সুন্দর দুর্গগুলির মধ্যে এটি একটি। সাত তলা বিশিষ্ট সুউচ্চ দুর্গটিকে অনেকে গ্রিন লেডি বা শার্লট ভূতের বাড়ি বলে থাকেন। লোক মুখে শোনা যায়, শার্লট ছিলেন রাজা সপ্তম চার্লসের অবৈধ কন্যা। স্ত্রীর অন্য ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তার স্বামীই শার্লটকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। হত্যা করার সময় তার পরনে ছিল সবুজ পোশাক। এরপর নাকি তার আত্মাকে টাওয়ার রুমে ঘুরতে দেখা গিয়েছে।
অনেকের দাবি সবুজ পোশাক পরে শার্লটের অতৃপ্ত আত্মাকে আজও এই প্রাসাদে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
দ্য কুইন মেরি, ক্যালিফোর্নিয়া
একটি যাত্রীবাহী জাহাজ এটি। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে সমুদ্রে এটি ঘুরে বেড়ায়। তারপর পাকাপাকিভাবে নোঙ্গর ফেলে ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচে। সমুদ্রে ভেসে থাকার সময় এই জাহাজের ভেতর ৫০ জনেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছিল। তারপর থেকেই এই জাহাজকে ভৌতিক ঘোষণা করে দেওয়া হয়। জাহাজের ভিতরে নাকি অতৃপ্ত আত্মারা বিরাজ করে।
ভানগড় দুর্গ, রাজস্থান
সরকারি নির্দেশনামা বসানো রয়েছে দুর্গের প্রবেশ দ্বারে। তাতে লেখা রয়েছে সন্ধ্যা ৬টার পর দুর্গের ভিতর প্রবেশ নিষেধ। ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভৌতিক স্থান এটি। বলা হয় এই দুর্গের ভিতর নাকি অশরীরীরা বাস করে। অন্ধকার নামলেই তাদের শক্তি বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা নামলেই বাড়ে তাদের দৈরাত্ম্য।
দুর্গের দেয়াল এবং দুর্গ মধ্যস্থ কুয়োর মধ্যবর্তী জায়গাজুড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন গাছ। এসব গাছের ডালের ছায়া কুয়োর অদূরে এসে পৌঁছলেও কুয়ো অবধি যায় না। জনশ্রুতি রয়েছে, শাসকরা যাদের পছন্দ করতেন না কিংবা যাদের শাস্তি দিতে চাইতেন তাদের ভানগড়ের দুর্গের এই কুয়োতে ফেলে দিতেন। কুয়োর সামনে গেলে অনেকেই অস্বস্তি বোধ করেন।
কেউ কেউ বলেন দুর্গের ভিতর নাকি কালাজাদুর ওস্তাদরা বাস করতেন। কালাজাদুর নানা নিদর্শন এখনও রয়েছে সেখানে। বলা হয়, সেই সব নিদর্শনে হাত পড়লেই নাকি বিপদ হয়। আজও নাকি কেউ অবাধ্য হয়ে রাতের বেলা সেখানে প্রবেশ করলে আর ফিরে আসে না।
এনএম