কারো সামান্য অবহেলা, একটু কটু কথা কিংবা ম্যাসেজের দেরিতে রিপ্লাই দেওয়া কি আপনার মনে প্রভাব ফেলে? পুরো দিনটাই নষ্ট হয়ে যায় কেউ বকা দিলে বা উঁচু গলায় কথা শোনালে? প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে আপনি একজন ইমোশনাল মানুষ। আর এই আবেগ বা ইমোশনের কারণেই নিজের অজান্তেই নিজেকে ধ্বংস করছেন আপনি।
আবেগ মানুষের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু অতিরিক্ত আবেগ হলো লজিক কাজ না করার লক্ষণ। আপনি ইমোশনের বন্যায় ভেসে গেলে, ব্রেনের যৌক্তিক অংশ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আর এই সুযোগই নেয় অপরপক্ষ।
বিজ্ঞাপন

অতিরিক্ত আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আপনি পদে পদে হারবেন। তাহলে করণীয় কী? অনুভূতি শূন্য হয়ে যাবেন? না তেমনটা হওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু নিজের অনুভূতির লাগামটা নিজের হাতে রাখতে হবে। কীভাবে? চলুন জেনে নিই-
১. রিয়েক্ট করার আগে ‘পজ’ বাটন চাপুন
কেউ আপনাকে রাগিয়ে দিল বা কষ্ট দিলে সাথে সাথে উত্তর দিবেন না। আমাদের ইমোশনাল ব্রেন যেকোনো ঘটনায় ইনস্ট্যান্ট রিয়েক্ট করতে চায়। যা অনেকসময় হিতে বিপরীত হয়। তাই নিজেকে অন্তত ৫ মিনিট সময় দিন। লম্বা শ্বাস নিন। দেখবেন ৫ মিনিট আগে যেসব কথা মাথায় এসেছিল তার বেশিরভাগই হারিয়ে গেছে। মনে রাখবেন, অনেক ক্ষেত্রেই নীরব থাকাটাই শ্রেষ্ঠ উত্তর।
বিজ্ঞাপন

২. ঘটনা ও কল্পনা আলাদা করুন
প্রিয়জনকে কল দিয়েছেন কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি- এটা হলো ঘটনা (Fact)। আপনি ভাবছেন ‘ও আর আমাকে আগের মতো ভালোবাসে না। আমার গুরুত্ব নাই। এজন্যই কল রিসিভ করেনি।’— এটা হলো আপনার বানানো গল্প (Story)। অতিরিক্ত ইমোশনাল মানুষরা ঘটনার চেয়ে নিজের বানানো গল্পে বেশি কষ্ট পায়। তাই ঘটনাকে শুধু ঘটনা হিসেবে দেখতে শিখুন। কল্পনাকে কম সময় দিন। তাহলে কষ্ট কম হবে।
৩. এক্সপেক্টেশন বা প্রত্যাশা কমান
আপনার কষ্টের মূল উৎস কী জানেন? আপনি মানুষের কাছে ঠিক তাই আশা করেন, যা আপনি তাদের জন্য করেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো- সবার হৃদয় একরকম নয়। আপনি যার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিলেন, সে আপনার জন্য সামান্য ছাড় দিতে রাজী নাও হতে পারে। এই বিষয়টি মেনে নিন। প্রত্যাশা যত কম থাকবে, মানসিক শান্তি তত বেশি মিলবে।

৪. ‘ইমোশনাল ডাস্টবিন’ হওয়া বন্ধ করুন
সবাই এসে আপনার কাছে দুঃখের কথা বলে, আর আপনি তাদের কষ্ট নিজের কাঁধে নিয়ে নেন? এই অভ্যাসটি কিন্তু ভালো নয়। সহমর্মিতা ভালো, কিন্তু অন্যের নেগেটিভিটি নিজের ভেতরে নেওয়া বোকামি। অন্যের বলা সব কথা গায়ে মাখার অভ্যাস ছাড়ুন। কোনটি শুনবেন আর কোন কথাটি গুরুত্ব দেবেন না তা বিবেচনা করুন।
৫. নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
কথায় বলে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। আর অলস অবস্থায় থাকলেই মানুষ বেশি ইমোশনাল হয়। যাদের জীবনে বড় কোনো লক্ষ্য নেই, তারা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে পড়ে থাকে। তাই নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। প্রোডাক্টিভ কাজ, স্কিল ডেভেলপমেন্ট বা নিজের কাজে সময় ব্যয় করুন। তাহলেই কে কী বলল বা করল তা নিয়ে মাথা ঘামানোর অবসর পাবেন না।

আবেগ জীবনেরই অংশ। কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো শক্ত আপনাকে হতে হবেই। নয়তো জীবনের চলার পথে এগিয়ে চলা কঠিন হবে।
এনএম

