শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

দায়িত্বের ভার থেকে মায়ায় জড়িয়ে যাওয়াই বাবা হয়ে ওঠা

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২২, ০৫:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

দায়িত্বের ভার থেকে মায়ায় জড়িয়ে যাওয়াই বাবা হয়ে ওঠা

সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট প্লাটফর্ম ‘পাঁচফোড়ন’ এর কো ফাউন্ডার আশিক উর রহমান। সমাজের নানা অসঙ্গতিতে তুলে ধরে মানুষের বিবেকে খোঁচা দেওয়ার কাজ করেন তিনি। তবে এই পরিচয়ের বাইরে আশিকের আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি একজন বাবা। আট মাস বয়সী কন্যা সন্তান রয়েছে তার। মেয়ে রূপকথাকে ঘিরে নিজের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন আশিক। 

সদ্য বাবার খাতায় নাম লেখানো এই তরুণ মনে করেন, নারীদের মা হওয়ার প্রক্রিয়া যেমন অনেক আগে থেকে শুরু হয়, পুরুষদের ক্ষেত্রে বাবা হওয়ার প্রক্রিয়া তেমন না। সন্তান জন্মের পরে ধীরে ধীরে একজন পুরুষ বাবা হওয়া শুরু করে। এই অনুভূতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিণত হতে থাকে। 


বিজ্ঞাপন


নিজের বাবা হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘রূপকথা জন্মের পর তো আমি ওকে কোলে নিতেও ভয় পেতাম। কারণ বাচ্চা কীভাবে কোলে নিতে হয় তা জানতাম না। সেখান থেকে এই আটমাসে ওর প্রতিটা ছোট-বড় সবকিছুর সঙ্গেই নিজেকে জড়িয়ে নেওয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। একই সঙ্গে বাবা হিসেবে এই যাত্রা বেশ আনন্দেরও।’

ashiq‘আমাদের মতো মধ্যবিত্ত নিউক্লিয়ার পরিবারগুলোতে যেখানে স্বামী স্ত্রী দুজনেই চাকরি করে- সেখানে কিন্তু বাচ্চাকে দেখভাল করার মতো তেমন কেউ থাকে না। ফলে নিজেদেরকেই সময় বের করে নিতে হয়। প্রয়োজনে অন্য অনেক প্রয়োজন সরিয়ে রেখেও বাচ্চাকে সময় দিতে হয়। এই যে অন্য অনেক কিছুর পরিবর্তে বাচ্চাকে সময় দেওয়া- এটা কিন্তু আসলে ত্যাগের জন্য দেয়া না। বরং ভালোলাগা থেকেই এই কাজ করা’- যোগ করেন আশিক। 

এই বাবা মনে করেন, বাবা হওয়ার পর জীবনযাত্রার যে পরিবর্তন তা হয় খুব অলক্ষ্যে কিন্তু কার্যকরভাবে। সন্তানের পিতা হওয়ার পর মনে হয় বিশাল এক দায়িত্ব মাথায় ওপর চেপে বসেছে। এই ধারণা ধীরে ধীরে কেটে যায়। জন্ম নেয় এক ধরনের মায়ার। যেই মায়ার টানে ইচ্ছাকৃতভাবেই অন্য অনেক কিছু ফেলে বাচ্চার সঙ্গে সময় দেয়া যায়। 

ashiqআশিক বলেন, একটা বাচ্চা হবার পর ধীরে ধীরে তার বাবার জন্ম হয়। বাবার যে সত্ত্বা- কখনো সুপারহিরো, কখনো রক্ষক, কখনোবা বন্ধুর। এই জন্ম প্রক্রিয়া সময় নিয়ে ধীরে ধীরে হয়। এটি অন্যরকম এক যাত্রা। এই যাত্রাপথ যে খুব সহজ তা কিন্তু নয়। একটি শিশুর বেড়ে ওঠার পেছনে তার মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বড়। কিন্তু পাশাপাশি লিড সাপোর্টিং রোলে বাবাকে থাকতে হয়।’


বিজ্ঞাপন


বাবা হওয়ার পর কী নিজের বাবাকে মনে পড়ে? জানতে চাইলে আশিক বলেন, ‘অবশ্যই মনে পড়ে। আমার নিতান্ত মধ্যবিত্ত বাবার অনেক কিছুই আমি গ্রহণ না করলেও কিছু ব্যাপার আঁকড়ে ধরে রেখেছি ঠিকঠাক। তার একটি হলো সততা। নিজের প্রতি, দেশের প্রতি, নিজের কাজের প্রতি সৎ থাকার যে শিক্ষাটা আমি আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছি তা আমার সন্তানকেও শেখাতে চাই। আমার বাবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। দেশপ্রেম, সততা, কর্মনিষ্ঠা- সবকিছুর প্রথম পাঠ তার থেকেই পাওয়া।’

ashiqকন্যার প্রতি তেমন কোনো প্রত্যাশা নেই আশিকের। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রজন্মের বাবা-মায়েদের একটি প্রচলিত প্রবণতা ছিল। তারা তাদের জীবনের অপূর্ণ ইচ্ছা সন্তানকে দিয়ে পূরণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যেতেন। ফলে ইচ্ছা না থাকলেও আমাদেরকে পড়াশুনা বলেন বা যাই বলেন না কেন- তাদের প্রত্যাশা পূরণ করার একটা দায় নিয়ে বড় হতে হতো।’

‘আমার কন্যার প্রতি এই জাতীয় কোনো প্রত্যাশা নেই। ও যা ভাল মনে করে সেটাই করুক। যেটা করতে ভাল লাগে সেটাই করুক। শুধু মানুষ হিসেবে সৎ হোক। পৃথিবীর সকল মানুষ এবং প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল হোক, ভালবাসুক। কোনো ধরণের ঘৃণা নিয়ে বড় না হোক। পিতামাতার আর সমাজের প্রত্যাশার চাপে সে যেন তার স্বাভাবিক জীবনে অসুখী না হয়- এটাই থাকবে সন্তানের প্রতি আমার প্রত্যাশা।’

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর