গ্রীষ্মের কড়া রোদে চোখের যত্ন নিলেও শীতকালে বিষয়টিকে উপেক্ষা করেন সবাই। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, গ্রীষ্মের তুলনায় শীতে চোখের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ এসময় বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পায়। বাতাসে থাকা ভাসমান ধূলিকণা আর ক্ষতিকর রাসায়নিক চোখের মারাত্মক ক্ষতি করে।
শীতের শুষ্ক বাতাস কমিয়ে দেয় চোখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা। শহর ও শিল্পাঞ্চলে ধোঁয়াশা ও দূষিত কণা বাতাসে মিশে থাকে। শীতের আমেজ উপভোগ করতে আমরা বাইরে বেশি সময় কাটাই। ফলে সরাসরি চোখের সংস্পর্শে আসে বিষাক্ত বাতাস। বিশেষ করে শিশু এবং যারা বাইরে কাজ করেন, তারা সবথেকে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
বিজ্ঞাপন

শীতের শুষ্কতায় চোখের কর্নিয়ায় ছোট ক্ষত তৈরি হতে পারে। এই ক্ষতস্থানে যখন বায়ুদূষণ বা ধূলিকণা থেকে সংক্রমণ ঘটে, তখন তাকে ‘কর্নিয়ার আলসার’ বলে। সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করালে দৃষ্টিশক্তি চিরতরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কর্নিয়ার আলসারের লক্ষণ কী কী?
১. চোখ প্রচণ্ড লাল হয়ে যাওয়া এবং অনবরত পানি পড়া
২. চোখে তীব্র ব্যথা বা খচখচানি ভাব
বিজ্ঞাপন

৩. ঝাপসা দৃষ্টি বা আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হওয়া
৪. চোখের মণির ওপর সাদাটে দাগ
কর্নিয়ার আলসার (Corneal Ulcer) বিপজ্জনক কেন?
কর্নিয়া হলো চোখের ‘প্রবেশদ্বার’ বা স্বচ্ছ লেন্স। কর্নিয়ার আলসার একটি মেডিকেল এমার্জেন্সি। কারণ এটি চোখের স্থায়ী অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। কর্নিয়ায় আলসার দেখা দিলে কী কী ঘটতে পারে?

১. স্থায়ী ক্ষত: সংক্রমণের ফলে কর্নিয়ায় যে সাদাটে দাগ বা ক্ষত তৈরি হয়, তা আলোক রশ্মিকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। ফলে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে ঝাপসা হয়ে যায়।
২. কর্নিয়া ফুটো হওয়া: আলসার গভীর হলে কর্নিয়া ফুটো হয়ে যেতে পারে। এতে চোখের অভ্যন্তরীণ অংশ ঝুঁকির মুখে পড়ে।

৩. দ্রুত ছড়িয়ে পড়া: বিশেষ করে ছত্রাক বা সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুরো চোখকে নষ্ট করে দিতে পারে।
৪. এন্ডোফথালমাইটিস: সংক্রমণ চোখের গভীরে ছড়িয়ে পড়লে পুরো চোখটিই অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া লাগতে পারে। তাই সামান্য অবহেলা বা ভুল ড্রপ ব্যবহার দৃষ্টিশক্তি চিরতরে কেড়ে নিতে পারে।

কর্নিয়ার আলসারের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ড্রপ ব্যবহার করুন। প্রতিরোধের জন্য বাইরে বের হলে সানগ্লাস বা প্রোটেক্টিভ চশমা ব্যবহার করুন।
চোখে বারবার হাত দেবেন না। প্রতিদিন পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নিন। মনে রাখবেন, শীতে চোখের যত্নে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
এনএম

