ঘরের বাইরে বের হয়েছেন কিংবা অফিসে কাজের মারাত্মক চাপ। এর মধ্যেই বাড়ছে অস্বস্তি। কোনোমতে ধরে রেখেছেন প্রস্রাবের চাপ। ভাবছেন কিছুক্ষণ পর হালকা হয়ে নেবেন। কিন্তু সেই সময়টা যেন মিলছেই না। এমন চিত্র আমাদের বেশ পরিচিত।
প্রস্রাব চেপে রাখার ঘটনা স্বাভাবিক। কিন্তু এটি যদি অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায় তাহলে সতর্ক হোন। কারণ প্রস্রাব চেপে রাখার অভ্যাসে নানা মারাত্মক রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই-
বিজ্ঞাপন

প্রস্রাব চেপে রাখলে কী কী ক্ষতি হয়?
সাধারণত সাময়িকভাবে কেউ প্রস্রাব চেপে রাখলে সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে এটি যদি কারো রোজকার অভ্যাস হয় তাহলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মূত্রথলিতে প্রায় ২ কাপ পর্যন্ত প্রস্রাব জমা হতে পারে। সাধারণত ১-২ ঘন্টা চেপে রাখলে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু দুই ঘন্টা বা তার বেশি সময় প্রস্রাব ধরে রাখলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। প্রস্রাব চেপে রাখার অভ্যাসে কী কী স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয় জানুন-
মূত্রনালির সংক্রমণ
প্রস্রাবের ভেতরে ব্যাকটেরিয়া থাকে। মূত্রথলিতে প্রস্রাব দীর্ঘক্ষণ জমে থাকলে সেই ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পায়। এই ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালী, মূত্রথলি, এমনকী কিডনি পর্যন্ত সংক্রমণ ঘটাতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।

মূত্রথলির কার্যক্ষমতা হ্রাস
প্রস্রাব ধরে রাখার কারণে মূত্রথলির পেশির ওপর প্রভাব পড়ে। মূত্রথলি একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। নিয়মিতভাবে বাড়তি প্রস্রাব ধরে রাখলে মূত্রথলির পেশি অতিরিক্ত প্রসারিত হতে হতে দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে মূত্রথলি সম্পূর্ণরূপে খালি হতে পারে না। একে ইউরিনারি রিটেনশন বলা হয়। এর কারণে ভবিষ্যতে মূত্রথলিতে ব্যথা বা মূত্রত্যাগে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কিডনির ক্ষতি এবং সংক্রমণ
মূত্রথলির চাপ প্রভাব ফেলে কিডনির ওপর। এটি দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রে কিডনি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। মূত্রথলি যখন অতিরিক্ত ভরে যায়, তখন প্রস্রাবের চাপ এতটাই বেড়ে যায় যে কিছু প্রস্রাব মূত্রনালী দিয়ে উল্টো দিকে কিডনিতে ফেরত আসে। এতে কিডনিতে সংক্রমণ ঘটে। কিডনি বিকল হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

মূত্রথলিতে পাথর
প্রস্রাবে ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ইত্যাদির মতো খনিজ পদার্থ থাকে। প্রস্রাব জমা থাকলে এই পদার্থগুলো ক্রিস্টালাইজড হয়ে শক্ত পাথরের আকার ধারণ করে। মূত্রথলির পাথর হলে তীব্র ব্যথা, প্রস্রাবে রক্ত এবং মূত্রনালির পথ ব্লকের মতো জটিল সমস্যা হতে পারে।
তীব্র ব্যথা
দীর্ঘদিন ধরে প্রস্রাব চেপে রাখার অভ্যাসের কারণে ঘন ঘন মূত্রথলিতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এটি কেবল তাৎক্ষণিক অস্বস্তিই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে ক্রনিক পেলভিক পেইন বা মূত্রথলির প্রদাহজনিত ব্যথার কারণ তৈরি করতে পারে।

সতর্কতা
যাদের এমন অভ্যাস রয়েছে, তাদের উচিত প্রস্রাবের বেগ অনুভূত হওয়ামাত্র বাথরুম ব্যবহার করা। বিশেষত, যেসব ব্যক্তিরা পানি কম পান করেন এবং মাঝেমধ্যেই প্রস্রাব ধরে রাখেন, তাদের ক্ষেত্রে মূত্রথলিতে সংক্রমণ ও পাথর হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
এনএম

