সকালের নাশতা কিংবা দুপুরের তরকারি—বাঙালি বাড়িতে ডিমের সরব উপস্থিতি লেগেই থেকে। কখনো সেদ্ধ করে, কখনো পোচ করে আবার কখনো অমলেট করে খাওয়া হয় এটি। ডিম সেদ্ধ করার পর সেই পানি কী করেন? নিশ্চয়ই ফেলে দেন। শুধু আপনি নন, সবাই ই এই কাজ করে। তবে এখন থেকে আর করবেন না। ফেলনা এই পানির পুষ্টিগুণ অনেক। কী কী কাজে লাগাতে পারেন ডিম সেদ্ধ করা পানি, চলুন জেনে নিই-
ডিম সেদ্ধ করা পানি কেন পুষ্টিকর?
বিজ্ঞাপন
সেদ্ধ করার সময় ডিমের খোসা থেকে এমন কিছু খনিজ বের হয় যা পানিতে মিশে যায়। এর মধ্যে একটি হলো ক্যালশিয়াম। ডিমের খোসায় ৯৫ শতাংশ ক্যালশিয়াম কার্বোনেট থাকে। সেদ্ধ হওয়ার সময় এই উপাদানটি পানিতে মিশে যায়। পাশাপাশি ডিমে থাকা ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, আয়রনের মতো খনিজও পানিতে মেশে। স্বাভাবিকভাবেই তাই এই পানি পুষ্টির আধার হয়ে যায়।

কী কী কাজে ব্যবহার করা যায় ডিম সেদ্ধ করা পানি?
ত্বক ও চুলের পরিচর্যা:
ডিম সেদ্ধ করা পানি দিয়ে গোসলের আগে চুল ধুয়ে নিন। এতে চুল নরম ও মসৃণ হবে। ডিমের পানিতে থাকা ক্যালশিয়াম ও পটাশিয়ামের গুণে চুলের গোড়া মজবুত হবে, চুল পড়া বন্ধ হবে।
খুশকি নিয়ে যারা সমস্যায় ভুগছেন তারাও সমাধান হিসেবে বেছে নিতে পারেন ডিম সেদ্ধ করা পানি। এই পানিতে থাকা খনিজ উপাদানগুলো মাথার ত্বকের সংক্রমণও রোধ করতে পারে।

এছাড়া ত্বকের প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করতে পারে ডিম সেদ্ধ পানি। এই পানি দিয়ে মুখ ধুলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমবে। ত্বকের রন্ধ্রে জমে থাকা ধুলোময়লা বের হয়ে আসবে। ত্বক হয়ে উঠবে নরম ও জেল্লাদার।
ডিমে থাকা জিঙ্ক ত্বকের তৈলগ্রন্থি থেকে সিবামের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে ব্রণ-ফুসকুড়ি হওয়ার প্রবণতা কমবে।

গাছের পরিচর্যা
ডিম সেদ্ধ করা পানিতে থাকা ক্যালশিয়াম গাছের বৃদ্ধির জন্য আদর্শ। গাছের গোড়ায় নিয়মিত এই পানি দিলে, গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। ফুল ও ফলের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্যও সার হিসেবে এই পানি ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষত টমেটো ও কাঁচা মরিচ গাছের জন্য ডিম সেদ্ধ করা পানি বেশ উপকারি।
ডিম সেদ্ধ পানিতে আছে পটাশিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান। ফলে এটি খুব ভালো মানের জৈব সার হিসেবে কাজে আসতে পারে। এই পানি মাটিতে দিলে, মাটির গুণমান বাড়বে। মাটির পিএইচের মাত্রা ঠিক থাকবে, ফলে গাছের ফলন বাড়বে।

কম্পোস্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ডিম সেদ্ধ করা পানি। গাছের পাতায় হলদেটে ছোপ ধরলে, পচন ধরতে শুরু করলে, এই পানি ব্যবহারে সুফল পেতে পারেন। গাছে পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতেও ডিম সেদ্ধ করা পানি উপকারি।
ঘর পরিষ্কার
ঘরের মেঝে, রান্নাঘরের তাক বা সিঙ্ক পরিষ্কারের কাজে এই পানি ব্যবহার করতে পারেন। ডিম সেদ্ধ করা পানিতে থাকা খনিজ উপাদান যে কোনো দাগ তুলতে সক্ষম। পুরনো থালাবাসন নতুনের মতো চকচকে করে তুলতেও এই পানি কাজে আসতে পারে।

তবে হ্যাঁ, উপকারি বলে গরম ডিম সেদ্ধ করা পানি আবার ব্যবহার করা যাবে না। এটি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এলে তারপর কাজে লাগান।
এনএম

