সামরিক হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিনটি তখন অস্থায়ীভাবে বসানো ছিল একটি অর্ধসমাপ্ত ভবনের ভেতরে। বাবা তখন অর্ধচেতন। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে শরীরের প্রতিটি কোণে। আইসিইউ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লিখে দিয়েছেন সিটি স্ক্যান— মস্তিষ্কের।
আমি নিজেই ওয়ার্ডবয়ের সঙ্গে ট্রলি ঠেলছিলাম। হঠাৎ বাবা কাঁপা হাতে ইশারা করলেন, আর অস্পষ্ট কণ্ঠে বললেন, ‘নিয়ে যাও!’
বিজ্ঞাপন
তখন ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি বাবা কি আইসিইউতে আর থাকতে চান না? নিজের রুমে ফিরে যেতে চান? নাকি হয়তো... বাড়িতে যেতে চান? কিন্তু আমি কি হাল ছেড়ে দেব? পরাজয় মেনে নেব এভাবে?
গত ক’দিন ধরেই তার চোখে একটা শূন্যতা, এক নিস্পৃহ দৃষ্টি দেখতে পাচ্ছিলাম। যেন চোখের দৃষ্টিটা আর এই পৃথিবীতে নেই— অসীমের সঙ্গে কোথাও এক আত্মিক যোগসূত্র তৈরি হয়ে গেছে।
(এই একই দৃষ্টি আমি পরেও দেখেছি কোভিড আইসিইউতে অনেকের চোখে— আর তখন নিশ্চিতভাবে বুঝতে শিখেছি, এই দৃষ্টির মানে কী...)
সেদিন বাবার সেই ইশারা মানে ছিল, ‘নিয়ে যাও, বাড়ি নিয়ে যাও!’। আমি তাকে নিয়েছিলাম ক’দিন পরে, এক শুক্রবার দুপুরে। কফিনে মুড়ে। শেষ ইচ্ছেটা রাখতে পারিনি। আমি হাল ছাড়তে চাইনি। মনে হয়েছিল— কোনো অলৌকিক কিছু ঘটবে!
বিজ্ঞাপন
বাবা হঠাৎ উঠে দাঁড়াবেন, আমার ডাকনাম ধরে বলবেন, ‘কাছে আসো’। এখনও আমি সেই ডাকের প্রতীক্ষায় থাকি।
‘হে আমার পালনকর্তা, তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন করে তারা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।’
যাদের পিতা/ মাতা এখনো বর্তমান আছেন তারা যেন প্রতিদিনই পিতামাতা দিবস পালন করুন। বিশ্বাস করুন পরে আফসোস করবেন।
লেখক: প্রধান, হেলথ এন্টারপ্রাইজ, ব্র্যাক

