শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

উদ্যোক্তার গল্প

বাবা’স বেকিং জোন: কেকের কারিগর বাবা, প্রচারণায় মা

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

baba's baking zone

টেবিলের ওপর সাজানো অনেকগুলো বক্স। তাতে যেন ফুটে আছে সাদা গোলাপ। কাছ থেকে দেখে বোঝা গেল, এগুলো আসলে কেক। লাল রঙা রেড ভেলভেট কেক সাজানো হয়েছে ফুলের আকারে। বাক্সবন্দী এই কেকের নাম টাব কেক। হালের ক্রেজ বলা যায়। কেক সাজানোর কাজটি করছেন ওয়াসেকা তাসনীম। একজন ফুল টাইম গৃহিণী আর পার্ট টাইম উদ্যোক্তা। কেক তৈরির কারিগর এই হোম বেকারের সঙ্গে আড্ডা হয় ঢাকা মেইলের। গল্পে, আড্ডায় জানা হয় তার ব্যবসায় আসার কাহিনি থেকে শুরু করে জীবনের নানা গল্প।  

ওয়াসেকার জন্ম বরিশালে। বাবার চাকরির সুবাদে নানা জেলায় ঘুরে ঘুরে কেটেছে শৈশব। ছোটবেলার স্মৃতি হাতড়ালে খুঁজে পান পেস্ট্রি কেক খাওয়ার ঘটনা। ওয়াসেকা বলেন, ‘ক্লাস ওয়ানে যখন পড়তাম ২ টাকা রিক্সাভাড়া দিয়ে স্কুলে চলে যেতাম একাই আর ১০ টাকা দিয়ে লাল ফুলওয়ালা পেস্ট্রি খাওয়ার জন্য মায়ের কাছে বায়না করতাম! আম্মু বেঁচে নেই, স্মৃতিগুলো আজও তাড়া করে’। 


বিজ্ঞাপন


507067440_1099710832213554_8072133455860882010_n

বর্তমানে দুই কন্যা সন্তান আর স্বামী নিয়ে ওয়াসেকার সংসার। পরিবারের দায়িত্ব সামলে করছেন ব্যবসা। ওয়াসেকার উদ্যোগের নাম বাবা’স বেকিং জোন (Baba’s Baking zone)। নামের সঙ্গে বাবা শব্দটি জড়িত। তবে কি বাবার প্রতি সম্মান জানিয়ে এই উদ্যোগ? ভুল ভাঙিয়ে ওয়াসেকা বললেন, ‘বাবা ঠিকই তবে সেটি আমার বাচ্চাদের বাবা। মূলত আমার আজকের ব্যবসা শুরু হয়েছিল যার হাত ধরে তিনি আমার স্বামী। এই নামকরণের মজার একটা গল্পও আছে’। 

কিছুটা অবাক হলাম বটে। নড়েচড়ে বসে সেই গল্প শুনতে শুরু করলাম। জানতে পারলাম বাবা’স বেকিং জোনের সবচেয়ে জনপ্রিয় যে রেড ভেলভেট কেক তার কারিগর আসলে ওয়াসেকা নন, তার স্বামী অর্থাৎ বাচ্চাদের বাবা। 

baba


বিজ্ঞাপন


ইমরান হাসান তারিফ পেশায় একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার। বাইনারির কঠিন কোডিং এর বাইরে বেকিং ও তার প্রিয় কাজ। করোনার সময়ের কথা। সবাই তখন ঘরবন্দি। হোম অফিসের পর সেসময় কন্যাদের জন্য ভালোবেসে টুকটাক খাবারও তৈরি করতেন তিনি। সেসময় ঘরে ঘরে জিলাপি, মিষ্টি, কফির মতো অনেককিছুই ঘরে বানানোর একটা ট্রেন্ড চলছিল। এমনই একদিন বাচ্চাদের জন্য কেক তৈরি করেন ইমরান। মেয়েদের তো পছন্দ হয়েছিলই, অন্য যারা খাচ্ছিল তারাও প্রশংসা করছিল। 

ওয়াসেকা বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্যই ওদের বাবা কেক বানান। পরবর্তীতে সবাই খেয়ে উৎসাহ দিতে থাকে। একদিন হুট করেই ফেসবুকে পেজ খুলে ফেলেন তিনি। বললাম, ভালোই করেছো। অফিসের কাজ শেষে কেক বানাতে পারবে। ২/১টা অর্ডার পেলেও ভালো, এক্সট্রা ইনকাম হবে কিছু।’

cake

‘সে তো পেজ খুলেই চুপ। কিন্তু শুধু ফেসবুকে একটা পেজ খুললেই তো ব্যবসা করা যায় না। তার জন্য মার্কেটিং লাগে, সবাইকে জানাতে হয়। এই দায়িত্বটি আমিই নিই। সবাইকে জানাতে চেষ্টা করি, মা-বোনের হাতের কেক তো সবাই খায় কিন্তু বাবার হাতের যত্নে বানানো কেক হয়তো খাওয়া হয়নি। এভাবেই ধীরে ধীরে বিভিন্ন ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে পরিচিত হই, অর্ডার পেতে শুরু করি আর শুরু হয় আমাদের উদ্যোক্তা জীবনের’— যোগ করেন তিনি। 

বাবা’স বেকিং জোনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘রেড ভেলভেট কেক উইথ হোমমেড ক্রিম চিজ ফ্রস্টিং’। হোমমেড কেক অনেকে তৈরি করলেও চিজ, ক্রিম এসব উপাদান বাজারেরটাই ব্যবহার করেন। কিন্তু বাবা’স বেকিং জোনের কেকে ঘরের তৈরি চিজ দিয়েই ফ্রস্টিং করা হয়। এর চাহিদা এত বেশি যে সম্প্রতি তারা কেক পাশাপাশি শুধু চিজ ক্রিমও বিক্রি করছেন। 

509360521_1104546145063356_8546252083485361514_n

২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ‘বাবা’স বেকিং জোনের’ পথচলা শুরু। বর্তমানে অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের কেক নিয়ে কাজ করছেন। রেড ভেলভেট কেকের পাশাপাশি তাদের কাছে পাওয়া যায় চকলেট কেক, ব্লুবেরি চিজ কেক, ভ্যানিলা কেক, আচার, গুড় ইত্যাদি। 

ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্রেতার সঙ্গে সমন্বয়কে কেমন চোখে দেখেন? জানতে চাইলে ওয়াসেকা বলেন, ‘দিনে দিনে পেইজ বড় হলেও আমরা কখনোই মডারেটর রাখিনি। মেয়েদের বাবা আর আমি মিলে কাজ করি। আমরা যেমন সেভাবেই নিজেদের প্রেজেন্ট করি। প্রতিদিন নতুন ক্লায়েন্ট ডিলিং করতে হয়। খারাপ অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। কিছু আপু আমাদের কেক ডিপ ফ্রিজিং করে দেশের বাইরেও নিয়ে গেছেন। এমন স্মৃতিগুলোই বেশি মনে ধরে রাখি।’

cake3

মেয়েদের বাবা-মায়ের বেকারি আইটেম একদিন ছড়িয়ে যাবে পুরো দেশে, ব্যবসার গ্রোথ অনেক বাড়বে—এমনটাই আশা ওয়াসেকার। সেই স্বপ্ন বুকে নিয়েই কাজ করে চলছেন এই উদ্যোক্তা। 

এনএম 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর