সম্মান মানে কারো প্রতি উচ্চ ধারণা, শ্রদ্ধা, কদর ও মর্যাদা প্রদর্শন। এটি ব্যক্তির গুণ, কৃতিত্ব বা নৈতিক অবস্থানের সঙ্গে যুক্ত। অসম্মান এর বিপরীত— অপমান ও অবমূল্যায়ন। মানবিক মূল্যবোধ হওয়ার কথা সম্মান। কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ কি সবার জন্য সমান?
সম্মান বহুল ব্যবহৃত, কম বিশ্লেষিত ধারণা। আমাদের সমাজে “সম্মান” শব্দটি সবচেয়ে বেশি নারীর জীবনে ব্যবহৃত হয়। পরিবার, সম্পর্ক, পোশাক, চলাফেরা বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত— সবকিছুর সঙ্গে জুড়ে থাকে এই অদৃশ্য শর্ত।
বিজ্ঞাপন

সম্মানের অসম বণ্টন দেখা যায় চারপাশে। একই সামাজিক কাঠামোতে নারী-পুরুষের সম্মানের মানদণ্ড ভিন্ন। পুরুষের সম্মান নির্ধারিত হয় আয়, ক্ষমতা বা সামাজিক অবস্থানে। আর নারীর সম্মান বাঁধা আচরণ, পোশাক, চলাফেরা ও সম্পর্কের সীমায়। পুরুষের ব্যক্তিগত ভুল হয় “ব্যক্তিগত ব্যর্থতা”। অন্যদিকে নারীর ভুল হয় “পরিবারের সম্মানহানি”।
সম্মান না নিয়ন্ত্রণ?
নারীর ওপর আরোপিত এই সম্মান সুরক্ষা নয়—নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার। কোথায় যাবে, কী পরবে, কাকে ভালোবাসবে— প্রতিটি সিদ্ধান্তে এটি যুক্তি হয়ে ওঠে। এই অদৃশ্য শিকল স্বাধীনতার পথ বন্ধ করে।
বিজ্ঞাপন

নীরবতার দাম
“সম্মানের কথা ভাবো”—এই বাক্য বহু নারীর কণ্ঠ রোধ করেছে। নির্যাতন বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে মুখ খুললে প্রশ্ন ওঠে চরিত্র ও পারিবারিক সম্মান নিয়ে। সমাজ এই নীরবতাকে সহনশীলতা বলে মহিমান্বিত করে, কিন্তু মূল্য দেয় নারীর মানসিক ক্ষতিতে।
সম্মানের প্রকৃত রূপ
সম্মান যদি মানবিক মূল্যবোধ হয়, তবে তা লিঙ্গভিত্তিক হতে পারে না। এর অর্থ, দায়িত্বশীল আচরণ নৈতিকতা ও সততা অন্যের অধিকার ও স্বাধীনতায় শ্রদ্ধা যে সম্মান স্বাধীনতা কেড়ে নেয় বা প্রশ্ন দমন করে—তা বৈষম্যের মোড়ক মাত্র।

সম্মান কোনো লিঙ্গের বোঝা নয়—এটি মানুষের গুণ। যতদিন এটাকে নারীর ঘাড়ে চাপিয়ে রাখা হবে, ততদিন বৈষম্যের প্রতীক হয়েই থাকবে। সম্মানকে সবার জন্য সমান হোক।
এনএম

