“আমার স্বপ্ন ঘিরেই ভালো লাগা আর ভালোবাসা। ছোটবেলা থেকেই সমুদ্র সৈকত দেখার খুব ইচ্ছা। তাই যেখানে সমুদ্র সৈকত সেখানেই ছুটে যেতে মন চায়। সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে কল্পনার জাল বুনি। অদ্ভুত গর্জনের সঙ্গে নীল জলের বিশাল ঢেউ দেখে মুগ্ধ হই। প্রকৃতি এত সুন্দর! বিধাতার কী অসাধারণ সৃষ্টি!” উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে কথাগুলো বলছেন অস্ট্রেলিয়ার ওলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহাদ হক নামের এক বাংলাদেশি। লেখাপড়ার সুবাধে দীর্ঘ দিন থেকে তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাস করেন।
শুধু ফাহাদই নয়, তার মতো হাজারো পর্যটক প্রতিদিন ওই সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসেন। এই সমুদ্রসৈকতের দৈর্ঘ্য ৯০ মাইল। সৈকতটির অবস্থান অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ায়। দেশটির সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত এটি। নব্বই মাইল সমুদ্র সৈকত মেলবোর্ন থেকে ২৬০ কিলোমিটার (১৬০ মাইল) দূরে অবস্থিত। এটা জিপসল্যান্ড লেক উপকূলীয় পার্ক এর মধ্যে অবস্থিত। প্রতি বছর এই সমুদ্র সৈকত দেখতে প্রচুর পর্যটক আসেন এবং ক্যাম্পিং, সার্ফিং, তিমি দর্শনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হোন। এই সমুদ্র সৈকতের বালি সোনালি বর্ণের।
বিজ্ঞাপন
শুধু তাই নয়, নব্বই মাইল সমুদ্র সৈকত জাতীয় মেরিন পার্ক এর অংশ, যার আয়তন ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর ও উপকূল থেকে ৫ কিলোমিটার (৩ দশমিক ১ মাইল) এবং ভিক্টোরিয়ার সেল শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। এই পার্কে ক্যাম্প করে থাকার ব্যবস্থা আছে।
এছাড়াও রথমাহ দ্বীপ লেক জাতীয় পার্কের অংশ যা পাখিদের অভয়ারণ্য। পায়নিসভিলে থেকে নৌকায় ৬ কিলোমিটার (৩ দশমিক ৭ মাইল) দূরত্বে এর অবস্থান। এই সমুদ্র সৈকতের দিকে বেশ কিছু উপকূলীয় শহর রয়েছে যেগুলো পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। মূলত গ্রীষ্মকালীন সময়ে এসব শহরগুলোতে পর্যটকদের ভিড় বাড়ে।
মেলবর্নের নব্বই মাইল সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব সময় সৈকতে ভিড় লেগে থাকে। এখানকার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও নিরিবিলি, যা তাদের প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার সুযোগ করে দেয়। এছাড়া সমুদ্র সৈকত পাহাড় ঘেঁষা হওয়ার ফলে সাধারণত দুটি প্রধান সুবিধা পাওয়া যায়— এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে এবং এটি পর্যটকদের জন্য একটি সুন্দর ও শান্ত পরিবেশ তৈরি করে।

বিজ্ঞাপন
সাইফুল্লাহ আল মাজেদ নামের আরেক বাংলাদেশি নাগরিক ঢাকা মেইলকে বলেন, গ্রেট ওশান রোডে ভ্রমণ ছিল এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। রাস্তার প্রতিটি বাঁকে ছিল নতুন চমক— এক পাশে বিশাল সমুদ্র, অন্য পাশে সবুজ পাহাড় আর ঘন বন। কখনও রাস্তা সাগরের খুব কাছ দিয়ে গেছে, আবার কখনও গভীর বনের ভেতর দিয়ে। সাগরের গর্জন, বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ আর প্রকৃতির রঙিন দৃশ্য মিলিয়ে এক অসাধারণ অনুভূতি তৈরি করেছিল। যেন প্রকৃতির সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলাম।
কাজী ওয়াসিফ মুহম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে আমরা মেলবোর্নের ১২ অ্যাপিসল রোডে গিয়েছিলাম। প্রায় ২৫৩ কিলোমিটার রাস্তা, আর এর মধ্যে ২০০ কিলোমিটার আমি নিজে গাড়ি চালিয়েছি। চারপাশে শুধুমাত্র সমুদ্র, পাহাড় এবং মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার খুব ভালো লেগেছে।
তিনি আরও বলেন, পুরো পাহাড়ের রাস্তার মধ্যে গাড়ি চালাতে অনেক মজা হয়েছে, আর চারপাশের সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে পথ চলেছি। রাস্তার সৌন্দর্য এতটাই অপূর্ব ছিল যে, চোখ ফেরাতে মন চাচ্ছিল না। আমরা পুরো রাস্তা জুড়ে প্রায় ৬-৭টি স্পটে থেমেছিলাম, সবগুলো স্পটই অসাধারণ এবং দেখার মতো ছিল। আমি অস্ট্রেলিয়ায় অনেক গাড়ি চালিয়েছি, কিন্তু মনে হয় এইটা ছিল সবচেয়ে সুন্দর রাস্তাগুলোর একটি। এই রাস্তায় গাড়ি চালাতে খুব ভালো লেগেছে। আশা করি ভবিষ্যতে আবার এইরকম একটি ট্রিপে যাওয়ার সুযোগ হবে।

মোহাম্মদ জায়েদ মোন্তাসির নামের আরেক পর্যটক বলেন, আমি দীর্ঘ দিন থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে বসবাস করি। আর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল পৃথিবীর দ্বিতীয় সমুদ্র সৈকত দেখা। তাই আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে এই সৈকতে ঘুরতে আসছি।
তিনি আরও বলেন, গ্রেট ওশান রোড হলো অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি ২৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মনোরম সমুদ্র উপকূলবর্তী রাস্তা, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৈন্যদের স্মৃতিতে নির্মিত হয়েছিল। এটি বিশ্বের অন্যতম সেরা উপকূলীয় ড্রাইভ হিসাবে বিবেচিত হয়, যেখানে ১২ অ্যাপোস্টলস, সুন্দর সৈকত, উঁচু ক্লিফ, ঘন জঙ্গল এবং স্থানীয় বন্যপ্রাণী দেখা যায়। বিশেষ করে ১২ অ্যাপোস্টলস কম্পিউটারের উইন্ডোজে ছবি হিসেবে ছিল। কিন্তু এখন আমি বাস্তবে দেখেছি। এটি দেখে অনেক ভালো লেগেছে।

জায়েদ মোন্তাসির বলেন, একদিকে পাহাড় ও অন্যদিকে সমুদ্র। এই দৃশ্যটি অসাধারণ। পাহাড়ের পাদদেশে ও সমুদ্রের পাড় দিয়ে গাড়ি চালানো ও গাড়িতে চড়ার মজাই আলাদা। দীর্ঘ ভ্রমণে আমরা অনেক জায়গায় থেমেছি। থেমে ছবিও তুলেছি। নীল সমুদ্র, সবুজ পাহাড়, সোনালি সৈকত আর মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্তের প্রতিটি মুহূর্তই একেকটি স্বপ্নের মতো। পুরো দিনই উপভোগ করেছি।
ইউরোপ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে আসা ডানিয়েল লিও নামের এক পর্যটক বলেন, আমি প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া ঘুরতে এসেছি। তাই অস্ট্রেলিয়াতে অবস্থিত ১২ অ্যাপোস্টলসে এসেছি। ওই এলাকার দৃশ্য অনেক চমৎকার। সত্যিই অনেক ভালো লাগছে।
কেআর/এফএ

